‘সাদা সোনা’ খ্যাত গলদা চিংড়ি উৎপাদনে সাফল্যের মুখ!
দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২০, ২৩:০৪
করোনাভাইরাসে সারাদেশ অঘোষিত লকডাউন চলছে। ঠিক এই মুহুর্তে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন দিনাজপুরের পার্বতীপুর মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের খামার ব্যবস্থাপক মুসা কালিমুল্লাহ। বিশ্ব হ্যাচারী নামে পরিচিত পার্বতীপুরের এ প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ দিন যাবত নানা কারণে অবহেলিত থাকলেও দায়িত্ব নেয়ার পর তার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলস্বরূপ প্রতিষ্ঠানের রূপ পরিবর্তন হওয়ার পথে।
মুক্তিযুদ্ধের পর করোনায় লকডাউনকে অর্থনীতিতে সবচেয় বড় আঘাত মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। দেশের এই সংকটময় সময়ে মানুষদের জন্য একটি সু-সংবাদ বয়ে এনেছেন দিনাজপুর পার্বতীপুর মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার। দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম জনপদের দুই বিভাগ রংপুর এবং রাজশাহী’র ১৬ জেলার ১২৫ উপজেলার মাছ চাষীদের জন্য সুখবর চলতি ২০২০ উৎপাদন বছরে লোনা পানির মাছ গলদা চিংড়ি এবার থেকে স্বাদু পানি তথা এ অঞ্চলের পুকুরে চাষ করা যাবে, এমন দাবি করেন এই মৎস্য কর্মকর্তা।
মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার, পার্বতীপুর দিনাজপুর এর খামার ব্যবস্থাপক মোঃ মুসা কালিমুল্লাহ এমন তথ্য জানিয়ে বলেন, দেশের দক্ষিন ও দক্ষিন পশ্চিমের মাছ চাষীরা দীর্ঘদিন ধরে গলদা চিংড়ি চাষ করে আসছেন। তারা প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার উৎপাদিত চিংড়ি মাছ বিদেশে রপ্তানী করে থাকেন।, উত্তরাঞ্চলের মাছ চাষীদের স্বপ্ন ছিলো তারাও তাদের পুকুর বা জলাশয়ে চিংড়ি চাষ করবেন। তাদের সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে ২০২০ উৎপাদন বছরে খামারে গলদা চিংড়ির পোস্ট লার্ভা (পিএল) এবং জুভেনাইল উৎপাদনে কাজ শুরু করেছি।
তিনি জানান, চলতি মাসের ৭ তারিখে পায়রা নদী, আমতলী, বরগুনা থেকে চিংড়ির মা মাছ সংগ্রহ করা হয়েছে। এর আগে পেকুয়া, কক্সবাজার থেকে লোনাপানি সংগ্রহ করা হয়। গলদা চিংড়ির পোস্ট লার্ভা উৎপাদনের জীবন চক্রের শুরুতে লবন পানির প্রয়োজন (ব্রাইন ওয়াটার) হয়।
খামারে পিএল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ও জুভেনাইল ৫০হাজার নির্ধারণ করা হয়েছে। নিবিড় পরিচর্যা ও গবেষণা করে ইতিমধ্যে প্রায় ২০ লক্ষ লার্ভা ৬টি এল.আর.টিতে (লার্ভি রিয়ারিং ট্যাংক) লালন পালন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে লার্ভির বয়স ১৯দিন অতিক্রম করেছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, লার্ভার সার্বিক অবস্থা ভালো রয়েছে। সবকিছুর অনুকুল পরিবেশ থাকলে গলদা চিংড়ির পোস্ট লার্ভা ২৮ হতে ৩৫ দিনের মধ্যে শুধুমাত্র রংপুর রাজশাহী বিভাগে নয় সারাদেশের মাছ চাষীরা এখান থেকে সংগ্রহ ও চাষ করে ব্যাপক মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হবেন।
তিনি বলেন, মাছ চাষীরা পুকুরে রুই জাতীয় মাছের সাথে অথবা একক ভাবেও স্বাদু পানিতে গলদা চিংড়ির চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হতে পারবেন।
মুসা কালিমুল্লাহ গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর খামার ব্যবস্থাপক হিসেবে পার্বতীপুরে যোগদান করেন। এর আগে তিনি ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ উৎপাদন বছরে কুড়িগ্রাম মৎস্য বীজ উৎপদন খামারে গলদা চিংড়ি চাষসহ বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছের উৎপাদনে সরকারের দেয়া লক্ষ্যমাত্রার অধিক অর্জনে সক্ষম হয়েছেন।
উল্লেখ্য, পার্বতীপুর মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারে শুধুমাত্র গলদা চিংড়িই নয় দেশীয় জাতের মাছ শিং, মাগুর, গোলশা ট্যাংরা, পাবদা এবং কুচিয়াসহ অন্যান্য মাছ চাষের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
দিনাজপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম রেজাউল করিম এবং মৎস্য অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মোহাঃ সায়নার আলম খামার ব্যবস্থাপককে সার্বিক সহযোগীতা ও দেখভাল করে আসছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।
দিনাজপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম রেজাউল করিম এ বিষয়ে বলেন, মুসা কালিমুল্লাহ এর আগে কুড়িগ্রাম জেলায় তিন উৎপাদন বছরে চিংড়ির পিএল উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছেন। ফিল্ড কর্মকর্তা হিসেবে পার্বতীপুরেও তিনি সফল হবেন বলে তিনি আশাবাদী।
মৎস্য অধিদপ্তর রংপুর বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মোহাঃ সায়নার আলম জানান, এই মুহুর্তে তার সফলতার সম্পর্কে কিছুই বলা যাবে না। কেননা নির্দিষ্ট সময় এখন পার হয়নি। তবে চিংড়ি চাষে মুসা কালিমুল্লার সফলতার ব্যাপাওে আশাবাদ ব্যক্ত করেন রংপুর বিভাগের এ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ জার্নাল/আর