শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বাড়াতে চায় সরকার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:১২ আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:২৮
শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে নতুন দরের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। প্রস্তাব অনুসারে নতুন কারখানার জন্য গ্যাসের দাম হবে এলএনজির আমদানি ব্যয়ের সমান। ফলে নতুন কারখানাগুলোকে দ্বিগুণ দামে গ্যাস কিনতে হবে।
জ্বালানি বিভাগের অনুমোদন নিয়ে দাম বাড়াতে সোমবার (৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে পুরো গ্যাস বিল হবে নতুন দামে। পুরোনোদের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় থাকছে প্রস্তাবে।
পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এলএনজির আমদানিমূল্য বলতে দাখিলকৃত বিলের পূর্ববর্তী তিন মাসের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ও স্পট এলএনজি ক্রয় বাবদ মোট ব্যয়ের (এলএনজি ক্রয়মূল্য, রিগ্যাসিফিকেশন চার্জ, ভ্যাট, ট্যাক্স বিভিন্ন মার্জিনসহ সার্বিক মূল্য) গড় মূল্য বোঝানো হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এখন প্রস্তাবটি বিইআরসিতে প্রস্তাব পাঠাবে পেট্রোবাংলা। এ জন্য বিতরণ কোম্পানিগুলো থেকে তথ্য চাওয়া হয়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর ছয় বিতরণ কোম্পানিকে লেখা চিঠিতে শিল্প ও ক্যাপটিভ শ্রেণির যেসব গ্রাহক অনুমোদিত লোড অপেক্ষা অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহার করছে, তাদের বিষয়ে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মাসভিত্তিক তথ্য পাঠাতে বলা হয়।
এর আগে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাহী আদেশে গ্যাসের দাম গড়ে ৮২ শতাংশ বাড়ানো হয়। তখন শিল্পে গ্যাসের মূল্য ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৩০ টাকা। ক্যাপটিভে ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছিল। পরে ক্যাপটিভে আরেক দফা গ্যাসের দাম বাড়িয়ে করা হয়েছিল ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা।
এদিকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির এ উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কথা বলে গ্যাসের দাম প্রায় দ্বিগুণ করা হয়। কিন্তু প্রতিশ্রুত গ্যাস মিলছে না। বরং গ্যাস সংকটে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এই সংকটের মধ্যে গ্যাসের দাম দ্বিগুণের বেশি বাড়ানো হলে শিল্পে বিনিয়োগ পুরো বন্ধ হয়ে যাবে।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘দাম বাড়ার কারণ কি? আমরা তো কোনো কারণ দেখছি না। কারণ এখন তো হঠাৎ করে এমন হয়নি যে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম ডাবল হয়ে গেছে। এমন তো হয়নি। আগের সরকার দেশীয় গ্যাস উৎপাদনের চেয়ে এলএনজি কিনে সরবরাহে বেশি উৎসাহিত ছিল, কারণ সেখানে একটা বড় ধরনের কমিশন বাণিজ্য ছিল। এই সরকারের তো সেই কমিশন বাণিজ্য নেই। তাহলে সেখানে তো দাম আরও কমার কথা।’
নীতি নির্ধারকরা বলছেন, সরকারকে এলএনজি আমদানিতে বড় অংকের ভর্তুকি গুণতে হয়। কিন্তু ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তা নিরুৎসাহিত করছে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘আমাদের যে কার্গোগুলো আসে, আমরা তো গ্যাস অনেকখানি ইমপোর্ট করি। এটা যে দামে আসে তার চেয়ে অনেক কম দামে আমরা ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে গ্যাস দিচ্ছি। এটার বিষয়ে দাতা সংস্থাগুলোর খুব সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে যে আমরা যেন আর ভর্তুকি না দেই। কারণ সরকার ক্রমাগতভাবে ভর্তুকি দিতে থাকলে এটা তার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে প্রভাব ফেলে।’
বর্তমানে পেট্রোবাংলা দিনে গড়ে ২৮৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে। এর মধ্যে এলএনজি আমদানি থেকে পাওয়া যায় গড়ে ৮৫ কোটি ঘনফুট। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের গড় মূল্য ছিল ২৪ টাকা ৩৮ পয়সা। পেট্রোবাংলা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৮৭ পয়সা দরে।
সিলেট গ্যাস ফিল্ড থেকে প্রতি ঘনমিটার ১ টাকা, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড থেকে ১ টাকা ২৫ পয়সা, বাপেক্স থেকে ৪ টাকা, শেভরন ও তাল্লো থেকে ৬ টাকা দরে গ্যাস কেনে পেট্রোবাংলা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্পট মার্কেট থেকে আনা এলএনজির দাম পড়েছিল ৬৫ টাকা। গত আগস্টে আমদানি করা স্পট এলএনজির গড় দর ছিল ৭১ টাকা।
বাংলাদেশ জার্নাল/এনবি