ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪, ১৩ আষাঢ় ১৪৩১ আপডেট : ৪ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

আরও কমে গেছে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৪, ১৯:৫৬

আরও কমে গেছে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম
চামড়া প্রক্রিয়াজাত কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। ছবি: সংগৃহীত

ঈদের একদিন পরে আরও কমে গেছে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম। সরকারের বেঁধে দেয়া দামে তো নয় বরং তার চেয়ে কমে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশুর চামড়া। ঈদের দিন যে দামে চামড়া বিক্রি হয়েছে, আজ (মঙ্গলবার) সেই দামও পাচ্ছেন না মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এছাড়া চাহিদা না থাকায় ছাগলের চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।‌

মঙ্গলবার (১৮ জুন) রাজধানীর পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। প্রায় একই দৃশ্য দেখা গেছে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে। ঈদের দিন রাজধানীর মধ্যে দেয়া কোরবানির পশুর চামড়া বেশি বেচাকেনা হয়েছে।

তবে, আজ মূলত সাভার ও লালবাগের পোস্তার আড়তগুলোতে রাজধানী ঢাকার বাইরে থেকেই বেশি চামড়া এসেছে। সাভার ও পোস্তা ছাড়াও ঈদের দ্বিতীয় দিন রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ীভাবে চামড়া বেচাবিক্রি হচ্ছে। সায়েন্সল্যাব মোড়ে চামড়া বাজারে আকারভেদে ঈদের দিন‌ যে চামড়া ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, আজ সেই চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৬৫০ টাকায়।

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের দিন গরুর যে চামড়া সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেটি আজ ৫০ টাকা কমে বিক্রি করতে হচ্ছে। যারা গতকাল (সোমবার) চামড়া বিক্রি করতে পারেননি, সেগুলো আজ লবণ দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকারের বেঁধে দেয়া লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ছিল ৫৫-৬০ টাকা। যারা লবণ দিয়ে আজ চামড়া নিয়ে এসেছেন, তাদের চামড়াও প্রায় অর্ধেকের একটু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। লবণযুক্ত এক লাখ টাকা মূল্যের একটি গরুর চামড়ার দাম কমপক্ষে ১১০০-১২০০ টাকা হওয়ার কথা থাকলেও সেটি সর্বোচ্চ ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি করা যাচ্ছে।

তবে ছাগল ও ভেড়ার চামড়া বেশিরভাগ ক্রেতাই কিনতে চাইছেন না। কিনলেও‌ ১০ বা ২০ টাকায় কিনছেন‌ এসব চামড়া। একাধিক ছাগল ও ভেড়ার চামড়া রাস্তা, ফুটপাতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। গত বছরের চেয়ে লবণযুক্ত ছাগলের চামড়ার দাম সরকার এবার দুই টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করে ২০ থেকে ২৫ টাকা। কয়েক বছর আগেও ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। একটি ছাগলের যদি ৫ থেকে ৬ বর্গফুট চামড়া হয়, লবণ দেয়ার পর দাম পাওয়ার কথা ১০০ থেকে দেড়শ টাকা। অথচ এবার ছাগলের চামড়া বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০ টাকায়।

ট্যানারিগুলোতে সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈদের দ্বিতীয় দিনেও পশুর চামড়াবোঝাই ট্রাক প্রবেশ বেড়েছে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে। তবে দ্বিতীয় দিনেও সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করতে দেখা যায়নি কোথাও। তবে চামড়া প্রক্রিয়াজাত কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা।

দাম কমে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে পোস্তার আড়তদার মোখলেছুর রহমান রহমান বাদল বলেন, আজকে তুলনামূলকভাবে পশুর চামড়া কম এসেছে। ঢাকার বাইরের চামড়াগুলো আজকে লবণ ও লবণ ছাড়া দুইভাবে এসেছে। ‌আজকের দাম গতকালের চেয়ে একটু কম।

পোস্তায় গরুর চামড়ার সঙ্গে ৩০টি‌ ছাগলের চামড়া নিয়ে এসেছেন হামিদুল আলম। তিনি জানান, গরুর চামড়া আসল দামে বিক্রি করতে পারলেও ছাগলের চামড়ার কোনো দাম বলে না।‌ এগুলো ফ্রি দিয়ে দিতে হবে, না হয় ফেলে দিতে হবে।‌

ছাগলের চামড়ার না‌ কেনা প্রসঙ্গে আড়তদার মোখলেসুর রহমান বাদল বলেন, ঈদের সময় ছাগলের চামড়া কিনে তা প্রক্রিয়া করার মতো ট্যানারিতে জায়গা নেই। এজন্য ট্যানারিতে ছাগল-ভেড়ার চামড়া নিতে চায় না। আমরা কয়েকজন ২০০ পিস চামড়া কিনেছি। এগুলো এখন গলার কাটা হয়েছে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক ও সালমা ট্যানারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাখাওয়াত জানান, চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে যে খরচ হয় সেটা বাদ দিয়েই মূল্য ধার্য করে তারা চামড়া সংগ্রহ করছেন।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, ২৫ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ ছিল। কিন্তু এই বাজারটা চলে গেছে। চামড়ার বিকল্প বেড় করে ফেলেছে চাইনিজ অনেক কোম্পানি। ফলে ছাগলের চামড়ার যে চাহিদা ছিল তা আর নেই।

লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, খাসির চামড়া থেকে দামি পণ্য আসলে সেভাবে উৎপাদন করা যায় না। হয়তো ওয়ালেট বা মোবাইল রাখার ব্যাগ উৎপাদন ছাড়া তেমন কিছু উৎপাদন করা যায় না। এছাড়াও খাসির চামড়ার প্রসেসিং খরচটা একটু বেশি।

বাংলাদেশ জার্নাল/কেএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত