‘আটলান্টিকের ওপার থেকে সব ঠিক করে দেবে এমন ভাবার সময় নয়’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:২৪
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, অর্থনীতির জটিল সময়ে আটলান্টিকের ওপার থেকে কেউ এসে দেশের সব কিছু ঠিক করে দিয়ে যাবে; এমনটা ভেবে নিশ্চুপ থাকার সময় এটা নয়। আমাদের এক তৃতীয়াংশই তরুণ, তারা যদি ভূমিকা না রাখে, তাহলে কেউ এসে পরিবর্তন করে দিয়ে যাবে না।
তিনি বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে আগামী দিনে যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তার কোন পর্যালোচনাই এবার হলো না। যে কারণে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছেই পৌঁছালো না। এটা গণতন্ত্রের বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হলো। নির্বাচনকে ঘিরে এই ইশতেহারটা একটা রাজনৈতিক শূন্যতার মধ্যে দিয়ে এসেছে। ফলে সরকার, রাজনীতি ও দেশের মানুষ বঞ্চিত হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, জবাবদিহি না থাকলে বৈষম্য বাড়ে।
শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজি বাংলাদেশ আয়োজিত অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও ন্যায্যতার লক্ষ্যে নাগরিক এজেন্ডা শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এ ধরনের নির্বাচন এর আগে দেখেছি। ১৯৮৮, ১৯৯৬ সালে দেখেছি। নির্বাচন যদি বহু মানুষের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে এর ফলাফলও টিকিয়ে রাখা কঠিন। আগামী দিনে অর্থনীতি যেভাবে জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি আগামী দিনে কই গিয়ে দাঁড়াবে এই উৎকণ্ঠা সবার মাঝে।
এই নির্বাচনকে 'বিশেষ নির্বাচনী তৎপরতা' উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটাকে সাধারণভাবে আমরা নির্বাচন বলছি। কিন্তু আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, আমি বলি এটি একটি বিশেষ নির্বাচনী তৎপরতা। এর ফলে ইতিহাসের কাছে নাগরিকদের দায় বেড়ে গেল। আগামী দিনে আমাদের ভূমিকা আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, আমরা দেখছি যে যতবার নির্বাচন করেছে, তার আয় গাণিতিকভাবে সে পরিমাণ বেড়ে গেছে। যে যতবার নির্বাচন করেছে, তার আয় ততবার বেড়েছে। তার মানে হল নির্বাচনে আসাই হলো আয় বাড়ানোর ভালো একটা রাস্তা। কিন্তু এভাবে তো আপনি পুরো রাষ্ট্রকে অধিকারহীন করে দিয়ে সংকীর্ণ একটি গোষ্ঠীকে রাষ্ট্রীয় সম্পদের মালিকানা করে দিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, যে যতবার নির্বাচিত হয়েছে, গাণিতিক হারে তার সম্পদ তত বেড়েছে। অনেকেরই দেখা গেছে- সম্পদের পরিমাণ ৫০০ গুণ বেড়ে গিয়েছে, কিন্তু তারা কি সেই সম্পদ অনুপাতে পূর্বের তুলনায় ৫০০ গুণ বেশি কর দিয়েছে? এনবিআর কি কখনো সেই খোঁজ নিয়েছে?
সিপিডির বিশেষ ফেলো বলেন, প্রার্থীদের সম্পর্কে আমরা জানতে পারি হলফনামার মাধ্যমে। সেখানে যে সম্পদের বিবরণ দেয়া হয়েছে এবং যে ট্যাক্সের বিবরণ দেয়া হয়েছে, সেগুলোর কখনও তুলনামূলক বিশ্লেষণ হয়? যদি তাই হয়, তাহলে অনেকেরই দেখেছি আয় ৫০০ গুণ পর্যন্ত বাড়ল, তাহলে তিনি কি সে হারে কর দিয়েছেন? আমি মনে করি আগামী দিনে এটা খুঁজে বের করা এনবিআরের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আইএমএফ বলছে আমাদের কর জিডিপি বাড়াতে হবে, আমি মনে করি এই হলফনামা আমাদের জন্য বড় একটি সুযোগ। এখন এনবিআর কি করে সেটাই দেখার বিষয়। তারা কি আগামী দিনে এ বিষয়গুলো নিয়ে বলবেন?
এসময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পাতানো এবং আত্মঘাতিমূলক প্রতিযোগিতার নির্বাচনের মাধ্যমে একচ্ছত্রবাদ পাকাপোক্ত করতে গিয়ে অগণতান্ত্রিক শক্তির বিকাশের ঝুঁকি রয়েছে।
তিনি বলেন, সে অংশগ্রহণ বলপূর্বক হোক, স্বেচ্ছায় হোক, সামাজিক নিরাপত্তার বলয় থেকে বের করে দেওয়া হবে সে হুমকির মাধ্যমে হোক, মানুষ ভোট দিতে না গেলে নজরদারির আওতায় পড়বো, সেই ভয়েই হোক। ভোটারের অংশগ্রহণ হবে কিছুটা।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্মের এই সংবাদ সম্মেলনে, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় আনতে সমান সুযোগ নিশ্চিত করার পথে বাধা গুলো তুলে ধরেন আলোচকরা।
বাংলাদেশ জার্নাল/এসএপি
