ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

কাস্টমসের সোনা চুরি: কেউ গ্রেপ্তার না হলেও পুলিশের সন্দেহে ৩ জন

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৮:৫৪  
আপডেট :
 ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৮:৫৯

কাস্টমসের সোনা চুরি: কেউ গ্রেপ্তার না হলেও পুলিশের সন্দেহে ৩ জন
ফাইল ছবি

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টমস হাউজের গুদামে থাকা লকার থেকে ৫৫ কেজির বেশি সোনা চুরির ঘটনায় কাস্টমসের দুই রাজস্ব কর্মকর্তাসহ তিনজন জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করছে পুলিশ। এই তিনজনকে ডিউটির সময় ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিমানবন্দর চত্বরে অবস্থান করার বিষয়টি প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

পুলিশসহ তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সোনা চুরির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মিথ্যা তথ্য দেয়া হয়েছে। মামলায় এক রাতে চুরি হওয়ার কথা উল্লেখ করা হলেও আসলে পর্যায়ক্রমে কয়েক মাস ধরে এসব সোনা সরানো হয়েছে। পরিকল্পিতভাবেই সোনা রাখার গুদামে বসানো হয়নি সিসিটিভি। গুদামের গেটে সিসি ক্যামেরা ৪ মাস আগে নষ্ট হলেও নতুন লাগানো বা মেরামত করা হয়নি।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গোডাউনের নিরাপত্তার দায়িত্বে কর্মরত ছিলেন এ, বি, সি ও ডি শিফটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাসুম রানা, সাইদুল ইসলাম শাহেদ, শহিদুল ইসলাম ও আকরাম শেখ। তাদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে ইতোমধ্যে রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন ও নিয়ামত হাওলাদার নামে চার সিপাহীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য মিলেছে। তার বক্তব্যে উঠে এসেছে জড়িত দুই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার নামও।

মামলায় উল্লেখ করা তথ্যের বরাত দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, গায়েব হওয়া সোনা ২০২০ থেকে ২০২৩ সালে আসা। অথচ মামলার এজাহার এবং ডিএম অনুযায়ী গায়েব হওয়া সোনাগুলো গুদামে এসেছিল চলতি ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে। হেফাজতে থাকা সিপাহীসহ ৮ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যে এটা স্পষ্ট যে, বিমানবন্দরে কাস্টমসের গুদামে সুরক্ষিত লকার থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণ লুটে জড়িত কাস্টমসেরই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি চক্র।

ডিএমপি’র উত্তরা বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলাম শাহেদ এবং সহযোগী হিসেবে সিপাই নিয়ামত হাওলাদারকেই এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে। যদিও কেউই এ ঘটনায় স্বীকারোক্তি দেননি। এই তিনজনকে ডিউটির সময় ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিমানবন্দর চত্বরে অবস্থান করার বিষয়টি প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

মামলার নথি ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের বক্তব্যে উঠে আসে, সোনা চুরির এই ঘটনা ঢাকা শুল্ক বিভাগের নজরে আসে গত শনিবার। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় ৩ সেপ্টেম্বর। বিমানবন্দরের কাস্টমস হাউসের নিজস্ব গুদামে দিনভর ইনভেন্টরি শেষে ৫৫ কেজি সোনা চুরি বা বেহাত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পুরো ঘটনা তদন্তের জন্য কাস্টমসের যুগ্ম-কমিশনার মিনহাজ উদ্দীনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম গঠন করে কাস্টমস হাউজ।

৩ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা শুল্ক বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের। শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টা থেকে পরদিন রোববার সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে কে বা কারা গুদামের আলমারির লকার ভেঙে সোনাগুলো নিয়ে যান বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।

থানা পুলিশের পাশাপাশি মামলার ছায়া তদন্ত করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগও। সোনা উধাওয়ের ঘটনায় প্রশ্নে উঠেছে কাস্টমস গুদামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং আটকের রসিদ (ডিএম) মোতাবেক ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে জব্দ করা ৫৫ কেজি ৫১ গ্রাম সোনা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা না দেয়া নিয়েও।

ডিএমপি বিমানবন্দর জোনের এডিসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা আটজনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। ইতোমধ্যে চার সিপাহিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। বাকি চার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার মধ্যে দুজনের কাছ থেকে চুরি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। সম্ভাব্য সন্দেহভাজনদের তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় যোগাযোগ ও পরিকল্পনা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, চুরি নয়, পরিকল্পিতভাবে সরানো হয়েছে সোনা। সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ কাস্টমস কর্মকর্তাদেরই সম্পৃক্ত থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি। সোনা একদিনে সরানো হয়নি। যেসব সোনা সরানো হয়েছে তা কিন্তু এ বছরেরই জব্দ করা।

ডিএমপির উত্তরা বিভাগের ডিসি মোর্শেদ আলম বলেন, বিমানবন্দর রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। সব জায়গা সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারিসহ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়। অথচ কাস্টমসের গুদামে সিসিটিভি না থাকাটা বড় প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। স্বর্ণ চুরির আলামত নেই বললেই চলে। একটি বিষয় পরিষ্কার, কাস্টম হাউসের নিজস্ব গুদামে যার-তার প্রবেশের সুযোগ নেই। সুতরাং বাইরের কেউ এসে গুদাম থেকে স্বর্ণ নিয়ে যেতে পারবে না। আর বাইরের কেউ চুরি করতে এলে তো সবই নিয়ে যাওয়ার কথা। একটি-দুটি করে তো নেয়ার কথা না।

আরও পড়ুন: কাস্টমসের গুদাম থেকে সোনা চুরির ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে দুদক

বাংলাদেশ জার্নাল/সুজন/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত