আমের নতুন রাজধানী নওগাঁ
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০১৯, ০৯:২০ আপডেট : ০৯ জুন ২০১৯, ০৯:৪৯
ফলের রাজা আম আর আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ-এক সময় এমনটাই বলা হতো। কারণ দেশের মোট উৎপাদিত আমের সিংহভাগই আসতো উত্তরের সীমান্ত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায় রাজশাহী বিভাগের আরেক জেলা নওগাঁ থেকে আমের যোগান আসে সবচেয়ে বেশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সারাদেশে মোট আমের উৎপাদন ছিলো প্রায় ২৩ লাখ ৭২ হাজার টনের কিছু বেশি। এর মধ্য নওগাঁ থেকে আসে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪৮৬ টন আম। যেখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এসেছে ২ লাখ ৭৫ হাজার টন এবং রাজশাহী থেকে এসেছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৪২৬ টন।
অথচ ২০১৬-১৭ অর্থবছরেও নওগাঁতে আমের মোট উৎপাদন ছিলো ১ লাখ ৬১ হাজার ৯১০ টন। সে বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে উৎপন্ন হয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার টন আর রাজশাহী থেকে এসেছে ২ লাখ ৮ হাজার ৬৬৪ টন আম।
হঠাৎ কেনো নওগাঁতে এতো আমের ফলন?- এই প্রশ্নের জবাবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের’ প্রকল্প প্রধান মেহেদী মাসুদ বলেন, নওগাঁতে প্রায় সবগুলোই নতুন বাগান এবং উন্নত জাতের চারা লাগানো হয়েছে।
অন্যদিকে, রাজশাহী বা চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাগানগুলো সবই পুরোনো এবং মূলত ফজলি, ল্যাংড়া আর গোপালভোগ জাতের আমের গাছ। এ ধরনের গাছের ফলন অনিয়মিত। আর অন্যদিকে নওগাঁর বাগানের প্রায় সবই আম্রপালি- যার উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি।
এর বাইরে নওগাঁ অঞ্চলে প্রতি পাঁচ হাত পর পর গাছ লাগানো হয়েছে যেখানে চাঁপাই বা রাজশাহীতে গাছ লাগানো হয়েছে ২০ হাত পর পর। যা ফলন বৃদ্ধির আর এক অন্যতম কারণ।
এছাড়া পাঁচ বছর আগে মাত্র ৬ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হলেও চলতি বছর সেখানে আম চাষ হচ্ছে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে।
আমের জন্য প্রসিদ্ধ চাঁপাই নবাবগঞ্জে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে এ ফলের চাষ হলেও এখানে হচ্ছে তার চেয়েও বেশি জমিতে। এ ছাড়াও প্রতিবছর এক হাজার হেক্টর জমিতে চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে পাইকারি বাজার গড়ে না ওঠায় নায্য মূল্য না পাওয়ার অভিযোগ এখানকার আম চাষীদের।
এ বছর নওগাঁর বরেন্দ্রভূমিতে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। আর প্রতি বছর এখানে অন্তত গড়ে ১ হাজার হেক্টর করে বৃদ্ধি পাচ্ছে আম চাষ। এখানে আবাদ করা হচ্ছে ল্যাংড়া, ফজলি, খিরসা জাতের আম। তবে দ্বিগুণ উৎপাদন ও লাভ হওয়ায় আম্রপালী ও বারি-৪ জাতের আমের আবাদের দিকে ঝুঁকছেন চাষীরা। সুস্বাদু হওয়ায় এখানকার আমের চাহিদাও বাড়ছে মানুষের মাঝে।
প্রতি বছরই এখান থেকেই পাওয়া যাচ্ছে শত শত টন আম । তবে চাষীদের অভিযোগ জেলায় পাইকারি বাজার ও সংরক্ষাণাগার না থাকায় ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। আর তাই অনেকটাই কম দামে বিক্রি করতে হয় তাদের আম। এমনকি জেলায় নেই কোন আম গবেষণাকেন্দ্র।
আম উৎপাদনেরে এই নতুন দিগন্তের দিকে নজর দেয়া হলে চাষীরা উপকৃত হবেন বলে মনে করেন এই এলাকার মানুষ।
বাংলাদেশ জার্নাল/টিপিবি