বগুড়ায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুল রিপোর্ট প্রদানের অভিযোগ
বগুড়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:৩৪
বগুড়ায় পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে রোগীদের মাঝে ভুল রিপোর্ট প্রদানের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, গত ২২ ডিসেম্বর একজন গাইনী রোগীর আলট্রাসনোর রিপোর্টে ভুল তথ্য প্রদান করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের কৃষক মোঃ গোলাম মোস্তফার মেয়ে মোছাঃ সুইটি বেগম (৩০), গর্ভবতী হওয়ায় শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র গাইনী কনসালটেন্ট ডাঃ রাবেয়া খাতুনের তত্বাবধানে চিকিৎসা চলে। তার মেডিকেল চেক-আপসহ চিকিৎসা চলাকালীন হঠাৎ রোগীর ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, শরীরে পানি জমে সাথে কাশি দেখা দিলে ডাঃ রাবেয়া খাতুন রোগীর অভিভাবকে বলেন, আপনারা তো জানেন যে রোগীর যমজ বাচ্চা রয়েছে এবং প্রেসার নিয়ন্ত্রণে আসতেছে না, তারপরও শরীরের পানিও কমতেছে না। আপনাদের রোগীকে আমি বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে দিলাম। আপনারা দ্রুত রোগীকে মেডিকেলে ভর্তি করান।
রোগীর অভিভাবকেরা গত ১৯ ডিসেম্বর রোগীটি বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গাইনী ওর্য়াডে ভর্তি করান। রোগী ভর্তির চিকিৎসা চলাকালীন কর্তব্যরত চিকিৎসক তার একটি আলট্রাসনো পরীক্ষা দেয়। রোগীর লোকজন রোগীকে নিয়ে পরীক্ষার জন্য উক্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান। পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী তার গর্ভে একটি বাচ্চা রয়েছে। কিন্তু এর পূর্বেও তিনটি আলট্রাসনো রিপোর্টে তার গর্ভে যমজ বাচ্চা রয়েছে বলে জানালে আলট্রাসনোলজিস্ট ‘আমার চেয়ে আপনি বেশি জানেন’ বলে ধমক দেন।
ভুক্তভোগী রোগীর স্বামী মোঃ সিবলু মিয়া বলেন, ভুল রিপোর্ট দেয়ার পর আমরা মানসিকভাবে অস্বস্তিতে ছিলাম। অপারেশনের পর যমজ বাচ্চা জন্ম নেওয়ায় আমাদের হতাশা কেটে যায়। হাসপাতাল থেকে রোগীকে রিলিজ নিয়ে বাড়ীতে নিয়ে এসেছি। ভুল রিপোর্ট দেওয়ার জন্য রিপোর্ট প্রদানকারী ডাক্তারের বিরুদ্ধে এখন আইনগত ব্যবস্থা নিব। ভুল রিপোর্টের কারণে রোগী ও তার পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। পরের দিন ২৩ ডিসেম্বর দুপুর ১২টায় ভর্তিকৃত হাসপাতালে সিজার করে ফুটফুটে দুটি যমজ বাচ্চা জন্ম নেয়। রোগীর পরিবারের দাবি, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট প্রক্রিয়া ও গুণগত মান যাচাই করার জন্য নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন, একটা স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে এরকম ভুল রিপোর্ট কেউ আশা করেননি। রোগ নির্ণয়ের নামে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে এমন অভিযোগ অনেকের। এতে একদিকে রোগীরা যেমন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন অন্যদিকে সঠিক চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়ছেন। তদন্ত কমিটি গঠন করা অত্যন্ত জরুরি।
আলট্রাসনোলজিস্ট ডাঃ মশিউর রহমান বলেন, ওটা পেশেন্টের সাথে কথা হইছে, এটা হওয়ার পরে, অপারেশনের সময় এটা বোঝা গেছে, তখন ডাক্তার বা অনেকে ফোন দিয়েছিল তখনি এটা শেষ হয়ে গেছে। আমি রিপোর্ট দিয়েছিলাম একটি বাচ্চা, আর অপারেশনের সময় দুটি বাচ্চা পাওয়া গিয়েছে।
আপনি একজন সনোলজিস্ট হয়ে এ রকম রিপোর্ট কিভাবে দিলেন। এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার বগুড়া শাখা ব্যবস্থাপক মোঃ রেজোয়ান আহমেদ বলেন, আমি দেশের বাইরে ছিলাম, বিষয়টি আমি ফেসবুকে দেখার পর, আমার কলিগের মাধ্যমে রিপোর্ট প্রদানকারী সনোলজিস্টের সাথে যোগাযোগ করে সতর্ক করেছি। পরবর্তীতে এ রকম রিপোর্ট প্রদান করলে আপনার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বগুড়ার সিভিল সার্জন ডা. শফিউল আযম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, এই প্রথম আপনার কাছে থেকে জানলাম। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগীর পরিবার কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি, লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে রিপোর্ট প্রক্রিয়ার মান উন্নয়নে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা। রোগীদের রিপোর্টের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ডাবল চেকিং পদ্ধতি চালু করা। ভুল রিপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া। স্বাস্থ্যসেবা একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল খাত। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্টের উপর নির্ভর করেই চিকিৎসকেরা রোগীর সঠিক চিকিৎসা নির্ধারণ করেন। তাই এ ধরনের ভুল রিপোর্ট রোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। কর্তৃপক্ষের উচিৎ এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি