গুরুতর অভিযোগে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতিকে শোকজ
প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:২৮ আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:১৯
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতির শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে দলটির কেন্দ্র থেকে তাকে শোকজ করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি চাঁদপুর সদর হাসপাতালে দালাল চক্র ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী জনতার মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরবর্তীতে দালাল চক্রের পক্ষ নিয়ে সিভিল সার্জনকে হেনস্থা করার অভিযোগে জেলা বিএনপির সভাপতি সমালোচনার মুখে পড়েন।
সম্প্রতি আলজাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সামি চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতির অনৈতিক দখলদারিত্ব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে গত ৬ ডিসেম্বর চাঁদপুরের মীর আহমদ আলী তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
অন্যদিকে, চাঁদপুর জেলা বিএনপি সভাপতির দখল-লুটপাট, চাঁদাবাজি ও ভয়-ভীতি দেখানোর বিষয় নিয়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে লিখিত অভিযোগ দেন জেলা বিএনপির প্রকাশনা সম্পাদক কাজী ইব্রাহিম জুয়েল। এছাড়া চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের অনুমতি নেয়ায় সাবেক ছাত্রদল সভাপতি জুয়েলকে জেলা বিএনপি থেকে বহিষ্কার হয়।
এর প্রেক্ষিতে সোমবার (৯ ডিসেম্বর) প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন এবং সংবাদ সম্মেলনের উদ্যোগ নেন কাজী ইব্রাহীম জুয়েল। তবে এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে হামলায় কাজী ইব্রাহিমের ছেলেসহ আহত হয় অর্ধশত নেতাকর্মী। একইসঙ্গে জুয়েলের বাসা-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও তার মালিকানাধীন পত্রিকা কার্যালয় ভাঙচুর-লুটপাট করে একদল দুর্বৃত্ত। এ সময় প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার, সিসিটিভি ডিভিআর, মূল্যবান জিনিসপত্র ও লগদ টাকা লুট করার অভিযোগ উঠে। ভুক্তভোগী জুয়েলের দাবি এই হামলার ইন্ধন দিয়েছেন চাঁদপুর জেলা বিএনপি সভাপতি মানিক।
হামলায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে দাবি করে জেলা বিএনপির একটি সূত্র জানায়, হামলায় উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দেন চাঁদপুর জেলা ছাত্রদল সভাপতি ইমাম গাজী ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন পাটোয়ারী। তাদের সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউর রহমান সোহাগ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা, মেহেদী হাসান শাকিল, চাঁদপুর পৌর ছাত্রদল মামুন খান, চাঁদপুর সরকারি কলেজ সভাপতি সোহেল গাজী, জিসান আহমেদ মুরাদ (সভাপতি থানা ছাত্রদল), পারভেজ খান (সাধারণ সম্পাদক সদর থানা), জুনায়েদ খান (সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদর থানা), মাসুদ মাঝি (যুগ্ম আহ্বায়ক স্বেচ্ছাসেবক দল, চাঁদপুর জেলা) হামলায় অংশ বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কাজী ইব্রাহীম জুয়েল বলেন, গত ১৭ বছর আমি স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনে নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হয়েছি। অসংখ্য বার কারাবরণ করেছি। আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বাড়িতে বারবার আওয়ামী সন্ত্রাসীর হামলা ও লুটপাট করেছে। তবুও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথ থেকে সরে যাইনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ও নির্দেশে রাজপথে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছি। আমার কষ্টে উপার্জিত অর্থ দিয়ে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। আজকে ছাত্র-জনতার রক্তে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে আমার সন্তানকে রক্তাক্ত করা হলো। আমাকে খুন করার চেষ্টা করেছে। আমি আমার দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কাছে সঠিক বিচার চাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের মুঠো ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোনে সাড়া দেননি। ফলে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম বলেন, আমরা সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। সঠিক তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তবে এখনও লিখিত অভিযোগ পাইনি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ জার্নাল/কেএইচ