ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

বেকসুর খালাস পাবে মিন্নি, বললেন বাবা

  বরগুনা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:২৫

বেকসুর খালাস পাবে মিন্নি, বললেন বাবা

বরগুনার বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় ঘোষণা হবে আজ (বুধবার)। বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আছাদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করবেন।

তবে যাদের ঘিরে মামলার রায় সেই আসামিদের মধ্যে সবার আগে আদালতে হাজির হয়েছেন নিহত রিফাতের স্ত্রী ও এ মামলার অন্যতম আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। জামিনে থাকা মিন্নি বুধবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে তার বাবার সঙ্গে মোটরসাইকেলে চড়ে আদালতে হাজির হন। একই সঙ্গে আদালত প্রাঙ্গণে হাজির হয়েছেন মিন্নির কয়েকজন স্বজনও।

থামছেই না রিফাতের মায়ের কান্না

মামলার রায়ে রিফাতের স্ত্রী মামলার অন্যতম আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি বেকসুর খালাস পাবে বলে প্রত্যাশা বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের। একই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘আমরা আসলেই হয়রানির শিকার। জীবন বাজি রেখে মিন্নি তার স্বামীকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। মিন্নি প্রথমে স্বামী হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ছিল। পরে তাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। যা খুবই কষ্টকর।’

সবার আগে হাজির মিন্নি

কিশোর বলেন, ‘মিন্নির আইনজীবীরা যে যুক্তিতর্ক আদালতে উপস্থাপন করেছেন সেই যুক্তি খণ্ডন করতে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছেন। মিন্নি যে নির্দোষ এটা আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন আইনজীবীরা। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, এ মামলা থেকে বেকসুর খালাস পাবে মিন্নি।’

মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, ‘মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে মিন্নির উপস্থিতিতে কলেজের শহিদ মিনারে হত্যার পরিকল্পনার যে মিটিংয়ের কথা বলা হয়েছে, সেখানে মিন্নি ছিল না। আহত রিফাত শরীফকে মিন্নি হাসপাতালে নিয়ে গেছে। কিন্তু সে বিষয়টি চার্জশিটের কোথাও নেই।’

জবানবন্দিতে বিস্ফোরক তথ্য দিলেন মিন্নি

তিনি বলেন, ‘যদি কেউ কাউকে খুনের পরিকল্পনা করে তাহলে সে কখনো তাকে বাঁচাতে যায় না। মিন্নি যেভাবে রামদার নিচে গিয়ে স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে এবং পরে রিফাতকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে; এতেই বোঝা যায় মিন্নি নির্দোষ। মিন্নি কোনোভাবেই হত্যায় জড়িত নয়। আমরা মনে করি, আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। তাই আশা করছি মিন্নি বেকসুর খালাস পাবে।’

২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করে তারই স্কুলজীবনের বন্ধু সাব্বির আহম্মেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড ও তার সঙ্গীরা।

পিকনিকের আড়ালে নয়নের সঙ্গে হোটেলে রাত কাটিয়েছিলো মিন্নি

এ ঘটনায় ১২ জনের বিরুদ্ধে বরগুনা সদর থানায় হত্যা মামলা করেন রিফাতের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ। এতে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল। এরপর আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ওই ভিডিও দেখে মিন্নির বাবার বিরুদ্ধেও মামলা করার কথা জানান রিফাতের বাবা।

একপর্যায়ে মামলার প্রধান সাক্ষী মিন্নিকে ১৬ জুলাই রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশের তদন্তে স্বামী হত্যায় ফেঁসে যান মিন্নি। পরদিন তাকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। দুইদিন পরে মিন্নিকে আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

ডিগ্রি ১ম বর্ষের ৭ বিষয়ের চারটিতেই ফেল মিন্নি

আদালতে প্রথমে মিন্নির পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী। রিমান্ডে নেয়ার পরদিন বরগুনার এসপি মো. মারুফ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মিন্নি তার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি।

এসপির সংবাদ সম্মেলনের পরদিন বিকেলে মিন্নি একই আদালতে তার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মিন্নি-নয়নের ‘নগ্ন ভিডিও’ ফাঁস

৩০ জুলাই বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান মিন্নির জামিন নামঞ্জুর করেন। এর আগে ২১ জুলাই বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালত মিন্নির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন। এরপর মিন্নির জামিনের বিষয়টি হাইকোর্টে আসে। এ অবস্থায় মিন্নির জামিন কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে ২০ আগস্ট রুল জারি করেন হাইকোর্ট। অবশেষে ২৯ আগস্ট দুই শর্তে মিন্নির জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট।

এরপর রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এক আসামির পক্ষে সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। সব আসামির পক্ষে-বিপক্ষে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

১৬ সেপ্টেম্বর মামলার দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান রায়ের জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন।

এর আগে ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ভাগে বিভক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এরমধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে আসামি করা হয়। মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. মুসা এখনো পলাতক রয়েছেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত