ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘রোহিঙ্গাদের হাতে এনআইডি, ইসির কেউ জড়িত নয়’

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৬:৪২

‘রোহিঙ্গাদের হাতে এনআইডি, ইসির কেউ জড়িত নয়’

রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেয়ার সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কোনো কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী জড়িত আছে বলে মনে করেন না নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম।

সোমবার চট্টগ্রাম নগরীর লাভ লেইনে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে যোগ দেয়ার আগে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, কিছুদিন আগে একজন রোহিঙ্গার কাছে কার্ড (স্মার্টকার্ড) পাওয়া গিয়েছিল। ওটা ছিল ২০১৫ সালের কার্ড। এরপর ৪৬ জন রোহিঙ্গার তথ্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা উদ্ধার করেছি। অবশ্য তারা কোনো কার্ড পায়নি। আমরা তাদের আলাদা করে ফেলেছি। তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি যে ১১ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে তাদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করা হয়েছে জানিয়ে কবিতা খানম বলেন, তাদের বায়োমেট্রিক নেয়া আছে। আমরা প্রথমে ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করি। তারপর তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। এনআইডি দেয়ার আগে আমরা যখন বায়োমেট্রিক নেব, তখন রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক তথ্যের সঙ্গে তা যাচাই করব। রোহিঙ্গা কাউকে পাওয়া গেলে তাদের আলাদা করে ফেলব। এভাবেই আমাদের সিস্টেমটা আমরা তৈরি করেছি। রোহিঙ্গারা যাতে কোনোভাবেই ভোটার তালিকায় আসতে না পারে বা তারা যাতে এনআইডি না পায় সেজন্য আমরা সতর্ক আছি।

রোহিঙ্গাদের এনআইডি পাওয়া বা ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হওয়ার ঘটনায় আরও অনেকের দায় আছে উল্লেখ করে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

কবিতা খানম বলেন, জন্ম নিবন্ধনসহ সব ডকুমেন্ট তৈরি করে আমাদের কাছে নিয়ে আসা হচ্ছে। এখন থেকে আমরা সেগুলো ভেরিফাই করব। কিন্তু যারা সেগুলো দিচ্ছে বা যাদের মাধ্যমে পাচ্ছে এবং যারা রোহিঙ্গাদের আত্মীয় পরিচয় দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। রোহিঙ্গারা যাতে কোনোভাবেই কোন ডকুমেন্টস না পায়। কারণ এসব ডকুমেন্টসের মাধ্যমেই কিন্তু তারা ভোটার তালিকায় আসছে বা এনআইডি পাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি না যে, নির্বাচন কমিশনের কোনো কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী রোহিঙ্গাদের ভোটার করছে বা জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে সহযোগিতা করছে। তারপরও আমরা বিষয়টা নিয়ে তদন্ত করছি। আমাদের একটা টিম আবার এখানে আসবে। অভিযোগ যদি আসে, আমরা অবশ্যই তদন্ত করব। নির্বাচন কমিশন অবশ্যই নিজের মতো করে তদন্ত করবে। তথ্যপ্রমাণ থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে।

পাসপোর্ট করতে গিয়ে যারা ধরা পড়ছে বা যারা ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র বের করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষেও মত দিয়েছেন এই নির্বাচন কমিশনার।

রোহিঙ্গাদের ভোটার করা ও এনআইডি দেয়া নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কবিতা খানম বলেন, দুদকের বিষয়টা আসলে এখনও আমাদের নোটিশে নেই। আমি শুনেছি যে গতকাল (রোববার) একটা টিম তদন্ত করতে এসেছিল। দুদকের মাধ্যমে কোনো কিছু প্রমাণ হলে নির্বাচন কমিশনও সেটা নিজস্বভাবে তদন্ত করে দেখবে।

চট্টগ্রামের কয়েকজন নির্বাচন কর্মকর্তা-কর্মচারী রোহিঙ্গাদের এনআইডি দেয়ার ক্ষেত্রে জড়িত থাকার বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ বা তথ্য-প্রমাণ আছে বলে আমার জানা নেই।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ আগস্ট লাকী নামের এক তরুণী এনআইডি কার্ড আনতে গিয়ে ধরা পড়ে। যার প্রকৃত নাম রমজান বিবি। তিনি ২০১৪ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসেন। এই রোহিঙ্গা নারীর ভুয়া পরিচয়পত্রের তথ্যও নির্বাচন কমিশনের তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষিত আছে। গত ১ সেপ্টেম্বর পুলিশের কথিত ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে দুর্ধর্ষ ডাকাত নূর মোহাম্মদ। এই রোহিঙ্গা ডাকাতেরও স্মার্টকার্ড ছিল।

পরবর্তীতে চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিস তদন্ত করে ৪৬ জন ভুয়া রোহিঙ্গা নাগরিককে শনাক্ত করে, যারা বাংলাদেশি এনআইডি পেয়েছে এবং তাদরে তথ্য নির্বাচন কমিশনের তথ্যভাণ্ডারে আছে। নির্বাচন কমিশনের এনআইডি উইংয়ের উচ্চপর্যায়ের একটি টিমও এ বিষয়ে তদন্ত করছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত