ভাঙা হচ্ছে ৩২ নম্বরের বাড়ি, যা বলছেন উপদেষ্টা ও অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্টরা
বিবিসি
প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৪২
![ভাঙা হচ্ছে ৩২ নম্বরের বাড়ি, যা বলছেন উপদেষ্টা ও অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্টরা](/assets/news_photos/2025/02/06/image-283979-1738817011bdjournal.jpg)
গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ছয় মাস পর গতকাল বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল ভাষণ ও ছাত্র-জনতার ব্যানারে রাতভর রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বুলডোজার দিয়ে ভবনটির একাংশ ভেঙে দেয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালেও ভবনটিকে বুলডোজার দিয়ে ভাঙতে দেখা যায়।
তবে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহমেদ মাসুদ বলেন, "এখন কোনো সমস্যা নাই। ম্যাক্সিমাম চলে গেছে। এখন আর লোকজন নাই"। সেখানে "পুলিশ কোনো পাহারা-টহলে নেই" বলেও জানান তিনি।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হবার ছয় মাস পর ছাত্র সমাজের উদ্দেশে মঙ্গলবার শেখ হাসিনা ভাষণ দেবেন– এমন খবর আসার পর থেকেই এনিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
শেখ হাসিনা বক্তব্য দিলে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ভবনে ভাঙচুর চালানো হবে উল্লেখ করেও সামাজিক মাধ্যমে নানা পোস্ট দেয়া হয়। তবে ভাষণের আগেই সেখানে ভাঙচুর শুরু হয় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ভবনটি থেকে অবকাঠামোর বিভিন্ন জিনিস লুটের ঘটনাও ঘটে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা
রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে হামলার পরে তা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টদের বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
ধানমন্ডিতে থাকা শেখ হাসিনার আরেকটি বাসভবন সুধাসদনেও হামলা চালানো হয়। রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভবনের দুটি তলায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
খুলনা মহানগরের ময়লাপোতা এলাকায় অবস্থিত 'শেখ বাড়ি' নামে পরিচিত একটি স্থাপনাও বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এটি ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচার বাড়ি।
বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়া হয় কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়িও।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের ভোলার বাসভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ চালনো হয়।
চট্টগ্রাম ও সিলেটে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। রংপুরের দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজে স্থাপিত শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
বুলডোজার দিয়ে ভাঙা হয় ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের 'মুজিব ম্যুরাল'।
এছাড়াও দেশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের নামফলক ভেঙে দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে আছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
উপদেষ্টা ও অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্টদের প্রতিক্রিয়া
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ সারাদেশে ভাঙচুরের ঘটনায় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
রাত আড়াইটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, "গড়ার তাকত আছে আমাদের?" শিরোনামে একটি ফেসবুক পোস্ট দেন।
লম্বা পোস্টের একটি অংশে তিনি লিখেছেন, "ভাঙ্গার পরে গড়ার সুযোগ এসেছে, কিন্তু অনন্ত ভাঙ্গা প্রকল্প আমাদের জন্য ভালো ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবহ না। গড়ার প্রকল্পগুলো খুব দ্রুতই শুরু ও বাস্তবায়ন হবে। আপনারা গড়ার কাজে সক্রিয় হোন"।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে হাসনাত আব্দুল্লাহ নিজের ফেসবুক পেইজে লেখেন, "আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে"।
পরে রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি লেখেন, "ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ"।
রাত ১১টার দিকে দেয়া এক পোস্টে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম লেখেন, "আবু জাহেলের বাড়ি এখন পাবলিক টয়লেট!"
বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ