ঢাকা, শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন

রাতে আটক সকালে যুবদল নেতার মৃত্যু

  প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫১

রাতে আটক সকালে যুবদল নেতার মৃত্যু
তৌহিদুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লায় গভীর রাতে বাড়ি থেকে যৌথ বাহিনীর হাতে আটক তৌহিদুল ইসলাম (৪০) নামে এক যুবদল নেতার মৃত্যু হয়েছে। অমানবিক নির্যাতনের কারণে ওই যুবদল নেতা মারা গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা। নিহতের শরীরে নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন থাকার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসক ও স্বজনেরা। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় তৌহিদের। এর আগে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নিজ বাড়ি থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় যৌথবাহিনী।

নিহত তৌহিদুল ইসলাম কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা সরদার বাড়ির মোখলেছুর রহমান সরদারের ছেলে। তিনি পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তৌহিদুল ইসলাম চট্টগ্রামে একটি শিপিং এজেন্টে চাকরি করতেন। সংসার জীবনে ৪ কন্যা সন্তানের জনক তিনি। গত ২৬ জানুয়ারি তৌহিদের বাবার মৃত্যু হয়। শুক্রবার ছিল বাবার কুলখানি। বাবার কুলখানি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গ্রামে এসেছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে যৌথবাহিনী তাকে বাড়ি থেকে তুলে নেয়।

নিহত তৌহিদুল ইসলামের ভাই বলেন, বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্য এবং সিভিল পোশাকে কয়েকজন ব্যক্তি আমার ভাইকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় যৌথবাহিনী আমার ভাইসহ আরেকজনকে নিয়ে বাড়িতে এসে এক ঘণ্টা যাবৎ বিভিন্ন ঘরে তল্লাশি চালায়। তল্লাশির পরে কোনো অস্ত্র না পেয়ে আমার ভাইকে আবারও তারা নিয়ে যায়। শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে পুলিশ আমাদের ফোন করে বলে— গোমতী বিলাসের কাছে আমার ভাই আহত অবস্থায় পড়ে আছে। আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। প্রথমে কুমিল্লা সদর হাসপাতাল এবং পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তানভীর আহমেদ বলেন, শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তৌহিদুল ইসলামকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। মরদেহের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, তৌহিদুল ইসলাম খুব ভালো ছেলে ছিল। তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তৌহিদুল ইসলামের ওপর নির্যাতন হয়েছে লাশ দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। আমরা এ ঘটনায় বিচার চাই।

কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা ফোন করে জানায় আহতের কথা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কী কারণে তাকে আটক করা হয়েছে, সেটা জানায়নি যৌথবাহিনি। তবে তৌহিদুলের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই বলে উল্লেখ করেন ওসি।

এ বিষয়ে শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ সাইফুল মালিক বলেন, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে থানা–পুলিশকে বলা হয় তৌহিদুল ইসলামকে নেয়ার জন্য। যখন পুলিশের কাছে তৌহিদুলকে হস্তান্তর করা হয়, তখন তিনি অচেতন অবস্থায় ছিলেন। পরে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তাকে কেন আটক করা হয়েছিল বা কীভাবে তিনি মারা গেছেন, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। প্রাথমিকভাবে খোঁজ নিয়ে তৌহিদুলের বিরুদ্ধে কোনো মামলার তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

শুক্রবার রাত পর্যন্ত এ ঘটনার আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি সেনাবাহিনী।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত