ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১ আপডেট : ৫০ মিনিট আগে
শিরোনাম

রাতে বাড়ি থেকে তুলে নেয়ার পর সকালে যুবদল নেতার মৃত্যু

  প্রতিনিধি

প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:৩২  
আপডেট :
 ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:৩৫

রাতে বাড়ি থেকে তুলে নেয়ার পর সকালে যুবদল নেতার মৃত্যু
তৌহিদুল ইসলাম | সংগৃহীত ছবি

কুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে গভীর রাতে বাড়ি থেকে তুলে নেয়ার পর তৌহিদুল ইসলাম (৪৫) নামে এক যুবদল নেতার মৃত্যু হয়েছে। তবে নিহতের শরীরে নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন থাকার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসক। অমানবিক নির্যাতনের কারণে ওই যুবদল নেতা মারা গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা।

তৌহিদুল ইসলাম জেলার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবি ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের মৃত মোখলেছুর রহমানের ছেলে এবং ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরে একটি শিপিং এজেন্টে চাকরি করতেন।

এর আগে গত রোববার তার বাবা মোখলেছুর রহমানের মৃত্যুর খবরে তিনি বাড়ি আসেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। আর আজ শুক্রবার তার বাবার কুলখানি হওয়ার কথা ছিল। তৌহিদুলের মা প্রায় ২০ বছর আগে মারা গেছেন। সংসারে তার স্ত্রী ও চার কন্যাসন্তান রয়েছে।

এ বিষয়ে শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ সাইফুল মালিক বলেন, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে থানা–পুলিশকে বলা হয় তৌহিদুল ইসলামকে নেয়ার জন্য। যখন পুলিশের কাছে তৌহিদুলকে হস্তান্তর করা হয়, তখন তিনি অচেতন অবস্থায় ছিলেন। পরে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তবে তাকে কেন আটক করা হয়েছিল বা কীভাবে তিনি মারা গেছেন, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। প্রাথমিকভাবে খোঁজ নিয়ে তৌহিদুলের বিরুদ্ধে কোনো মামলার তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এছাড়াও এই ঘটনার পর এ বিষয়ে যৌথ বাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য জানানো হয়নি।

তৌহিদুল ইসলামের ভাই সাদেকুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তারা বাবার কুলখানির আয়োজন নিয়ে কাজ করছিলেন। রাত আড়াইটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাড়িতে আসেন। তাদের সঙ্গে পুলিশের পোশাক পরা কাউকে দেখেননি, তবে সাদা পোশাকে পাঁচজন যুবক ছিলেন। বাড়িতে প্রবেশ করেই তারা তৌহিদুলকে আটক করেন। এরপর সবার কাছ থেকে মুঠোফোন কেড়ে নেন। সেই সাথে ঘরে ব্যাপক তল্লাশি করেন। তবে কিছু পাননি। তৌহিদুলকে আটকের কারণ জিজ্ঞস করলেও তারা কোনো উত্তর দেননি। একপর্যায়ে তাকে গাড়িতে করে নিয়ে যান।

শুক্রবার সকালে আবারও সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাড়িতে এসে ব্যাপক তল্লাশি করেন জানিয়ে সাদেকুর রহমান বলেন, তখনো কিছু পাননি। সকালেও তৌহিদুল তাদের গাড়িতে ছিলেন। কিন্তু তাকে গাড়ি থেকে নামানো হয়নি। দূর থেকে তাকে নিস্তেজ মনে হচ্ছিল। পরে এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তৌহিদুল ইসলামকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দেখা যায় হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শুক্রবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ অন্য ব্যক্তির মাধ্যমে ফোন করে দ্রুত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসতে বলেন। হাসপাতালে আসার পর দেখেন তৌহিদুল আর নেই। তার কোমর থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত এমনভাবে পিটিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে যে কালো ফোলা জখমের চিহ্ন রয়েছে। পেট, বুক, পিঠ, পা, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে শুধুই নির্যাতনের চিহ্ন।

তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা তো দূরের কথা, থানায় একটি জিডিও নেই উল্লেখ করে সাদেকুর রহমান বলেন, বাড়ির পাশের একটি পরিবারের সঙ্গে তাদের জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছে। সেই বিরোধকে কেন্দ্র করে তৌহিদুলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হতে পারে। তৌহিদুলের কাছে অস্ত্র রয়েছে- এমন কোনো ভিত্তিহীন তথ্য দেয়া হতে পারে। যার কারণে তাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।

তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার বলেন, আমার চারটা মেয়ে এখনো ছোট। আমি এখন কী করব, মেয়েগুলোকে নিয়ে কীভাবে বাঁচব? আমার স্বামী তো কোনো অপরাধ করেনি। তাহলে কেন আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে এভাবে হত্যা করা হলো। আমি পুরো ঘটনার সঠিক তদন্ত এবং বিচার চাই।

তৌহিদুল ইসলামকে হাসপাতালে নেয়া কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক মোরশেদ আলম জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে থানার ডিউটি অফিসার জানান যৌথ বাহিনী আদর্শ সদর উপজেলার ঝাঁকুনিপাড়া এলাকায় গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ সড়কে দ্রুত যাওয়ার জন্য বলেছে। পরে ওসিকে বলে তিনি গাড়ি নিয়ে যান। তখন যৌথ বাহিনী তৌহিদুলকে নিয়ে যেতে বলে। কিন্তু তৌহিদুলের অবস্থা খারাপ দেখে তাদেরও সঙ্গে যেতে বললে তারা রাজি হয়নি। পরে তিনি তৌহিদুলকে হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তানভীর আহমেদ বলেন, শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তৌহিদুল ইসলামকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দেখা যায় হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

২০২৩ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তৌহিদুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে কখনোই কোনো অভিযোগ পাননি জানিয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্যসচিব ফরিদ উদ্দিন বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই যুবদল নেতারা হাসপাতালে যান। তাকে শুধু পেটানোই নয়, শরীরের বিভিন্ন স্থানে ইলেকট্রিক শকও দেয়া হয়েছে বলে জেনেছি। পুরো ঘটনার তদন্ত চান তিনি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এফএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত