ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১ আপডেট : ৪ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

আইসিজির প্রতিবেদন

ইইউ ওয়াচ লিস্টে বাংলাদেশ, অন্তর্বর্তী সরকারের ‘হানিমুন পিরিয়ড’ শেষ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:২৫

ইইউ ওয়াচ লিস্টে বাংলাদেশ, অন্তর্বর্তী সরকারের ‘হানিমুন পিরিয়ড’ শেষ
ছবি: সংগৃহীত

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) বলেছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য ‘হানিমুন পিরিয়ড’ এখন ভালভাবে এবং সত্যই শেষ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক দলগুলো ও অন্যান্য মূল খেলোয়াড়রা নির্বাচনী সুবিধার জন্য সংস্কার নিয়ে আলোচনা-দৌড়ঝাঁপ করায় এই বছর রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ আরও বাড়তে পারে।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সর্বশেষ নজরদারি তালিকায় বাংলাদেশের পাশাপাশি মলদোভা, কলম্বিয়া, উত্তর কোরিয়া, সুদান, গ্রেট লেকস, ইউক্রেন, সিরিয়া, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ও ইরানের নাম উঠে এসেছে।

'বাংলাদেশ: দ্য ডিলেমাস অব এ ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশন' শীর্ষক প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হাসিনার পতনের পরপরই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে বিপুল সমর্থন পেয়েছিল, তা কমতে শুরু করেছে। ইউনূস সরকার এখন সুনির্দিষ্ট ফলাফল দেওয়ার জন্য চাপের মুখোমুখি। তার সরকার শুধু অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে বিভেদ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে তাই নয়, দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনা নিয়েও জনগণের সমালোচনার মুখে পড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী বছর বিরোধী দল, ছাত্রনেতা, ইসলামপন্থী দলগুলো এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়রা নির্বাচনী সুবিধা পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করায় চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে।

এতে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যারা শেষ পর্যন্ত হাসিনা সরকারকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছে। এই টানাপোড়েনকে 'স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে আরও একটি বাধা' হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমার সীমান্তে অস্থিতিশীলতা মোকাবিলার পাশাপাশি ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর ন্যস্ত।

ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার ও বাংলাদেশ বিষয়ক সিনিয়র কনসালট্যান্ট থমাস কিন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অব্যবস্থাপনার উত্তরাধিকার হিসেবে পরিচিত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়েও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চাপের মধ্যে রয়েছে। অর্থনীতিকে ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের জনগণের চলমান প্রচেষ্টার সুফল দেখতে কিছুটা সময় লাগবে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন অব্যাহত রয়েছে এবং শিগগিরই যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।

তবে সংস্কারের বিষয়ে আশাবাদী মন্তব্য করেন থমাস কিন। তা সত্ত্বেও আগামী এক বছরে বাংলাদেশের সামনে জাতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর এবং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জবাবদিহিমূলক করার বিরল সুযোগ রয়েছে। এ লক্ষ্যে সংস্কার কমিশন শত শত প্রস্তাব নিয়ে প্রতিবেদন দিতে শুরু করেছে।

নির্বাচন ইস্যুতে কিন বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়াকে সমর্থন করতে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যাতে বাংলাদেশকে একটি জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে তা নিশ্চিত করতে বিদেশি অংশীদারদের বাগাড়ম্বর, কারিগরি ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

এর আগে গত আগস্টে ক্রাইসিস গ্রুপ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় প্রবেশ করছে। কিন বলেন, গত তিন দশক ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির যে অতি-দলীয় ও বিজয়ী নির্বাচনী গতিশীলতা এত ক্ষতি করেছে, তবুও তা থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ এখন বাংলাদেশের সামনে রয়েছে।

দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে সমর্থন করার জন্য ইইউ এবং এর সদস্য দেশগুলো কী পদক্ষেপ নিতে পারে, এমন বিষয়ও তুলে ধরেছে ক্রাইসিস গ্রুপ।

ক্রাইসিস গ্রুপ বলেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য দেশগুলোর উচিত হাসিনা সরকারের অংশ বা ঘনিষ্ঠদের অবৈধভাবে অর্জিত অসংখ্য সম্পদ পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ সরকারকে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করা। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নও ইইউর জন্য অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। ইউরোপীয় কূটনীতিকদের নয়াদিল্লির কাছে জোর দিয়ে বলা উচিত যে, আওয়ামী লীগের সাথে বন্ধনে আবদ্ধ থাকা আর কার্যকর কৌশল নয়।

বাংলাদেশে স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সংস্কারে ইইউ'র সমর্থন

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক তহবিল হ্রাস পাচ্ছে। জাতিসংঘের ২০২৪ সালের প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনায় মাত্র ৫৬ শতাংশ অর্থায়ন করা হয়েছে। ইইউ অন্যতম বৃহৎ দাতা দেশ হলেও কিছু ইউরোপীয় দেশ সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে।

এই প্রবণতা আরও ত্বরান্বিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, কারণ ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন সহায়তা বাজেট কমাবে। এটি ইউরোপীয় তহবিলকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে।

ক্রাইসিস গ্রুপ বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর পুনর্বাসনের জন্য শরণার্থীদের গ্রহণ করার সংখ্যাও কমাবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর উচিত আরও রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করা।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত