ট্রেন চলাচল বন্ধ: সারাদেশে যাত্রীদের দুর্ভোগ
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:২৬ আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:৩৭
রেলওয়ে রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে সারা দেশের সব স্টেশন থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। এ বিষয়ে রেলওয়ে থেকে যাত্রীদের আগাম কোনো বার্তাও দেওয়া হয়নি। ফলে স্টেশনে এসে ফিরে যাওয়াসহ গন্তব্যে পৌঁছানো নিয়ে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
গতকাল সোমবার মধ্যরাতের পর থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন রেলস্টেশনে আসা যাত্রীরা গন্তব্যে না যেতে পেরে ক্ষুব্ধ ও হতাশার কথা জানিয়েছে। গন্তব্যে যেতে অনেক জায়গায় বাস ও অটোরিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় অনেক যাত্রীকে বসে থাকতে দেখা গেছে। তাঁদের অনেকেই ট্রেন চলাচল বন্ধের খবর জানতেন না। সকাল সোয়া ৯টার দিকে স্টেশনে অনেক যাত্রীকেই ট্রেনের খবর জানতে আসতে দেখা যায়। ট্রেন চলবে না জেনে অনেকেই স্টেশন ছেড়ে চলে যান। তবে বয়স্ক ও নারীদের স্টেশনেই অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, পঞ্চগড়, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় যাত্রীদের বসে থাকার খবর জানা গেছে। অনেকে বিকল্প পথে যাত্রা শুরু করেছেন।
আজ দুপুর দেড়টার দিকে কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে ট্রেন বন্ধ থাকায় অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন। স্টেশনে সুনসান নীরবতা। অনেকেই এসে ট্রেনের টিকেট ফেরত দিয়ে মূল্য নিয়ে যাচ্ছেন।
আজ সকালে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় অনেক যাত্রীকে বসে থাকতে দেখা গেছে। তাঁদের অনেকেই ট্রেন চলাচল বন্ধের খবর জানতেন না। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্টেশনে অনেক যাত্রীকেই ট্রেনের খবর জানতে আসতে দেখা যায়। ট্রেন চলবে না জেনে অনেকেই স্টেশন ছেড়ে যান।
সকালে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে বসে ছিলেন মো. সানাউল্লাহ নামে নওগাঁর সাপাহার উপজেলার এক ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে দুটি বস্তা ছিল। বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই সকালে বাগেরহাট থেকে খুলনা এসেছিলেন। তিনি বলেন, প্রায় দেড় মাস আগে বাড়ি থেকে খুলনায় এসেছেন। বাগেরহাটে কৃষিকাজ করতে গিয়েছিলেন। আজ সকালে বাড়িতে ফেরার উদ্দেশ্যে খুলনায় এসে দেখেন ট্রেন বন্ধ। সঙ্গে সঙ্গে সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে চলে যান। সেখানে ৫০০ টাকার ভাড়া চাওয়া হচ্ছে দেড় হাজার টাকা, তা–ও টিকিট নেই। এরপর সবাই মিলে ট্রাক ভাড়া করতে গিয়েছিলেন। প্রতি ট্রাকের ভাড়া চাইছে ২৫ হাজার টাকা। এত টাকা তাঁদের কাছে নেই। কাজ করে যে টাকা পেয়েছেন, তা বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে মাত্র এক হাজার টাকা। এমন পরিস্থিতিতে ট্রেন ছাড়বে কি না, সে জন্য আবার স্টেশনে এসে বসে আছেন।
সকাল ১০টার দিকে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, টিকিট কেটেও গন্তব্যে যেতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন যাত্রীরা। যথাসময়ে টিকিটের টাকা পেতেও বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছিল তাঁদের।
পূর্ব নোটিশ ছাড়া এবং অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রি বন্ধ না করে কর্মবিরতি কর্মসূচি নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁও রোড রেলওয়ে স্টেশনে আসা যাত্রীরা।
মঙ্গলবার সকালে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষরা বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রার জন্য প্ল্যাটফর্মে এসে জড়ো হয়েছেন।ট্রেনে বন্ধ হওয়ার খবর পেয়ে অনেকেই তাদের হতাশা প্রকাশ করেন এবং পরবর্তীতে কী করা উচিত সে বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকেন।
ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। যাত্রীরা জানান, আগে থেকে কোনো নোটিশ না থাকায় তারা অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নিতে পারেননি।
রেলপথ মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার সকালে জানিয়েছে, ট্রেনের যাত্রা বাতিল হলে যাত্রীদের টিকেট ফেরত দেওয়া হবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকীর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের দাবি বহুলাংশে মেনে নেওয়া সত্ত্বেও তারা তাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি থেকে সরে আসেনি৷ এ কারণে আজ ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখ থেকে রেল চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে৷ রেল-এর যাত্রা বাতিল হলে পূর্বে ক্রয়কৃত টিকেটের টাকা বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক ফেরত দেবে।”
বাংলাদেশ জার্নাল/এনবি