ঢাকা, বুধবার, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ মাঘ ১৪৩১ আপডেট : ১৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

রেলকর্মীদের ট্রেন চলাচল বন্ধের হুমকি

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:৫৩

রেলকর্মীদের ট্রেন চলাচল বন্ধের হুমকি
ছবি: সংগৃহীত

দাবি পূরণ না হওয়ায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সারাদেশে কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা; ফলে সোমবার মাঝরাতের পর সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন দেওয়া এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার রাত ১২টার পর থেকে কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি।

সমস্যার সমাধানে সোমবার ঢাকার কমলাপুরে আন্দোলনকারী রানিং স্টাফদের সঙ্গে বৈঠক করেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। তবে বৈঠকে কোনো সমাধান আসেনি।

বৈঠক থেকে বের হয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি মো. সাইদুর রহমান।

তিনি বলেন, রেলওয়ের কর্মকর্তারা তাদের কাছে আরও কিছুদিন সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু তারা আর সময় দিতে রাজি না।

“আমরা বলেছি আজ রাত ১২টার আগে আমাদের হাতে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের কাগজপত্র দেবেন। আমাদের ভাতা আগে যেমন ছিল তেমন দিতে হবে। আমরা চার বছর ধরে বিষয়টি নিয়ে আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু তারা বারবার আমাদের কাছে সময় নিয়েছেন, যখন আমরা আলটিমেটাম দিই, শেষ সময়ে এসে তারা আমাদের সঙ্গে বসেন, কিন্তু কোনো দাবি পূরণ হয় না। এজন্য এবার আমরা আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি না।”

তিনি আরও বলেন, “রাত ১২টার পর কোনো ট্রেন আমরা পরিচালনা করছি না। তবে রাত ১২টার আগে যেসব ট্রেন ছেড়ে যাবে, সেগুলো নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে।”

বাংলাদেশ রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা সোমবার বলেন, আন্দোলনরত রানিং স্টাফদের সঙ্গে বৈঠক করতে তাদের রেল ভবনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বৈঠক প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনকারীরা। পরে সোমবার বিকাল ৫টার দিকে কমলাপুর রেলস্টেশনে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তারা।

সেই আলোচনা ব্যর্থ হয়ে গেলেও সমস্যার সমাধানে আশাবাদের কথা বলেছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম।

সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় তিনি বলেন, “আমরা তাদের বিষয়টি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন দিক থেকে তাদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করছি। আশা করছি বিষয়টির সমাধান হবে।”

রানিং স্টাফ কারা? কী তাদের দাবি?

গার্ড, লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার, সাব লোকোমাস্টার এবং টিটিইরা রেলের রানিং স্টাফ। সারাদেশে রেলওয়েতে ১৭ শর বেশি রানিং স্টাফ কাজ করেন।

দৈনিক কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে ১৫–১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। সেজন্য তাদের আগে দেওয়া হত বিশেষ আর্থিক সুবিধা, যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। মাইলেজ রানিং স্টাফদের বেতনেরই অংশ।

প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক দিনের বেসিকের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পেতেন। ৮ ঘণ্টায় এক দিনের কর্মদিবস ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা তিন মাসের সমপরিমাণ। তাদের বেতনও সেভাবেই দেওয়া হত।

এ ছাড়া মূল বেতনের হিসাবে অবসরকালীন ভাতা যা হয়, তার সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ৭৫ শতাংশ টাকা বেশি দিয়ে তাদের পেনশন দেওয়া হত।

২০২২ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রানিং স্টাফদের সেই সুবিধা বাতিল করা হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছে।

গত ২২ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে মাইলেজের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক প্রদান এবং নিয়োগপত্রের দুই শর্ত প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবি জানান রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। তা না হলে ২৮ জানুয়ারি থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধের হুঁশিয়ারি দেন।

সেদিন সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, রেলওয়ের রানিং স্টাফরা ১৬০ বছর ধরে অবসরের পর মাইলেজের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক পেয়ে আসছেন। রাজনৈতিক ও প্রাকৃতিক— যে কোনো দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে ট্রেন সচল রাখেন তারা।

‘‘তাদের কোনো সাপ্তাহিক ছুটি বা জাতীয় দিবসের বন্ধ নেই। কিন্তু গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিজেদের দুর্নীতি ও অর্থ অপচয় ঢাকতে অর্থ মন্ত্রণালয় ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর রেলওয়ের রানিং স্টাফদের বেতন, পেনশন ও আনুতোষিক কমিয়ে দেওয়া হয়।”

রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয় রানিং স্টাফদের এসব দাবির পক্ষে থাকলেও অর্থ মন্ত্রণালয় এ জটিলতা সৃষ্টি করেছে বলে দাবি করেন তিনি।

নতুন নিয়োগ পাওয়া ট্রেনচালক, সহকারী ট্রেনচালকসহ রানিং স্টাফদের পুরোনোদের মত সুযোগ–সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০২২ সালের পর নিয়োগপত্রে দুটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালনের জন্য রানিং অ্যালাউন্স ছাড়া অন্য কোনো ভাতা পাবেন না এবং মাসিক রানিং অ্যালাউন্সের পরিমাণ মূল বেতনের চেয়ে বেশি হবে না।

এছাড়া অবসরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বশেষ আহরিত মূল বেতনের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক পাবেন, যা রেলওয়ের কোনো আইন বা বিধি বিধানে বলা নেই।

রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী মজিবুর বলেন, “এর আগেও আন্দোলন হয়েছে। ২০২২ সালে ১৩ এপ্রিল কর্মবিরতি পালন করলে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়েছিল। পরে রেল কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছিল। এরপর বারবার আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি দিলেও তার কোনো সমাধান এখনো পর্যন্ত হয়নি।”

বাংলাদেশ জার্নাল/এনবি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত