এএফপির প্রতিবেদন
বিপ্লবী শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ভেঙে পড়ছে বেকারত্বে
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৪
পুলিশের বন্দুকের মুখে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করে শিক্ষার্থীরা। অভ্যুত্থানের ৬ মাস পার হওয়ার পর অনেক শিক্ষার্থী বলছেন, তাদের চাকরি খুঁজে পাওয়া যেন প্রতিবাদের ব্যারিকেড সামলানোর চেয়েও কঠিন। তাদের অভিযোগ, যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে, তাদের কাছ থেকে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা এএফির প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রিজওয়ান চৌধুরীর মতো যুবকদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন এখন অনেকটাই ম্লান। তিনি বলছেন, শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছেন না।
২৫ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থী অভ্যুত্থানের সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। রিজওয়ান এএফপিকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো ফলপ্রসূ উদ্যোগ আমি দেখতে পাচ্ছি না।’
এএফপি বলছে, মূলত বেকারত্বই ছিল গত বছরের প্রতিবাদের প্রধান কারণ। কিন্তু বিপ্লবের পর বেকারত্বের এই সংকট আরও প্রকট হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে চাকরিপ্রত্যাশীর সংখ্যা ২৬ লাখ ৬০ হাজারে পৌঁছে, যা আগের বছরে থাকা ২৪ লাখ ৯০ হাজারের ৬ শতাংশ বেশি।
এতে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত সেপ্টেম্বরে সতর্ক করে বলেছিল, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এখন ‘উল্লেখযোগ্যভাবে ধীরগতির’। মুদ্রাস্ফীতি দ্বিগুণ-অঙ্কের স্তরে চলে গেছে। কর রাজস্ব কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ের চাপ বেড়েছে।
এ কারণে অনেকের কাছে হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির উচ্ছ্বাস ম্লান হয়ে যাচ্ছে বলেই উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
এতে বলা হয়, ড. ইউনূস শিক্ষার্থীদের নেতাদের কাছে মন্ত্রিপরিষদের পদ হস্তান্তর করার সময় দাবি উপেক্ষা করা হয়েছে বলে মনে করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী রিজওয়ান। তিনি বলেন, ‘যদিও আমাদের প্রতিনিধিরা প্রশাসনের অংশ, আমি নিশ্চিত নই যে আমাদের দাবি শোনা হচ্ছে কি না।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সাহিত্যে স্নাতক সম্পন্ন করে বৃদ্ধ ও অসুস্থ বাবা-মাকে সাহায্য করার জন্য খণ্ডকালীন চাকরি করছেন ৩১ বছর বয়সী শুক্কুর আলী। তিনি বলেন, ‘আমি কর্পোরেট চাকরি, ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও আবেদন করেছিলাম, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। এখন যে কাজ পাচ্ছি, শুধুমাত্র আমার ন্যূনতম চাহিদা পূরণের জন্য সেই কাজই করছি।’
ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষক জাহিদ হুসেন বলছেন, দেশে কর্মরত ব্যক্তিদের তিন ভাগের এক ভাগ যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের চেয়ে আরও নিচু পদে কাজ করছেন।
তবে অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, তারা এই সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এএফপিকে বলেন, কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই কর সংগ্রহ করে সরকার জনখাতে বিনিয়োগ করবে। এতে বিপুল সংখ্যক চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে। আরও ভালো রাজস্ব সংগ্রহ নিশ্চিত করাই এখন অগ্রাধিকার, কারণ আগের সরকার ভগ্ন অর্থনীতি রেখে গিয়েছিল।
এএফপি বলছে, কিন্তু ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা ড. ইউনূস এই বছর বা ২০১৬ সালের শুরুর দিকে নির্বাচনের জন্য তার আগে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান পুনরুদ্ধার করার অত্যন্ত কঠিন চ্যালেঞ্জে আছেন।
অনলাইন চাকরির প্ল্যাটফর্ম বিডিজবসের প্রধান ফাহিম মাশরুর এএফপিকে বলেন, সরকারি খাত প্রতি বছর সর্বোচ্চ ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার গ্রাজুয়েট নিয়োগ করতে পারে, যেখানে প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক হন। আর বেসরকারি খাত চাকরি দিতে পারে ৮৫ শতাংশ গ্রাজুয়েটকে। তবে সেখানেও আশার আলো কম। ৫ আগস্ট থেকে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে নিয়োগ ধীরগতিতে চলছে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, তরুণ চাকরিপ্রত্যাশীদের সহায়তায় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে সরকারকে। এতে তরুণদের ব্যবসা শুরুর জন্য ঋণ প্রকল্প থাকতে হবে।
বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ