মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের সমালোচনা করে যা বললেন নাহিদ, আসিফ ও হাসনাত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:২০
বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন ইস্যুতে গত কয়েক মাসে টানাপোড়েন দেখা গেছে। তবে এখন নির্বাচন, সরকার ও রাজনৈতিক দল গঠন প্রসঙ্গে রীতিমতো মুখোমুখি অবস্থানে দুই পক্ষ। গত বুধবার (২৩ জানুয়ারি) বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ থাকতে না পারলে নির্বাচন করতে নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে। এছাড়া ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করলে সরকার থেকে 'বেরিয়ে আসা উচিত' বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নাহিদের কড়া প্রতিক্রিয়া
মির্জা ফখরুলের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মূলত আরেকটা এক এগারো সরকার গঠনের ইঙ্গিত বহন করে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে তিনি লেখেন, ১/১১ এর বন্দোবস্ত থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটেছিল। বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে সামনে আরেকটা ১/১১ সরকার, সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা এবং গুম-খুন ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার আলামত রয়েছে।
তথ্য উপদেষ্টা লেখেন, ছাত্র ও অভ্যুত্থানের নেতৃত্বকে মাইনাস করার পরিকল্পনা ৫ আগস্ট থেকেই শুরু হয়েছে। ওই দিন যখন ছাত্র-জনতা রাজপথে লড়াই করছে, পুলিশের গুলি অব্যাহত রয়েছ, তখন আমাদের আপসকামী অনেক জাতীয় নেতৃবৃন্দ ক্যান্টনমেন্টে জনগণকে বাদ দিয়ে নতুন সরকার করার পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিলেন (অনেকে ছাত্রদের কথাও বলেছেন সেখানে)।
রাষ্ট্রপতির পরিবর্তন, সংস্কার, নতুন সংবিধান, জুলাই ঘোষণা সব ইস্যুতেই বিএনপি বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে উল্লেখ করে নাহিদ লেখেন, অথচ এগুলা কোনোটাই ছাত্রদের দলীয় কোনো দাবি ছিল না। কিন্তু দেশের স্থিতিশীলতা, বৃহত্তর স্বার্থ এবং জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার জন্য ছাত্ররা বারবার তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে।
তিনি আরও লিখেছেন, আর এই সরকার জাতীয় সরকার না হলেও সরকারে আন্দোলনের সব পক্ষেরই অংশীদারত্ব রয়েছে এবং সব পক্ষই নানান সুবিধা ভোগ করছে। সরকার গঠনের আগেই ৬ আগস্ট অ্যাটর্নি জেনারেল এবং পুলিশের আগের আইজির নিয়োগ হয়েছিল, যারা মূলত বিএনপির লোক। এরকমভাবে সরকারের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত নানান স্তরে বিএনপিপন্থী লোকজন রয়েছে। নির্বাচনের নিরপেক্ষতার কথা বললে এই বাস্তবতায়ও মাথায় রাখতে হবে।
আসিফের তীব্র প্রতিক্রিয়া
অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, উপদেষ্টাদের কেউ রাজনীতি করলে সরকার থেকে বের হয়েই করবেন। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সামাজিক মাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলেরও সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করা অনুচিত। বিভিন্ন সরকারি বা সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগে তদবির বা চাপ প্রয়োগ করা অনুচিত।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ অবশ্য পোস্টে কারো নাম উল্লেখ করেননি। তবে বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিএনপি মহাসচিব রাজনৈতিক দল গঠন করলে সরকার থেকে বেরিয়ে আসা উচিত বলে মন্তব্য করার পর তার এই প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ’র আক্রমণ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ অবশ্য সরাসরি আক্রমণ করেছেন বিএনপিকে। তার মতে, ফ্যাসিবাদবিরোধী ও জুলাই স্পিরিট ধারণকারী ছাত্র-জনতার সম্মিলনে যখন নতুন একটি রাজনৈতিক দলের উত্থান হওয়ার আভাস পেলো, ঠিক তখন বিএনপি সেটিকে চিহ্নিত করলো তাদের দলীয় স্বার্থের বিপক্ষে হুমকি হিসেবে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সামাজিক মাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, বিএনপি এ কথা ভুলে গেলো, গণ-অভ্যুত্থানের ফলে গঠিত হওয়া সরকারের ম্যান্ডেট ষাট-সত্তরভাগ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়া রাজনৈতিক দলের চেয়েও বেশি। নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তা উপস্থিত' হলে 'ঠিক এ কারণেই' বিএনপি সেটিকে হুমকি হিসেবে দেখেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক লেখেন, গণ-অভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশের কাঠামোগত পরিবর্তন করার সময় ও সুযোগ এলো অথচ বিএনপি দেশ পুনর্গঠনের এই সুযোগকে অবমূল্যায়ন করে হাজির হলো ১/১১ সরকারের ফর্মুলার আলাপ নিয়ে। অন্তর্বর্তী সরকার যখন দেশ সংস্কারের কাজে নিয়োজিত হলো তখন বিএনপি এসে বললো, এই সংস্কার করার ম্যান্ডেট বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেই।
যেসব ইস্যুতে সন্দেহ ও টানাপোড়েন
বিএনপির সঙ্গে বৈষম্যবিরোধীদের বিষয়টি প্রথম স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায় রাষ্টপতি অপসারণ ইস্যুতে। দলটির আপত্তির কারণে বৈষম্যবিরোধীদের দাবির মুখেও রাষ্ট্রপতির অপসারণ করা যায়নি বলে অভিযোগ করে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা না করা ইস্যুতেও টানাপোড়েন প্রকাশ পায়।
গত বছরের শেষ দিকে 'জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র' ঘিরে উত্তেজনা দেখা দেয় রাজনীতিতে। সন্দেহ ও অবিশ্বাস আরো ঘনীভূত হয় দুই পক্ষে। পরবর্তীতে 'কিংস পার্টি' গঠন, নির্বাচন নাকি সংস্কার কোনটি আগে হবে- এমন নানা প্রশ্নে দূরত্ব বাড়তে বাড়তে এখন সেটি এমন মুখোমুখি অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ