বিডিআর বিদ্রোহ: বিস্ফোরক মামলায় আড়াই শতাধিক আসামির জামিন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:১২
২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় করা বিস্ফোরক মামলায় জামিন পেয়েছেন আড়াই শতাধিক আসামি।
কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে রোববার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়া।
আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আমিনুল ইসলাম, মোহাম্মদ পারভেজ হাসান ও ফারুক আহাম্মদ। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বোরহান উদ্দিন জামিনের বিরোধিতা করেন।
বোরহান উদ্দিন বিকেল ৪টায় গণমাধ্যমকে বলেন, কতজন জামিন পেয়েছেন তা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি আমরা। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষ কেউই জানে না। তবে আড়াই শতাধিক জামিন পেয়েছেন। এর মধ্যে হত্যা মামলায় যারা খালাস পেয়েছিলেন এবং ওই মামলায় পরবর্তীতে হাই কোর্টে ১৫ জনের সাজা বাড়ানো হয়েছিল, তারা ছাড়া যারা খালাস পেয়েছিলেন, তারা জামিন পেয়েছেন।
এদিকে আসামিদের স্বজনরা সকাল থেকেই কারাগারের মূল ফটকের সামনে অবস্থান করছেন। প্রিয়জনদের জামিনের জন্য তাদের প্রার্থনা করতে দেখা গেছে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা। সেই বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।
বিদ্রোহের বিচার বিজিবির আদালতে হলেও হত্যাকাণ্ডের মামলা বিচারের জন্য আসে প্রচলিত আদালতে। এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি আটকে যায় ৪৬৮ বিডিআর সদস্যের।
বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে কেবল হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়। অন্যদিকে হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।
হাই কোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি ওঠে। গত ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান শহিদ পরিবারের সদস্যরা। এই হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তের জন্য গত ২৪ ডিসেম্বর একটি কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি