ঢাকা, বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ আপডেট : ৪৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ দুই বারের বেশি নয়

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:৩০  
আপডেট :
 ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:৫১

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ দুই বারের বেশি নয়
ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ দুইবার দায়িত্ব পালনের সুযোগ রাখার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। এবং সংসদের মেয়াদ হবে চার বছর। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পদের শূন্যতায় অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে গঠিত হবে সেটির সাংবিধানিক রূপরেখাও প্রস্তাব করেছে তারা।

বুধবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা তুলে দেন কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

নির্বাহী বিভাগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল, প্রধানমন্ত্রী ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিভিন্ন রূপরেখা প্রস্তাব করেছে সংস্কার কমিশন।

কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আইনসভার নিম্নকক্ষে যে সদস্যের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থন আছে তিনি সরকার গঠন করবেন। নাগরিকতন্ত্রের নির্বাহী কর্তৃত্ব প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা দ্বারা প্রয়োগ করা হবে।

কমিশন সুপারিশ করেছে, “একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সর্বোচ্চ দুইবার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তিনি একাদিক্রমে দুই বা অন্য যে কোনোভাবেই এই পদে আসীন হন না কেন তার জন্য এ বিধান সমভাবে প্রযোজ্য হবে।”

প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং সংসদ নেতা হিসেবে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না, এমন সুপারিশও করা হয় প্রতিবেদন।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে সংসদ ভেঙে দেয়ার উপায় হিসেবে বলা হয়েছে, আইনসভার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্বে যদি কখনও প্রধানমন্ত্রী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন বা আস্থা ভোটে হেরে যান কিংবা অন্য কোনও কারণে রাষ্ট্রপতিকে আইনসভা ভেঙে দেয়ার পরামর্শ দেন, সে ক্ষেত্রে যদি রাষ্ট্রপতির নিকট এটা স্পষ্ট হয় যে, নিম্নকক্ষের অন্য কোনো সদস্য সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা সমর্থন অর্জন করতে পারছেন না, তবেই রাষ্ট্রপতি আইনসভার উভয় কক্ষ ভেঙে দেবেন।

রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদও এখনকার পাঁচ বছরের বদলে চার বছর করার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। রাষ্ট্রপতিও সর্বোচ্চ দুইবারের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না বলে প্রস্তাব করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের নতুন পদ্ধতি অবলম্বনের সুপারিশ করে সংস্কার কমিশন বলছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচকমণ্ডলীর (ইলেক্টোরাল কলেজ) সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে নির্বাচিত হবেন।

কোন ভোটারদের সমন্বয়ে নির্বাচকমণ্ডলী গঠিত হবে, সেই ধারণা দিয়ে সুপারিশে বলা হয়, আইনসভার উভয় কক্ষের সদস্য প্রতি একটি করে ভোট; প্রতিটি 'জেলা সমন্বয় কাউন্সিল' সামষ্টিকভাবে একটি করে ভোট [উদাহরণ: ৬৪টি 'জেলা সমন্বয় কাউন্সিল' থাকলে ৬৪টি ভোট]; এবং প্রতিটি 'সিটি কর্পোরেশন সমন্বয় কাউন্সিল' সামষ্টিকভাবে একটি করে ভোট।

রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসনের পদ্ধতি হিসেবে কমিশন সুপারিশ করেছে, “রাষ্ট্রদ্রোহ, গুরুতর অসদাচরণ বা সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করা যাবে। নিম্নকক্ষ অভিশংসন প্রস্তাবটি পাস করার পর তা উচ্চকক্ষে যাবে, এবং সেখানে শুনানির মাধ্যমে অভিশংসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।”

জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল

কমিশন রাষ্ট্রীয় কার্যাবলীতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনা এবং রাষ্ট্রীয় অঙ্গ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করতে নয় সদস্যের একটি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল বা এনসিসি গঠনের সুপারিশ করেছে।

রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল বা এনসিসি’ গঠনের এ সুপারিশ করেছে কমিশন।

কমিশনে থাকবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার, উচ্চকক্ষের স্পিকার, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, বিরোধী দল মনোনীত নিম্নকক্ষের ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দল মনোনীত উচ্চকক্ষের ডেপুটি স্পিকার এবং প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক দলের বাইরে থেকে উভয়কক্ষের কোনো একজন সংসদ সদস্য।

সরকার ও প্রধান বিরোধী দলের বাইরে আইনসভার উভয় কক্ষের বাকি সদস্যরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে তাদের মধ্য থেকে ওই সদস্যকে মনোনীত করবেন।

কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, “উক্ত ভোট আইনসভার উভয় কক্ষের গঠনের তারিখ থেকে ৭ (সাত) কার্য দিবসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। জোট সরকারের ক্ষেত্রে, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল ব্যতীত জোটের অন্য দলের সদস্যরা উক্ত মনোনয়নে ভোট দেওয়ার যোগ্য হবেন।”

আইনসভা ভেঙে গেলেও, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শপথ না নেয়া পর্যন্ত বিদ্যমান এনসিসি সদস্যরা কর্মরত থাকবেন, এমন প্রস্তাব করে সংবিধান সংস্কার কমিশন বলেছে, আইনসভা না থাকাকালীন এনসিসির রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি এবং প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক মনোনীত উপদেষ্টা পরিষদের দুইজন সদস্য হবেন এনসিসির সদস্য।

কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, এনসিসি নিম্নলিখিত পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে নাম পাঠাবে।

নির্বাচন কমিশনের প্রধানসহ অন্যান্য কমিশনার; অ্যাটর্নি জেনারেল ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল; সরকারি কর্ম কমিশনের প্রধানসহ অন্যান্য কমিশনার; দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধানসহ অন্যান্য কমিশনার; মানবাধিকার কমিশনের প্রধানসহ অন্যান্য কমিশনার; প্রধান স্থানীয় সরকার কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার; প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধান এবং আইন দ্বারা নির্ধারিত অন্য কোনো পদে নিয়োগ।

ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে সংবিধান সংস্কারের এ কমিশন গঠন করেছে।

এ কমিশনের সুপারিশ প্রস্তুত করতে গিয়ে প্রায় এক লাখ মানুষের মতামত নেয়ার কথা জানান আলী রীয়াজ। কমিশনের সদস্যদের পাশাপাশি ৩২ জন গবেষক এতে কাজ করেছেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত