মডেল তিন্নি হত্যা মামলায় সাবেক এমপি অভি খালাস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:২৯ আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:৫৫
মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি হত্যা মামলায় খালাস পেলেন জাতীয় পার্টির নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) গোলাম ফারুক অভি।
মঙ্গলবার বিকালে ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোছা. শাহীনুর আক্তার এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী আমিনুর রহমান আমিন বলেন, আসামির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত খালাস দিয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে।
মামলায় ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আর আসামি শুরু থেকেই পলাতক।
সংশ্লিষ্ট আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সৈয়দ মোহাম্মদ আবু জাফর বলেন, ‘এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পর বিশ্লেষণ করে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।”
২০০২ সালের ১০ নভেম্বর বুড়িগঙ্গার চীন মৈত্রী সেতুর নিচ থেকে তখনকার জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন মডেল তিন্নির লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন অচেনা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন কেরাণীগঞ্জ থানার তখনকার এএসআই মো. সফি উদ্দিন।
এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন কেরাণীগঞ্জ থানার এসআই মো. কাইয়ুম আলী সরদার। পরে ‘চাঞ্চল্যকর মামলা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয় এবং ২০০২ সালের ২৪ নভেম্বর তদন্তভার পায় পুলিশে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তখন তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির তৎকালীন পরিদর্শক ফজলুর রহমান।
এরপর সিআইডির পরিদর্শক সুজাউল হক, সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) গোলাম মোস্তফা, এএসপি আরমান আলী, এএসপি কমল কৃষ্ণ ভরদ্বাজের হাত ঘুরে তদন্তের দায়িত্ব পান এএসপি মোজাম্মেল হক। তিনি ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর গোলাম ফারুক অভিকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, সাবেক ছাত্রনেতা অভি ‘অনৈতিক সম্পর্ক’ চাপা দিতে তিন্নিকে খুন করেন এবং লাশ ওই সেতুর নিচে ফেলে রাখেন।
অভি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় তাকে ধরা সম্ভব হয়নি জানিয়ে অভিযোগপত্রে বলা হয়, ১৯৯২ সালে রমনা থানায় দায়ের করা একটি অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল অভির। সেই মামলার রায়ের পর হাই কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে কানাডা চলে যান তিনি।
অভিকে ধরার জন্য ২০০৭ সালে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি হয়েছিল, কিন্তু তাকে দেশে ফেরানো যায়নি।
এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় গোলাম ফারুক অভি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অভি ‘অস্ত্রবাজ নেতা’ হিসেবে আলোচিত ছিলেন।
১৯৯০ সালের নভেম্বরে ডাক্তার মিলন নিহত হওয়ার পর আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখনই জানা যায়, স্বৈরাচার এরশাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন অভি।
পরে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বরিশাল থেকে সংসদ সদস্য-এমপি নির্বাচিত হন। পরে তিনি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হন। তার পরের বছরই খুন হন তিন্নি।
মামলা হওয়ার পর পুলিশ সে সময় তিন্নির স্বামী শাফাকাত হোসেন পিয়াল, এবায়দুল্লাহ ওরফে স্বপন গাজী, গাজী শরিফউল্লাহ তপন, শফিকুল ইসলাম জুয়েল ও সোমনাথ সাহা বাপ্পীকে গ্রেপ্তার করে।
কিন্তু হত্যাকাণ্ডে তাদের কারো সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
তাদের জবানবন্দিতেই হত্যাকাণ্ডে অভির সম্পৃক্ততা উঠে আসে। তিন্নির দুই গৃহপরিচারিকাও আদালতে জবানবন্দি দেন।
আভিযোগপত্রে বলা হয়, অভি ওই হত্যাকাণ্ডের আগে স্বামী পিয়ালের সঙ্গে তিন্নির দাম্পত্য সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে তাকে ‘ফাঁদে ফেলে অনৈতিক সম্পর্ক’ গড়ে তোলেন।
কিন্তু সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত অভি তাকে কখনোই স্ত্রীর মর্যাদা দেননি, বরং বিয়ের জন্য তিন্নি চাপ দিলে ‘পরিকল্পিতভাবে’ তাকে খুন করে গাড়িতে করে লাশ চীন-মৈত্রী সেতুর নিচে ফেলে রাখেন।
২০১০ সালের ১৪ জুলাই পলাতক অভির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে এ মামলার বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ।
২০২৪ সালের ২২ আগস্ট এই আাদালতে বদলি হয়ে আসে। তারপর ২৫ আগস্ট যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের জন্য ১৪ অক্টোবর দিন ধার্য্য করা হয়। কিন্তু সেদিন রায় প্রস্তুত না হওয়ার এ বছর ১৪ জানুয়ারি ধার্য্য করা হয়। সে অনুযায়ী এদিন রায় দেওয়া হল।
নিয়ম অনুযায়ী অভির পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে একজন আইনজীবীও নিযুক্ত করা হয় বলে আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মো. রুহুল আমিন জানান।
বাংলাদেশ জার্নাল/এনবি