ঢাকা, বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ আপডেট : ৫ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ঢেলে সাজানোর আহ্বান নাগরিক কমিটির

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:১৭

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ঢেলে সাজানোর আহ্বান নাগরিক কমিটির

অন্তর্বর্তী সরকার অনুমোদিত সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪-এর খসড়ার সমালোচনা করে অধ্যাদেশটি ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।

কমিটি বলেছে, পূর্বসূরি আইনগুলোর পুরোনো-ঔপনিবেশিক যুগের ধারণা উত্তরাধিকার সূত্রে এই খসড়ায় গ্রহণ করা হয়েছে। খসড়া নিয়ে থাকা উদ্বেগের সমাধান না হলে ক্ষমতার অপব্যবহার ও মৌলিক স্বাধীনতা লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।

গতকাল সোমবার রাতে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়। গত ২৪ ডিসেম্বর উপদেষ্টা পরিষদ অধ্যাদেশটির খসড়া অনুমোদন দেয়।

বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল ও সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ প্রণয়নের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে নাগরিক কমিটি। তবে কমিটি বলেছে, অনুমোদিত সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়ার ব্যাপ্তি, উদ্দেশ্য ও অপব্যবহারের আশঙ্কা নিয়ে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এটি তার পূর্বসূরি আইনগুলো থেকে পুরোনো ও ঔপনিবেশিক যুগের ধারণাগুলোকে উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ করেছে।

নাগরিক কমিটি বলেছে, খসড়ায় ‘ধর্মীয় অনুভূতি বা মূল্যবোধ’ ও ‘অশ্লীল’-এর মতো শব্দের অন্তর্ভুক্তি ঔপনিবেশিক যুগের দণ্ডবিধি ১৮৬০ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া। এই শব্দগুলো বিস্তৃত ও ব্যক্তিপর্যায়ের ব্যাখ্যার সুযোগ দেবে। ধারার অপব্যবহারের পথ সুগম করবে। খসড়ায় ব্যবহৃত, ‘শৈল্পিক’ বা ‘শিক্ষাগত মূল্য’–সম্পর্কিত অস্পষ্ট ভাষা কার্টুনিস্ট, শিল্পী ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য কাজ করা অধিকারকর্মীদের জন্য বড় হুমকি তৈরি করবে, যা সৃজনশীলতা, ভিন্নমত প্রকাশ ও গঠনমূলক সমালোচনাকে দমন করতে পারে।

অধ্যাদেশের খসড়ার ৮ ধারায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) আধেয় (কনটেন্ট) ব্লকের ক্ষমতা দেওয়ার সমালোচনা করেছেন নাগরিক কমিটি। তারা বলেছে, বহু বছরের সমালোচনার পরও বিটিআরসির দায়িত্বের সঙ্গে একত্র করে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা সংস্থার মহাপরিচালককে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তিনি ‘অখণ্ডতা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ন’ হওয়ার মতো অস্পষ্ট ভিত্তিতে বিষয়বস্তু ব্লক বা অপসারণের অনুরোধ করতে পারেন। এ শব্দগুলোর কোনো স্পষ্ট সংজ্ঞা না থাকায়, তা স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত এবং সম্ভাব্য অপব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করবে। এ ছাড়া অধ্যাদেশটি তথ্য ব্লক বা অপসারণ করার ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন তদারকি ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

নাগরিক কমিটি বলেছে, অধ্যাদেশের খসড়ায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সন্দেহের ভিত্তিতে পরোয়ানা ছাড়া যেকোনো স্থানে প্রবেশ, তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্যবহারকারীর কাছ থেকে ট্রানজিট ডেটাসহ যেকোনো তথ্য চাওয়ার ক্ষমতা রাখে। এই বিধানগুলো সংবিধান দ্বারা প্রদত্ত গোপনীয়তার অধিকারের লঙ্ঘন করে। আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করে। অতীতে এ ধরনের আইনের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে।

নাগরিক কমিটি আরও বলেছে, কম্পিউটার–সংক্রান্ত অপরাধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোকে মতপ্রকাশসংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে এক করার মাধ্যমে অধ্যাদেশটি অনলাইন–জগতের ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা আইনের উদ্দেশ্যকে দুর্বল ও অস্পষ্ট করে তোলে।

খসড়াটি পুনর্বিবেচনা করে একটি স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আলোচনার মাধ্যমে আইন প্রণয়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নাগরিক কমিটি। তারা বলেছে, অধ্যাদেশ প্রণয়নে নিযুক্ত পরামর্শকদের পরিচয় ও যোগ্যতা প্রকাশ করা উচিত, যাতে জনসাধারণের কাছে সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত হয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আন্তর্জাতিক সনদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধান আইনে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

নাগরিক কমিটি বলেছে, সরকার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা বা সাইবার নিরাপত্তা আইনের অধীন কোনো মামলাকে বাতিল বা নিষ্পত্তি করেনি। ভুক্তভোগীরা আজও ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

নাগরিক কমিটি বলেছে, পূর্বের আইন ও এই খসড়ার উদ্বেগগুলো সমাধান করতে ব্যর্থ হলে সেন্সরশিপের সংস্কৃতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, মৌলিক স্বাধীনতা লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। এটি জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে সম্মান করতে ব্যর্থ হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনবি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত