পরিবারের অভিযোগ
স্থানীয় দ্বন্দ্বের জেরে কক্সবাজারে নিয়ে টিপুকে হত্যা
প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:১২
খুলনা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি ও সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রাব্বানী টিপুকে ‘স্থানীয় দ্বন্দ্বের জেরে টোপ দিয়ে’ কক্সবাজারে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবার।
টিপুকে (৫৪) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন হোটেল সি-গালের সামনের ফুটপাতে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খুলনা সিটি করপোরেশনের আরেক সাবেক কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখার চালু, টিপুর বন্ধু মেজবাহ উদ্দিন ভুট্টোকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার সকালেই টিপুর স্বজনরা কক্সবাজারে পৌঁছান। পরে তার মরদেহ ময়নাতদন্ত করে স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেছেন টিপুর ভগ্নিপতি ইউনুস আলী।
টিপুর বাড়ি খুলনা নগরীর দৌলতপুরের দেয়ানা উত্তর পাড়ায়। তিনি ওই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মো. গোলাম আকবরের মেজো ছেলে। ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর থেকেই টিপু আত্মগোপনে ছিলেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের সঙ্গে তাকেও অপসারণ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
গোলাম রাব্বানী টিপুরা তিন ভাই ও এক বোন। তার বড় ভাই স্কুলশিক্ষক, ছোট ভাই পারিবারিক গাড়ির ব্যবসা দেখাশোনা করেন। মা বেঁচে নাই। বৃদ্ধ বাবা টিপুদের সঙ্গেই থাকেন।
টিপুর এক ছেলে, এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে সপ্তম ও মেয়ে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী।
শুক্রবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে স্থানীয়রা ভিড় করেছেন। সহকর্মী সাবেক কাউন্সিলরদের কেউ কেউ এসেছেন। বাড়ির পাশে একটি কবরস্থানে তার দাফনের জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সন্তানের শোকে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন বাবা গোলাম আকবর। কান্নায় ভেঙে পড়েন টিপুর দুই ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের সদস্যরা। তবে সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য সেখানে যাননি বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।
টিপুর বড় ভাই স্কুলশিক্ষক গোলাম রসুল বাদশা জানান, আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে খুলনা সিটি করপোরেশন চার নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন টিপু। ৫ অগাস্ট সরকারের পতনের পর তিনি ঢাকায় চলে যান।
তিনি বলেন, “আমরা আসলে জানতাম না যে সে কোথায় ছিল। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে টিপুকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানতে পারি। পরে নিশ্চিত হলাম, আমার ছোট ভাই খুন হয়েছে।”
এলাকায় টিপুর ‘ঈর্ষা করার মত’ জনপ্রিয়তা ছিল দাবি করে তার ভাই বলেন, “টিপু জীবিত থাকলে অন্য কেউ কাউন্সিলর হতে পারবেন না, এটা অনেকেই জানত। এসব কারণ থেকে অনেকগুলো গ্রুপ এক হয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করছিল এবং তারাই তাকে গুলি করে হত্যা করেছে।
“হয়ত ব্যবসায়িক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখার চালুসহ কয়েকজন তাকে টোপ দিয়ে কক্সবাজার নিয়ে যায়। আর তাকে সেখানে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা খুলনাকেন্দ্রিক। তার শত্রুরাই তাকে হত্যা করিয়েছে।”
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, টিপু ছাত্রজীবনে খুলনা বিএল কলেজে ছাত্র মৈত্রীর সক্রিয় কর্মী ছিলেন। কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেন। তার সঙ্গে সবসময় লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র ও গানম্যান থাকত। তিনি জমির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। একসময় কক্সবাজারেও তার ব্যবসা ছিল।
দৌলতপুরের একজন বাসিন্দা বলছিলেন, “এর আগেও টিপুকে লক্ষ্য করে কয়েক দফায় হামলা হয়েছে। তখন তিনি কৌশলে বেঁচে যান। তিনি থ্রেটের মধ্যেই ছিলেন। কারণ, তার জীবনযাপন স্বাভাবিক ছিল না। নানা অভিযোগ আছে।”
২০১৫ সালের ৩০ অক্টোবর খুলনা নগরের দৌলতপুরে খুন হন নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির নেতা শেখ শহীদুল ইসলাম ওরফে ‘হুজি শহীদ’। এই হত্যা মামলার প্রধান আসামি টিপু।
খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী বলেন, “টিপুর বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় দুটি মামলা রয়েছে। দুটিতেই তিনি জামিনে ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আমরাও খোঁজ-খবর নিচ্ছি।”
বিকালে টিপুর স্বজনরা কক্সবাজার পুলিশের কাছ থেকে মরদেহ বুঝে নিয়ে খুলনার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ জার্নাল/এনবি