ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

রিউমর স্ক্যানার-২০২৪

ড. ইউনূস ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভুল তথ্য ছড়িয়েছে সবচেয়ে বেশি

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২২:৫৪

ড. ইউনূস ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভুল তথ্য ছড়িয়েছে সবচেয়ে বেশি
সংগৃহীত ছবি

তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার ২০২৪ সালে রেকর্ড দুই হাজার ৯১৯টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে। এক বছরের ব্যবধানে রিউমর স্ক্যানার প্রায় ৫২ শতাংশ হারে ভুল তথ্য বৃদ্ধি পেতে দেখেছে। একক ব্যক্তি হিসেবে বেশি ভুল তথ্য ছড়ানো হয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) নিজেদের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুরুটা হয়েছিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়ে। এরপর সময়ের সঙ্গে নানা ইস্যু প্রকাশ পেতে থাকে। তথ্যের সঙ্গে বাড়ছিল ভুল তথ্যের সংখ্যা। এরপর এলো ঐতিহাসিক দুই মাস জুলাই-আগস্ট। কোটা আন্দোলনের পথ ধরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলের সমাপ্তির পর রাষ্ট্র ক্ষমতার দায়িত্ব নেয় ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশ নিয়ে একের পর এক সাম্প্রদায়িক প্রোপাগাণ্ডা ছড়ায়। এভাবেই শেষ হয় ২০২৪ সাল।

রিউমর স্ক্যানার গেল বছর এমন সব ঘটনায় ভুল আর অপতথ্যের প্রবাহ নিয়ে নিরলস কাজ করেছে, শনাক্ত করেছে রেকর্ড দুই হাজার ৯১৯টি ভুল তথ্য। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে শনাক্ত হয়েছিল এক হাজার ৯১৫টি ভুল তথ্য। এক বছরের ব্যবধানে রিউমর স্ক্যানার প্রায় ৫২ শতাংশ হারে ভুল তথ্য বৃদ্ধি পেতে দেখেছে।

ভুয়া তথ্য সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে ইউটিউব, ফেসবুক ও এক্সে জানিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে তুমুল জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত প্লাটফর্ম ফেসবুক। মেটার অধীনে থাকা এই মাধ্যমটিতে ২০২৪ সালে ২৩৩০টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। এই হিসেবে প্রতিদিন কমপক্ষে গড়ে ছয়টির বেশি ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছে প্লাটফর্মটিতে।

ফেসবুকের পর একক প্লাটফর্ম হিসেবে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে ইউটিউবে (৫৬৫টি)। পিছিয়ে নেই শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকও। ছয় মাসে এখানে ভুল তথ্য ছড়িয়েছে ৫০৯টি৷ গেল বছর এক্সে (সাবেক টুইটার) উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে বাংলাদেশকে নিয়ে।

রিউমর স্ক্যানার এই প্লাটফর্মে ছড়িয়ে পড়া এমন ২০১টি অপতথ্য শনাক্ত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর বাইরে অন্যান্য প্লাটফর্মগুলো বাংলাদেশে তুলনামূলক কম জনপ্রিয় হওয়ায় সেগুলোতে ভুল তথ্য প্রচারের হারও বেশ কম লক্ষ্য করা গেছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ছাড়াও গণমাধ্যমও ভুল তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। গত বছর দেশের গণমাধ্যমগুলোতে প্রচারিত প্রতিবেদনে ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে ১৫১টি৷

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালে রিউমর স্ক্যানারে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এই সময়ে পুরোপুরি মিথ্যা বা ভুয়া ঘটনা সম্বলিত ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে ২০২৮টি।

এছাড়া, বিভ্রান্তিকর রেটিং দেয়া হয়েছে ৫৩৩টি। বিকৃত রেটিং পেয়েছে ৩০৮টি, অধিকাংশই মিথ্যা এমন রেটিং পেয়েছে তিনটি। এছাড়া, সার্কাজম বা কৌতুক হিসেবে হাস্যরসাত্মক ঘটনাকে বাস্তব দাবির প্রেক্ষিতে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক করা হয়েছে ৩১টি। যাচাইয়ের পর অর্ধেক সত্যতা পাওয়া গেছে এমন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে দুইটি।

একক ব্যক্তি হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছড়ানো সবচেয়ে বেশি, ২০৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়। এই তালিকায় পরের অবস্থানে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁকে নিয়ে ছড়ানো ১১৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে নিয়ে ছড়ানো ৯৮টি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দিক দিয়েও এই তিনজন শীর্ষে।

গত বছর রাজনীতি নিয়ে ৭২৭টি ভুল তথ্য শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছড়ানো ৯১টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়। সবচেয়ে বেশি ১২৪টি রাজনৈতিক ভুল তথ্য শনাক্ত হয় জানুয়ারি মাসে। এরপর আগস্ট ও নভেম্বরে ১০১টি করে রাজনৈতিক ভুল তথ্য শনাক্ত করে প্রতিষ্ঠানটি।

রিউমর স্ক্যানার জানিয়েছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আগস্ট থেকে ধর্মীয় অপতথ্য ছড়ানো আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে সাম্প্রদায়িক ২৯টি অপতথ্য শনাক্ত হয়। পরের ছয় মাসে তা পাঁচ গুণের বেশি বেড়েছে।

তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সরকারবিহীন তিন দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বাসা ও স্থাপনায়ও হামলা হয়। এসব ঘটনা ঘিরে সাম্প্রদায়িক ভুল তথ্য ও অপতথ্য ছড়ানোর মাধ্যম হয়ে ওঠে এক্স।

গত বছর বাংলাদেশকে নিয়ে ১৮১টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য শনাক্ত হয়, যার মধ্যে ১১৮টি ভারত থেকে আর ৬৩টি বাংলাদেশ থেকে ছড়ানো হয়। শুধু আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারত থেকে ১১৩টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য ছড়ানো হয়। এক্সে আগস্ট–পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে নিয়ে ছড়ানো অপতথ্যগুলো দেখা হয়েছে অন্তত ২০ কোটি বার।

বাংলাদেশ জার্নাল/এফএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত