মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে অনভিজ্ঞ-অদক্ষরা, পরিবর্তন চায় ২৫ ক্যাডার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:৪০ আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:৫৯
উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কোটা থাকায় ‘অদক্ষ’ ও ‘অপেশাদার’রা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে বাকি ২৫টি ক্যাডারের সম্মিলিত আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ।
এখনকার কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল করে পরীক্ষা নিয়ে মেধার ভিত্তিতে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের এ সংগঠন।
শুক্রবার রাজধানীর কেআইবি ইনস্টিটিউটে আয়োজিত আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের আলোচনা সভায় পরিষদের মুখ্য সমন্বয়ক মো. মফিজুর রহমান বলেন, “অনভিজ্ঞ, অদক্ষরা মন্ত্রণালয়ে নেতৃত্ব দেন। কেন স্বাস্থ্য ক্যাডাররা তাদের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নেই?”
শিক্ষা ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের এ কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতি নির্ধারণী পদ একটি বিশেষ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের (প্রশাসন ক্যাডার) হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য ক্যাডারে ৩২ হাজার কর্মকর্তা থাকলেও একজনও গ্রেড ১ বা গ্রেড ২ তে নেই।
পদোন্নতির ক্ষেত্রে এভাবে বৈষম্য হচ্ছে অভিযোগ করে মফিজুর বলেন, “আজ তাহার (প্রশাসন ক্যাডার) মন ভালো নেই, তাই পদোন্নতি সভা হবে না- এ কথা শোনার জন্য সিভিল সার্ভিসে আসি নাই। কারো দয়ায় পদোন্নতি নিতে আসি নাই।
“আমার পদোন্নতি হয় আমার ক্যাডার সার্ভিসের লোক দেবে, নয়তো তৃতীয় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের এবং আমাদের পদোন্নতি দেবে।”
গত ১৭ ডিসেম্বর এক সভায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী 'পরীক্ষার মাধ্যমে' জনপ্রশাসনে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া এবং এ পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কোটা ৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশ করার সুপারিশ তুলে ধরেন।
বর্তমান বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডারের ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়।
সংস্কার কমিশনের ওই সুপারিশের প্রতিবাদে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এ সুপারিশ ‘অযৌক্তিক ও ষড়যন্ত্রমূলক’ আখ্যা দিয়ে তারা উপসচিব পদে শতভাগ পদোন্নতি প্রশাসন ক্যাডার থেকে দেওয়ার দাবি তোলেন।
এ নিয়ে প্রশাসন ক্যাডার ও বাকি ২৫ ক্যাডারের মধ্যে উত্তেজনার মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা পড়লে ‘সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান’ ঘটবে।
আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের আলোচনা সভায় মফিজুর রহমান বলেন, “জুলাই বিপ্লবের পর আমরা যখন চিন্তা করলাম সিভিল সার্ভিসে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ কোটা উঠে গেছে, বৈষম্য শেষ। অথচ চাকরিতে এর থেকেও ভয়াবহ কোটা রয়েছে।
“যারা আন্দোলন করল, যেসব শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করল, শহীদ হল, তারা এসে দেখবে এখানে আরও বৈষম্য রয়েছে। তখন চাকরিতে এসে আবার আন্দোলন করবে। আমার পরবর্তী জেনারেশন এসে বৈষম্য দেখবে।”
পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের একাধিপত্যের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “আমার পদোন্নতি দেয় যে ব্যক্তি, তার পদোন্নতিও দেয় সেই ব্যক্তি। ধরে নিলাম তারা মেধাবী, তাহলে পরীক্ষা দিতে চায় না কেন?”
পরিষদের নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের ১১ জন উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছেন জানিয়ে মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, “তারা সকলেই বলেছেন, আমাদের (২৫ ক্যাডারদের) দাবি যৌক্তিক। তারা সকলেই বলেছেন, ‘আপনারা আলোচনা করতে থাকুন’।”
তারই ধারাবাহিকতায় এ আলোচনা সভার আয়োজন জানিয়ে মফিজুর রহমান বলেন, “এটা কোনো সমাবেশ বা আন্দোলন নয়।”
বিসিএস কর ক্যাডারের অতিরিক্ত কর কমিশনার মো. মহিদুল ইসলাম বলেন, “পৃথিবী যখন চলছে প্রফেশনালদের দিয়ে, সুপার প্রফেশনাল দিয়ে, তখন বাংলাদেশ কেন ‘সব জান্তা সমশের’ দিয়ে চলবে?
“কর ক্যাডারের লোকজন, আমরা কর দিই, আপনারা কর দেন, সারা দেশের লোকজন কর দেয়। কিন্তু গাড়ি, সার্ভিস চার্জ, বাসস্থান একটা ক্যাডারের লোকদের হয়, আমাদের বাসস্থানটা হয় না।”
কারো ‘শোষণের অধীনে’ থাকতে চান না জানিয়ে মহিদুল ইসলাম প্রশ্ন তোলেন– জনগণের সেবক কী করে প্রশাসক হয়? স্বাধীনতার এতবছর পরে কেন এনবিআর ভবন হবে?
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, কর ক্যাডারের কর্মকর্তারা রাজস্ব-কর আদায় করে দেন, অফিস করেন ভাড়া অফিসে। আর সুবিধা নেয় ‘অপর ক্যাডারের’ কর্মকর্তারা।
আলোচনা সভা আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক মো. আরিফ হোসেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন চূড়ান্ত সুপারিশ প্রস্তাব দেওয়ার আগে কোনো ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া না জানাতে ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেন।
পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, “আগামী একমাস ভবিষ্যৎ সিভিল সার্ভিসের রূপরেখা বিষয়ে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-জনতার সাথে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হবে।”
রাষ্ট্রের দায়িত্বভার হাতে থাকায় সেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে ‘সামান্য অপরাধে ঢালাও সাময়িক বরখাস্ত’ শুরু হয়েছে দাবি করে আরিফ হোসেন বলেন, “এ বিষয়ে উপদেষ্টা মহোদয়দের সাথে দেখা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ করা হবে।”
আর এ ধারা অব্যাহত থাকলে ‘বৃহৎ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে’ বলে তিনি পরিষদের তরফে হুঁশিয়ার করেন।
আট হাজার কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বিভিন্ন ক্যাডারের প্রতিনিধিরা এ সভায় তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ জার্নাল/এনবি