আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সরকার দুই পক্ষেই যোগাযোগ রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৫২
‘মিয়ানমারের সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে সে দেশের সরকার ও আরাকান আর্মি- উভয় পক্ষের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ রয়েছে।’ এ কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) কক্সবাজারের টেকনাফের সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনের সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা জানান।
তিনি দুপুর ১২টার দিকে হেলিকপ্টারে টেকনাফ-২ বিজিবির ব্যাটালিয়ন সদরে অবতরণ করেন। সেখান থেকে তিনি যান দমদমিয়া এলাকায় নাফ নদীর তীরে। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, মিয়ানমার সীমান্তের বাংলাদেশ অংশের সব বিওপিতে ইতোমধ্যে জনবল বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে অন্য বাহিনীর জনবলও। টহল তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে নাফ নদীতে। সীমান্তের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা কার্যক্রমও। বিজিবি রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা সার্বক্ষণিক টহল জারি রেখেছে। একইভাবে কাজ করছে কোস্টগার্ড, আনসার ও পুলিশও।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত পুরোটাই আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অপরদিকে দেশটি পরিচালনা করছে মিয়ানমার সরকার। ফলে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ড. খলিলুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি বিষয়টি সার্বক্ষণিকভাবে নজর রাখছেন। সীমান্ত এলাকায় আমাদের কোনো সমস্যা নেই। বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ সব বাহিনীর সদস্য সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। এখানে যেন আইনশৃঙ্খলা সব সময় স্বাভাবিক থাকে, সে বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের জের ধরে নতুন আরও ৫০-৬০ হাজার রোহিঙ্গা দেশে অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন হয়নি। তাদের নতুন করে নিবন্ধিত করা হবে কি হবে না, তা নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত জরুরি। তা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নতুন অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গারা মানবিক সমস্যায় পড়ে এসেছে। অনেকেই এসেছে গুরুতর আহত হয়ে। ফলে তাদের ফেরত পাঠানোও খুবই জটিল হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় জীবন রক্ষার্থে এবং যুদ্ধাহত কিছু মিয়ানমার নাগরিক বাংলাদেশে আগমন করলে নিতান্ত মানবিক কারণে তাদের গ্রহণ করা হয়। এছাড়া আরাকান আর্মির তীব্র আক্রমণে মিয়ানমার জান্তা সরকারের বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় ৮৭৬ জন সদস্য বিজিবির কাছে আত্মসমর্পণ করে। তাদের বিজিবি আটক করে হেফাজতে রেখে আবার ফেরত পাঠানো হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সীমান্তবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিজিবি ও অন্য বাহিনী সর্বোচ্চ পেশাদারত্বের সাথে দায়িত্বপালন করছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, টেকনাফে মাদকের সমস্যা দীর্ঘদিনের পুরোনো। নাফ নদীর বাংলাদেশের অংশের জালিয়ার দিয়া চরে কিছু অপরাধী ছিল। যারা দীর্ঘদিন ধরে মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ করত। বর্তমান সরকার আসার পর চর থেকে তাদের বিতাড়িত করা হয়েছে। মাদক পর্যায়ক্রমে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। এর জন্য সীমান্তের সব মানুষকে তথ্য প্রদান করে সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।
নাফ নদীতে মাছ ধরার বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, বিভিন্ন সময় গোলাগুলির শব্দ এপারে শোনা যায়। গোলাবারুদও এপারে এসে পড়ে। ফলে নাফ নদীতে মাছ ধরা এখন নিরাপদ নয়। পরিস্থিতির উন্নতি হলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হবে।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা টেকনাফ পৌঁছান। পরে সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন তিনি। এসময় বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি