‘হইচই’ করায় সারদা পুলিশ একাডেমির ৮ এসআইকে শোকজ
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:০৭ আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:৪৩
রাজশাহীর চারঘাটের সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত পুলিশের আটজন উপপরিদর্শককে (এসআই) কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মাঠে নির্দেশনা না মেনে তারা ‘উচ্চ স্বরে হইচই’ করেছেন।
রোববার সন্ধ্যায় আটজনের হাতে শোকজের চিঠি দেয়া হয়। তাদের আগামী তিন দিবসের মধ্যে শোকজের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হলে তাদের অব্যাহতি দেয়া হবে বলেও জানানো হয়।
সারদা পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান ভুঞার পক্ষে নোটিশে স্বাক্ষর করেন একাডেমির পুলিশ সুপার (বেসিক ট্রেনিং-২) মো. তানভীর সালেহীন ইমন। এ ব্যাপারে জানতে ফোন করা হলে তারা ফোন ধরেননি।
সারদায় প্রশিক্ষণরত অবস্থায় তলব পাওয়া পরিদর্শকরা শোকজের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শোকজ পাওয়া উপপরিদর্শকেরা বলছেন, ১২ মাসের জায়গায় তাঁরা ১৪ মাস ধরে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এ সময়ে তাঁদের সঙ্গে এসব অন্যায় করা হচ্ছে। নিয়মানুযায়ী চলতি বছরের ৪ নভেম্বর তাঁদের প্রশিক্ষণ শেষ করে বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটে যোগদানের কথা ছিল।
শোকজের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘গত ২৭ ডিসেম্বর বৈকালিক কার্যক্রমে নিয়মিত সাপ্তাহিক গেইম প্যারেড ছিল। গেইম প্যারেড শুরুর পূর্বে কোম্পানিভিত্তিক প্রশিক্ষণার্থীদের ফল-ইন করানোর জন্য কোম্পানির সিএএসআই থাকেন। ফল-ইনের সময় অ্যালাইনমেন্টে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেওয়ার জন্য প্রত্যেক কোম্পানির কমান্ডার ও আরআই উপস্থিত হন। প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে মাইকে বলা হয়, আজকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্যারেড মাঠ পরিদর্শনে আসবেন। মাইকে সকল কোম্পানির প্রশিক্ষণার্থীদের সুশৃঙ্খলভাবে গেইম প্যারেড করার জন্য বলা হয়। এই নির্দেশনা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনি উচ্চ স্বরে হইচই করতে থাকেন এবং আপনার উসকানিমূলক কথাবার্তায় অন্যান্য ক্যাডেট উত্তেজিত হয়ে হইচই করেন। আরআই আপনাকে শান্ত থাকার জন্য নির্দেশনা দেন এবং ঘটনার বিষয়টি এএসপি (পিটি) এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (ফিল্ড) মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্যারেড গ্রাউন্ডে আসার জন্য জানান। ফোন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এএসপি (পিটি) এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ফিল্ড) প্যারেড মাঠে আসেন এবং আপনাকে শান্ত থেকে সুশৃঙ্খলভাবে প্যারেড অনুশীলন করার জন্য দিকনির্দেশনা দেন। গেইম প্যারেড চালু হওয়ার সময় আপনার উসকানিতে অন্যান্য প্রশিক্ষণার্থী ক্যাডেট কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে দৌড়ে না গিয়ে হেঁটে হেঁটে চলতে থাকে এবং শান্ত না হয়ে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘মাঠে আপনার এই ধরনের শৃঙ্খলাবিরোধী আচরণ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির নিয়মশৃঙ্খলার পরিপন্থী মর্মে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সিএএসআই একাডেমির প্রিন্সিপাল (অতিরিক্ত আইজিপি) বরাবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেন এবং তাঁর লিখিত প্রতিবেদনে সারদার সংশ্লিষ্ট কোম্পানির প্লাটুন কমান্ডার, কোম্পানি তদারকি অফিসার, আরআই, এএসপি (পিটি), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ফিল্ড), পুলিশ সুপার (ফিল্ড) ও অতিরিক্ত ডিআইজি (বেসিক ট্রেনিং) স্বাক্ষর করেন। আপনার শৃঙ্খলাভঙ্গ–সংক্রান্ত বিষয়টি পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সারদার ভাইস প্রিন্সিপাল (ট্রেনিং উইং) অগ্রগামী করেন।’
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ‘আপনার এহেন কার্যকলাপের প্রেক্ষিতে ১৯৪৩ সনের পিআরবি বিধি 741-iii উপবিধি b (iii) মোতাবেক আপনাকে কেন চলমান মৌলিক প্রশিক্ষণ হতে অব্যাহতি প্রদান করা হবে না, তার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা এ কৈফিয়ত তলবনামাপ্রাপ্তির পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে দাখিলের জন্য আদিষ্ট হয়ে নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
৪০তম ক্যাডেট এসআই ব্যাচে প্রশিক্ষণের জন্য মোট ৮২৩ জন এসআই ছিলেন। তাঁরা গত বছরের ৪ নভেম্বর থেকে সারদায় বনিয়াদি প্রশিক্ষণ শুরু করেন। মাঠে ও ক্লাসে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ তুলে তিন ধাপে ৩১৩ জন এসআইকে শোকজ করে একাডেমি। ইতিমধ্যে তাঁদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গত ২১ অক্টোবর ২৫২ জন, ৪ নভেম্বর ৫৮ জন এবং সর্বশেষ ১৮ নভেম্বর তিনজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এবার চতুর্থ ধাপে প্রায় একই ধরনের অভিযোগে আরও আটজনকে শোকজ করা হলো।
সূত্র: প্রথম আলো।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি