উড়োজাহাজ জব্দের খবর ‘বিভ্রান্তিকর': বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস
প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:৫১
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুবাই থেকে আসা বিমানের বোয়িং-৭৭৭ মডেলের উড়োজাহাজ থেকে ২০টি সোনার বার উদ্ধারের পর সেটি ‘কাগজে কলমে’ জব্দের কথা বলছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
ওই রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর জানিয়েছিল, প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা মূল্যের সোনা চোরচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে রজশাহী শহরের বোয়ালিয়ার আতিয়া সামিয়া নামের ২৩ বছর বয়সী এক নারীকে আটক করা হয়েছে। তিনি সোনার ব্যবসায় করেন।
অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিনহাজ উদ্দিন বলেন, বিমান বাংলাদেশের যে উড়োজাহাজে সোনা চোরাচালান হয়েছে সেটিও অভিযুক্ত।
শুল্ক গোয়েন্দার এই কর্মকর্তা বলেন, “প্রায় ৮ থেকে ৯ বছর আগে একই রকম অভিযোগে দুটো উড়জাহাজ জব্দ করার ঘটনা ঘটে। আমরা মূলত চোরচালানের বিষয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য উড়োজাহাজটি জব্দ করেছি।”
এরপর শুক্রবার বিমানের জনসংযোগ শাখা থেকে মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।
তাতে বলা হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জব্দ করেছে বলে একটি ‘বিভ্রান্তিকর সংবাদ’ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, যা বিমান কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
সোনা চোরাচালানের ঘটনায় যাত্রীকে আটকের পর চট্টগ্রামগামী অন্যান্য যাত্রীদের সেখানে নামার অনুমতি দেয়া হয়। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে যাত্রী নামানোর পরে ঢাকার অন্যান্য যাত্রীদের নিয়ে ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণ করে এবং পরবর্তীতে উড়োজাহাজটি যথারীতি যাত্রী নিয়ে রিয়াদের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বিমান দাবি করেছে, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ উড়োজাহাজ জব্দের বিষয়ে বিমানকে ‘কোন পত্র বা ডকুমেন্ট দেয়নি বা এ ধরণের কোন তথ্য জানায়নি”
আগেই সতর্ক করেছিল গোয়েন্দারা
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিনহাজ উদ্দিন জানিয়েছেন, চোরাচালানের বিষয়ে তারা আগেই দেশের চার এয়ারলাইন্সকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।
মিনহাজ উদ্দিন বলেন, “আমরা প্রায় মাস খানেক আগেই এ বিষয়ে দেশের চারটি এয়ারলাইন্সকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছি। কিন্তু, এরপরও উড়োজাহাজের বডিতে করে সোনা চোরাচালান হয়েছে। আমরা মনে করি ফ্লাইটের কর্মীদের সহায়তা ছাড়া এ ধরণের চোরাচালান সম্ভব না।”
গত ১১ নভেম্বর সংস্থাটির মহাপরিচালক সৈয়দ মুসফিকুর রহমানের স্বাক্ষরিত ওই চিঠি সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনসকে দেয়া হয়।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবতরণ করা বিভিন্ন উড়োজাহাজের মাধ্যমে চোরাচালানের উদ্দেশ্যে আনা স্বর্ণ আটক করে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এ সংক্রান্তে আটক করা স্বর্ণ কাস্টমস আইনের বিধান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। একই সঙ্গে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়।
কিন্তু যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিবেচনায় এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জাহাজগুলোকে অন্তর্বর্তীকালীন ছাড় দেয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, চোরাচালান করা স্বর্ণ অনেক ক্ষেত্রেই উড়োজাহাজের ভেতরে সিটের নিচে, বাথরুমে, বাথরুমের পাইপের নিচে, কেটারিং এরিয়া, ল্যাগেজ সংরক্ষণের জায়গায় লুকানো থাকে।
সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনসের নিজস্ব কর্মকর্তা কর্মচারী জড়িত না থাকলে এ ধরনের অপতৎপরতা সংঘটন সম্ভব হয় না। এর দায় এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।
এ ধরনের চোরাচালানের ঘটনা ঘটলে বিদ্যমান বিধিবিধান অনুযায়ী মামলাসহ প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনসগুলোকে সতর্ক করেছিল শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ