গণপিটুনি দিয়ে চুন-এসিড পানি পান করানোয় যুবকের মৃত্যু
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:০৮
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে চুন ও বালু মেশানো এসিড পানি পান করানোর পর এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় আরেক যুবক হাসপাতালে আছে। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমেদ।
তিনি বলেন, উপজেলার রাধানগর গ্রামে মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম হেলাল মিয়া (৩৫)। তিনি উপজেলার ঘোষগ্রামের মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে। গরু চোর সন্দেহে আটকের পর হেলালকে জনতা মারধর করে। এক পর্যায়ে আধা কেজি চুন পানিতে মিশানো হয়, তারপর এতে বালু দেয়া হয়। সেই মিশ্রণ হেলালকে জোর করে খাওয়ানো হয়। বুধবার সকাল ৬টার দিকে হেলাল বমি করে; তখন তার নাক দিয়ে সাদা পানি বের হয়েছিল। বারবার বাথরুম হচ্ছিল। পরিবারের লোকজন জানিয়েছে, তখন তার পায়খানার সঙ্গে রক্তও গেছে। তারপর তিনি মারা গেছেন।
ওসি সরকার তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমরা দোষীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। পুলিশ, ডিবি মিলে অভিযান চলছে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা খুবই খারাপ, এর সঙ্গে যারাই জড়িত, তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত উপজেলার চারগ্রাম চাতল হাওরের এক যুবককে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উপজেলার ডৌবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য হাফিজ উল্লাহ বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) আমি দোকানে আসার পর শুনি দুইজন চোর আটক করা হয়েছে। তাদের খুব মারধর করা হয়। পরে রাতেই তাদের স্বজনদের কাছে সমজিয়ে (বুঝিয়ে) দেয়া হয়। সকালে মেডিকেল (হাসপাতালে) নেয়ার পথে হাকুরবাজারে হেলাল মারা গেছে। আর ওসমানী হাসপাতালে গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে চারগ্রাম চাতল হাওরের একজনকে। তার স্বজনরা জানিয়েছে, অবস্থা বেশি ভাল না। আমরা শুনেছি, তাদের খুব বেশি মারধর করা হয়। পরে চুন আর বালু পানিতে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছে। আটকের পর পুলিশ তাদের ছাড়িয়ে আনতে দুইবার গিয়েছিল; কিন্তু তাদের কাছেও দেয়া হয়নি।
ডৌবাড়ী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওর্য়াডের সদস্য নিজাম উদ্দিন বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) ১০টার দিকে আমার কাছে পুলিশের দারোগা (এসআই) ফোন দিয়ে জানিয়েছেন, দুজন গরু চোর ধরা হয়েছে। একজন চারগ্রামের, আরেকজন ঘোষগ্রামের। পরে সাবেক মেম্বার বাবুলও আমাকে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে যেতে বলেন। এর মাঝে আমি খবর পেয়েছি, তাদের মারধর করে চুন, বালু ও গাড়ির ব্যাটারির এসিড পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছে। আমি এসব জানার পর আর যাইনি ঘটনাস্থলে। তাদের বলেছি, মানুষ মেরে ফেলেছ, এখন আমি এসে আর কী করব? ওসমানীতে ভর্তি যুবকের অবস্থাও ভালো না, সে মারা যাবে মনে হয়।
ঘটনাস্থলে পুলিশ যাওয়ার বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমাদের খবর দেয়া হয়েছিল তাদের ছেড়ে দেয়ার পর। থানা থেকে পুলিশ যাওয়ার পর গ্রামবাসী জানিয়েছে, আহতদের স্বজনরা তাদের নিয়ে গেছে। এর আগে থানা পুলিশকে কিছু জানানো হয়নি।
সূত্র বিডি নিউজ
বাংলাদেশ জার্নাল/কেএইচ