ভরা মৌসুমেও অস্থির হয়ে উঠছে দিনাজপুরে চালের বাজার
সুলতান মাহমুদ, দিনাজপুর
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:৫১
আমনের ভরা মৌসুমেও দিনাজপুরে চালের বাজার আবারো অস্থির হয়ে উঠছে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষেরা চাল ক্রয় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা। কোন কোন চালে আবার ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর বস্তা হিসেবে ২৫ কেজির বস্তায় ১০০ টাকা এবং ৫০ কেজির বস্তায় ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
জিরাসাইল চাল এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭৫ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। নাজির সাইল আগে ছিল ৮০ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৪ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে। বিআর২৮ চাল ছিল ৬২ টাকা, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৬৮। বি আর ২৯ চাল এক সপ্তাহ আগে ৫৮ থেকে ৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।। গুটি স্বর্ণ এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা কেজি, এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকা কেজি।
আকস্মিক চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ চাল কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন।
দিনাজপুর বাহাদুর বাজারের এন এ মার্কেটে চাল কিনতে আসা মিজানুর রহমান নামে একজন খুচরা ক্রেতা জানান, চালের দাম গত এক সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। এই ভরা মৌসুমেও যদি এভাবে দাম বাড়লে আমার মত মানুষের পক্ষে পরিবার পরিচালনা করা খুব কষ্টকর হচ্ছে। কারণ আমি ছোট চাকরি করি। আমার বেতন বাড়েনি কিন্তু চারসহ অন্যান্য জিনিসের দাম বাড়েছে। এমন আমরা চলবো কিভাবে?
মোঃ নাসিম নামে এক ক্রেতার সাথে কথা হয় তিনি বলেন, চালের দাম বাড়ছে, এভাবে আরো বাড়লে আমাদের পক্ষে সংসার চালানো সম্ভব হবে না। বাজারে যে পরিমান টাকা নিয়ে আসি তা দিয়ে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করার আগেই টাকা শেষ হয়ে যায়। ফলে অনেক সময় কেনাকাটা সংক্ষিপ্ত করে বাড়ি চলে যেতে হয়।
অটোচালক বশির আহমেদ বলেন সারাদিন অটো চালিয়ে ৬০০ টাকা আয় হয়। এর মধ্যে অটো রিক্সার মালিককে জমা দিতে হয় ৩৫০ টাকা আর বাকি ২৫০ টাকা দিয়ে চাল, ডাল, লবন, তেল, সবজি কিনে বাড়িতে গেলে হাতে কিছু থাকে না। যেভাবেই প্রতি সপ্তাহে চালের দাম বেড়েছে। এতে আমাদের মত নিম্ন আয়ের মানুষেরা জীবন ধারণ করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
দিনাজপুর বাহাদুর বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা মো. নবাব আলী জানান , মিল থেকে বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে এই চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, একসময় যারা ২৫ কেজি ৫০ কেজির বস্তায় ক্রয় করতো এখন তারা তিন থেকে পাঁচ কেজি চাল করে নিয়ে যাচ্ছে।
দিনাজপুর বাহাদুর বাজারের পাইকার চাল ব্যবসায়ী মো. শহিদুল ইসলাম জানান, আকস্মিক চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের বিক্রি অনেক কমে গেছে। ক্রেতা চাল কিনতে এসে দাম বেশী হওয়ায় কিছু ক্রেতা অল্প পরিমাণে চাল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
দিনাজপুর বাহাদুর বাজারের চাল ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর বলেন, চালের দাম আর কমবে না, তবে চাল আমদানি করা হলে চালের দাম স্থিতিশীল হতে পারে এবং দাম কিছুটা কমতে পারে।
দিনাজপুরের দরদি অটো রাইস মিল স্বত্বাধিকারী মো. আবু বকর সিদ্দিক জানান, চালের বাজারে কোন সিন্ডিকেট নেই। আমাদেরকে বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। এ কারণে চালের দাম বেড়ে গেছে। ধানের ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ছে কেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, কয়েক দফা বন্যার কারণে ধানের আবাদ অনেক কম হয়েছে। তাই ধানের দাম বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ চাল মিল মালিক সমিতির সহসভাপতি শহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন বলেন, আমন মৌসুমে ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে। তবে বাজারে এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত ধান উঠছে না। কৃষকেরাই তাদের প্রয়োজন মতো ধান বিক্রি করছে। ফলে বাজারে মিলাদের ধানের চাহিদা চেয়ে সরবরাহ কম। এই কারণেই বেশি দামে ধান ক্রয় করতে হচ্ছে। ফলে চালের দাম একটু বেশি। ধানের সরবরাহ বেশি হলেই চালের দাম কমে আসবে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি