জামালপুরে হাসিনার বিচারের দাবির সমাবেশে জনতার ঢল
আকরাম হোসেন, জামালপুর থেকে
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:২২
ছাত্র-জনতার উপর নির্ভয়ে গুলি চালিয়ে গণহত্যাকারীর হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচারের দাবিতে জামালপুরে সমাবেশ করেছে বিএনপি। সমাবেশে জেলার সর্বস্তর মানুষের ঢল নামে। সমাবেশ থেকে শেখ হাসিনার বিচারের দাবি জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) জামালপুরেন দেওয়ানগঞ্জ সরকারি হাইস্কুল মাঠে এ সামবেশ হয়। সমাবেশের আয়োজন করে দেওয়ানগঞ্জ ও বকশিগঞ্জ উপজেলা, পৌর বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন।
সমাবেশ কেন্দ্র করে এদিন দেওয়ানগঞ্জের আশপাশের এলাকায় খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসতে দেখা যায়। সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও থানা থেকে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে নেতাকর্মীরা রঙ-বেরঙের টি-শার্ট, ক্যাপ পরে নেতাদের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশে আসেন। মিছিল থেকে নেতাকর্মীরা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচারের দাবি জানান। উপজেলার বিভিন্ন সড়কে গণহত্যার শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে নানা বিলবোর্ড ও ব্যানার টানানো হয়। দীর্ঘদিন পর ভয়হীনভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে পেরে সবার মুখে তৃপ্তির হাসি। বেলা বাড়ার সাথে সাথে উৎফুল্ল জনতার সব মোহনায় যেন স্কুল মাঠ।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও দুপুর ১টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়। সন্ধ্যা সোয়া ৫ টায় সমাবেশ শেষ হয়। সমাবেশে শেষে মাগরিবের নামাজের বিরতি দেয়া হয়। রাতে জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী ইথুন বাবুর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আগামীতে শান্তি ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য দলের অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা একসাথে থাকতে চাই। সুখি হতে চাই ,শান্তিতে থাকতে চাই। তাই আজ আমাদের অঙ্গীকার হোক, আমরা একসাথে ছিলাম, একসাথে থাকবো। আগামীতে সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়বো।
তিনি বলেন, এখন সকলে মুক্তি চায়, পরিবর্তন চায়। যেমন পেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার আমলে, সবাই এখন গণতন্ত্র চায়। হাসিনার স্বৈরাচারের পতন হয়েছে কিন্তু এখনও গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা তখনই হবে, যখন ভোট দিয়ে জনগণ তার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই জনগণের হয়ে কাজ করবে।
‘আমি কী এমন করেছি, আমাকে দেশ ছাড়তে হলো’- শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খান সোহেল বলেন, এক এগারোর সময় বেগম খালেদা জিয়া আপনার মুক্তির জন্য বিবৃতি দিয়েছেন, আর আপনি? ক্ষমতা এসে তার বাড়ি কেড়ে নিলেন। এক কাপড়ে তার স্মৃতি বিজরিত বাড়ি থেকে বের করে দিলেন।
তিনি বলেন, যারা আমাদের গর্বের সেনাবাহিনীর ৫৭ কর্মকর্তাকে হত্যা করেছেন, অথচ হত্যাকারীদের সাথে আপনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা চায়ের আড্ডায় কাটিয়েছে। আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন কী অপরাধ করেছেন? ৫৭ জন সেনা অফিসারের সন্তানদের জিজ্ঞাস করুন আপনি কী অপরাধ করেছেন? শাপলা চত্বরে পাখির মত মানুষ হত্যা করেছেন। এর কী জবাব দিবেন? ক্ষমতায় থাকার জন্য ১৫ দিনে ১৫০০ মানুষকে হত্যা করেছেন। পাখির মত গুলি করে হত্যা করেছেন আবু সাঈদ-মুগ্ধর বাবা মাকে জিজ্ঞাস করুন আপনি কি অপরাধ করেছেন?
বিএনপির এই নেতা বলেন, শেখ হাসিনা হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছেন। আপনার কী হওয়া উচিৎ? উপস্থিত জনতা সমস্বরে বলে উঠে ‘ফাঁসি', ‘শেখ হাসিনার ফাঁসি চাই’।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত বলেন, আমাদের মধ্যে কিছু বিভেদ থাকতে পারে কিন্তু বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্ব আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ, আমরা সবাই এক। আগামীতেও ঐক্যবদ্ধ থাকবো।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের ও তাদের পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের জামালপুর ১৭ জন শহীদ হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা শহীদদের পরিবারের পাশে আছি। আগামীতে জনগণের ভোটে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নামকরণ করা হবে তাদের নামে।
এছাড়াও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এ এস এম আব্দুল হালিমসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতারা।
বাংলাদেশ জার্নাল/এএইচ/কেএইচ