সার সংকটে নাকাল কৃষক, মানতে নারাজ মন্ত্রণালয়
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৪
রবি শস্য চাষ করতে গিয়ে কৃষক চাহিদা মত এবং সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার না পাওয়ার অভিযোগ করছেন। সারের অভাবে বিশেষ করে আলু চাষিরা জমি তৈরি ও বীজ বপন করতে পারছেন না। ফলে অনেকে সরিষাসহ অন্য ফসলের চাষ করছেন।
রাজশাহীর পবা উপজেলার চাষি মাহবুবুর রহমান বলেন, আলুর চড়া দামের কারণে এবার ফসলটি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে। কিন্তু বীজ সংকটের মধ্যে সারের সরবরাহ কম পাওয়া নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায়।
সারের সবচেয়ে বেশি চাহিদা হয় বোরো মৌসুম; ওই মৌসুম শুরুর আগে রবি মৌসুমেই খুচরা বিক্রেতা ও পরিবেশকরা বলছেন, পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের দাবি, কিছু পরিবেশক ‘দুষ্টুমি’ করছেন, বড় কোনো সংকট নেই।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন-বিএডিসির সারের পরিবেশক মেসার্স হিমেল ট্রেডার্স চলতি মাসে ৪৫ টন ডিএপি, ২৮ টন এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) ও ২০ টন টিএসপির বরাদ্দপত্র পেয়েছেন। কিন্তু ১ ডিসেম্বর ৭ টন ডিএপি, ৮ জন এমওপি ও ৫ টন টিএসপি সার পাওয়ার পর আর সরবরাহ আসেনি।
হিমেল ট্রেডার্সের মালিক হুমায়ুন কবির বলেন, তাদেরকে বলা হয়েছে গুদামে সার নেই। সব পরিবেশকের একই পরিস্থিতিতে পড়ার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, “ডিলাররা কৃষকের রোষানলেও পড়ছেন।”
আলু, সবজি, ডাল ও তেলবীজ চাষের জন্য প্রসিদ্ধ উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলাতে খোঁজ নিয়ে প্রতিটিতেই চাহিদা অনুযায়ী সার সংকটের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। কোথাও কোথাও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বস্তায় ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি টাকা আদায়ের অভিযোগ করছেন কৃষক।
তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমাম বলেন, কিছু খুচরা ডিলার ‘দুষ্টামি’ করছে। সরকার বিএডিসি ও বিসিআইসির (বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প করপোরেশন) মাধ্যমে আর কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সার সরবরাহ করে। এরপর এগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয় ডিলারদের কাছে। তাদের কাছ থেকে কিনে নেয় ‘খুচরা ডিলাররা’।
তিনি বলেন, তারা একটা সংকট তৈরি করে, তবে সবাই না, কিছু ডিলার। বেশি দামে বিক্রি করার জন্য, এটা পুরোটাই উদ্দেশ্যমূলক। তারা কৃষকদের মধ্যে এক ধরনের প্যানিক তৈরি করছে যে, সার নেই, সার শেষ হয়ে যাবে।”
প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা নিয়মিত গুদাম পরিদর্শন করছে দাবি করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এই অতিরিক্ত সচিব বলেন, “যারা অনিয়ম করছে তাদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে, জরিমানা করা হচ্ছে।”
বিএডিসির চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন খানকে ফোন দিলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ সংস্থার মহাব্যবস্থাপক (সার ব্যবস্থাপনা) মো. আজিম উদ্দিনকেও মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
চাহিদার অর্ধেক বরাদ্দও যায়নি রাজশাহীতে
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের রাজশাহীর উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা অবশ্য সংকটের কথা অস্বীকার করেননি। তিনি যে হিসাব দিয়েছেন, তাতে দেখা যায়, ডিসেম্বরের অর্ধেক চলে গেলেও চাহিদা ও জোগানের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়ে গেছে।
এ মাসে ডিএপি সারের চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছিল ১৭ হাজার ১২৭ টন, বরাদ্দ এসেছে আট হাজার ১২৪ টন’ এমওপির (পটাশ) চাহিদা ১৮ হাজার ৩৭২ টন, বরাদ্দ পাওয়া গেছে চার হাজার ২৭৮ টন, টিএসপির চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ২১৬ টন, বরাদ্দ পাওয়া গেছে দুই হাজার ৭৩৭ টন সার।
বরাদ্দ পাওয়া সারের একটি বড় অংশ আবার পরিবেশকদের কাছে যায়নি। ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন হাজার ২৫৪ টন ডিএপি, দুই হাজার ৩৬৪ টন এমওপি ও এক হাজার ৫৩৫ টন টিএসপি সরবরাহ করা হয়েছে পরিবেশকদের কাছে। ১৫ ডিসেম্বর জেলায় ২২১ টন ডিএপি, ২৩০ টন এমওপি ও ৪১৭ টন টিএসপি মজুদ ছিল।
“মজুদ না থাকায় বরাদ্দ করা সার ডিলারদের সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না”, বলেন এই কর্মকর্তা।
মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট এলাকার রায়হান আলী গত বছর ৮ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। সার সংকটের কারণে এবার তা নেমে এসেছে তিন বিঘাতে।
নির্ধারিত দামের তুলনায় প্রতি বস্তায় ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দিয়েও সার পাওয়া যায়নি বলে বাকি জমিগুলোতে সরিষার আবাদ করতে হয়েছে, বলেন তিনি।
চাষি পর্যায়ে ৫০ কেজির এক বস্তা ডিএপি সারের সরকার নির্ধারিত দাম ১ হাজার ৫০ টাকা। কিন্তু রাজশাহীতে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। চাষি পর্যায়ে প্রতি বস্তা টিএসপির নির্ধারিত দাম ১ হাজার ২৫০ টাকা; কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা।
৫০ কেজির এক বস্তা এমওপি সারের সরকারি দাম ১০০০ টাকা; কিন্তু রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় বর্তমানে এক বস্তা চাষিদের কিনতে হচ্ছে ১৩৫০ থেকে ১৪০০ টাকায়।
বাগমারার তালতলি বাজারের খুচরা সার বিক্রেতা ইব্রাহীম হোসেন বলেন, গত শুক্রবার পরিবেশক ডিএপির বস্তা ১ হাজার ৩৫০ টাকা, টিএসপি ১ হাজার ৬৫০ টাকা ও এমওপি ১ হাজার ২০০ টাকা দাম রেখেছেন। গাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য খরচ বাদে তিনি বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা করে লাভ করছেন।
বিএডিসির পরিবেশক হাসান আলী বলেন, “চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম। উপরন্তু সরবরাহ ঠিকঠাক পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় প্রভাবশালীরাও বেশি পরিমাণে সার নিতে চাপ দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে সার নিয়ে এবার বিপাকে রয়েছে ডিলাররাই।”
বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী শাখার সভাপতি আবু কালাম বলেন, গুদামে যদি সার থাকে তা হলে কৃষক বরাদ্দ অনুযায়ী পায়। কিন্তু গুদামেই তো সার নেই। পরিবেশকরা পাবে কেমনে আর কৃষকদের দেবে কীভাবে?
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের রাজশাহী কার্যালয়ের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, যেটি বরাদ্দ পাওয়া গেছে, পরিবেশকরা ঠিকঠাক মতো সেটি কৃষকদের দিচ্ছে কিনা তা আমরা নিবিড় তদারকিতে রেখেছি। বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাড়তি দামের প্রতিবাদ করলে ‘সার দেয় না’ রংপুরে
রংপুর সিটি করপোরেশনের ৯নং ওয়ার্ডের চিলমন গ্রামের কৃষক আমিনুর রহমান ৭০ শতক জমিতে আলু রোপণ করছেন। টিএসপির প্রতি বস্তায় তাকে ৬৭০ টাকা, পটাশের প্রতি বস্তা ১২০ টাকা এবং ডিএপি সারে ১০০ টাকা বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে।
চওড়ার হাট এলাকার আলু চাষি মুরাদ হোসেন বলেন, “আমি ২০ দোন (২৯ শতকে এক দোন) আলুর আবাদ করছি, ঠিক মত সার পাচ্ছি না। ডিলার চাহিদামত দেয় না। আবার বাইরে কিনতে গিলে অনেক বেশি দামে নিতে হয়।”
সদর উপজেলার মমিনপুর গ্রামের বর্গাচাষি মঞ্জু মোল্লা বলেন, ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা সংকটের কথা বলেন। তবে দাম বেশি দিলেই পাওয়া যায়।
কৃষকের তথ্য বলছে, বাড়তি দাম রসিদে লেখেন না বিক্রেতা, প্রতিবাদ করলে ‘সার বেচবেন না’ বলে রাগ দেখান।
৯ নং ওয়ার্ডের মজিদ মার্কেট বাজারের সার বিক্রেতা সোহেল মিয়া বলেন, ডিলাররা সরকার নির্ধারিত দরে আমাদেরকে দিচ্ছে না। এ কারণে বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। টিএসপির সরবরাহ নিয়েই সংকট বেশি বলে জানাচ্ছেন এই বিক্রেতা।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বিএডিসির একজন পরিবেশক বলেন, আমন ধান কাটার পর কৃষক বিভিন্ন রবি শস্যের চাষ শুরু করেন। এ কারণে অন্য সময়ের চেয়ে টিএসপি, পটাশ ও ডিএপি সারের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এই সময়ে বরাদ্দ স্বাভাবিক সময়ের মত থাকে। তাই এই সংকট।
বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প করপোরেশন-বিসিআইসির পরিবেশক সাইদুল হকের প্রতিনিধি মাহফুজার রহমান বলেন, কৃষকরা সময় মত সার পাচ্ছে না, কারণ, আমাদেরকে তো সরকারের গুদাম থেকে তুলতে সময় লাগে। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম, তার ওপর যেভাবে আলু চাষ করছে তাতে করে তো একটু সংকট দেখা দিতে পারে।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল সংকট স্বীকার করেন না। তিনি বলেন, বিসিআইসির ১০৫ জন ও বিএডিসির ২০০ জন পরিবেশকের মাধ্যমে জেলায় সার সরবরাহ করা হয়। তাদের ওপর আমাদের নিয়মিত মনিটরিং আছে। কোথাও অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
গাইবান্ধায় কেজিপ্রতি দাম বেশি ৫ থেকে ১৩ টাকা
প্রতি কেজি টিএসপি ২৭ টাকায় ও এমওপি ২০ টাকায় পাওয়া যাওয়ার কথা চাষিদের কিন্তু গাইবান্ধায় টিএসপি ৩২ থেকে ৪০ টাকায়, এমওপি কিনতে হচ্ছে ২২ থেকে ২৫ টাকা দরে। তবে ডিএপির তেমন সংকট এখানে নেই।
চলতি রবি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু, মিষ্টি আলু, ভুট্টা, গম, সরিষা, তিল, সূর্যমূখী, বাদাম, কলা, ডাল, শাকসবজি, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন ও মসলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে কৃষি বিভাগ।
এর বিপরীতে ২৫ হাজার ৭২০ টন টিএসপি ও ৪১ হাজার ৪৪১ টন পটাশের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৪৭৮ টন টিএসপি ও ১২ হাজার ৩৭৬ টন এমওপি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
গাইবান্ধা সদরের বল্লমঝাড় ইউনিয়নের তালুকমন্দুয়ার গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম ৭০ শতক জমিতে আলু রোপণ করছেন। টিএসপির ১ হাজার ৩৫০ টাকার বস্তা তাকে কিনতে হয়েছে ২ হাজার ২০ টাকায়, ১ হাজার টাকার এমওপি ১ হাজার ১২০ টাকা এবং ডিএপি সারের বস্তা ১ হাজার ৫০ টাকার জায়গায় কিনতে হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকা।
জাতীয় কৃষক সমিতির সাদুল্লাপুর উপজেলার সভাপতি কামরুল ইসলাম বলেন, সার কিনতে গেলে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা সংকটের কথা বলেন। তবে দাম বেশি দিলেই সার পাওয়া যায়। কিছু কিছু পরিবেশক মূল্য তালিকা টাঙিয়ে রাখলেও সেই অনুযায়ী বিক্রি করছেন না বলেও অভিযোগ তার।
কেন বেশি করে বিক্রি করছেন- এই প্রশ্নে সাদুল্লাপুর বাজারের খুচরা বিক্রেতা বেলাল মিয়া বলেন, ডিলাররা সরকার নির্ধারিত দরে আমাদেরকে সার দিচ্ছেন না। এ কারণে বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
বিএডিসির একজন পরিবেশক বলছেন, নভেম্বর মাসের সারও এখনও অনেককে সরবরাহ করা হয়নি।
বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম রিপন বলেন, জেলায় টিএসপির চাহিদা বেশি, কিন্তু ডিএপি সারের বরাদ্দ বেশি। এ কারণে টিএসপির সংকট হয়েছে।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা শাখার উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম সংকট মানতে রাজি নন। তিনি বলেন, সাদুল্লাপুর, গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীতে একাধিক পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
‘ছোটদের’ ওপর দায় দিচ্ছে জয়পুরহাটের পরিবেশকরা
জয়পুরহাটেও সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার কিনতে পারছে না কৃষক। এ বিষয়ে প্রশাসনের কার্যকর কোনো উদ্যোগও নেই।
আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর এলাকার আলুচাষি মোজাফফর রহমান বলেন, বস্তাপ্রতি দুই থেকে তিনশ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। ইউএনও আসলে সার ব্যবসায়ীরা লাইন ধরে সরকারি দামে বিক্রি করে, চলে গেলে বেশি টাকা নেয়।
কালাই উপজেলার শালগুন গ্রামের সরিষা চাষি আলী আহম্মেদ, পাঁচবিবি উপজেলার শিমলতলী এলাকার গম চাষি মন্তেজার রহমান ও লতিরাজ কচু চাষি বেলাল হোসেনও একই ধরনের অভিযোগ করেছেন।
তবে সারের পরিবেশকরা বিষয়টি স্বীকার করতে নারাজ।
শহরের বাটার মোড় এলাকার পরিবেশক গোলাম রাব্বানী ও হানাইল এলাকার বিক্রেতা গোলজার হোসেন দাবি করেন, তারা সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি করছেন। দুজনেরই দাবি, মৌসুমের শুরুতে সার সংকট ছিল, এখন নেই। তবে ‘ছোট ব্যবসায়ীরা’ দাম বেশি নিচ্ছেন বলে স্বীকার করেছেন তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা শাখার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শহীদুল ইসলাম সংকট স্বীকার করতে নারাজ। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে প্রথম পর্যায়ে ৩১ হাজার ২৯৮ টন সার বরাদ্দ এসেছে। এর পরও যেন ঘাটতি না হয় সেজন্য আরও ১৫ হাজার ৭০০ টন বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। কেউ যদি ‘সিন্ডিকেট করে’ এসব বিক্রি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি।
লালমনিরহাটে সংকটের ‘কারণ’ তামাক চাষ
জেলার ৫টি উপজেলার ৩টিতে বড় পরিসরে তামাক চাষ হয়। পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধায় ভুট্টার আবাদ হয়।
কৃষকরা বলছেন, তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগ থেকে সার বরাদ্দ দেয়া হয় না। কিন্তু চাষিরা বাড়তি দর দিয়েও বিপুল পরিমাণ সার কিনে থাকেন। ফলে অন্য ফসলের জন্য সারের ঘাটতি দেখা যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের উপ পরিচালক সাইফুল আরেফিন দাবি করেছেন, কিছু ব্যক্তি ‘গুজব’ ছড়িয়ে সংকট তৈরি করছিল। তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।
গত ৫ ডিসেম্বর আদিতমারী বাজারে অবৈধভাবে মজুদ করা ১৫৪ বস্তা ও ১২ ডিসেম্বর আরাজী দেওডোবা গ্রামের একটি বাড়ি থেকে ৩৩১ বস্তা সার জব্দ করা হয়।
বিসিআইসির একজন পরিবেশকের দাবি, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে জেলার কোনো পরিবেশককে সার বরাদ্দ দেয়া হয়নি। ওই সময়টাতে শুধু বিএডিসি থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে সেটিও লালমনিরহাটে পৌঁছাতে সময় লেগেছে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত।
গত ৮ ডিসেম্বর থেকে ডিএপি সার বগুড়া বাফার এবং এমওপি সার দিনাজপুরের বিরল গোডাউন থেকে লালমনিরহাট জেলার ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে।
আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, কৃষকের ন্যায্য মূল্যে সার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে কৃষি বিভাগ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রওজাতুন জান্নাত বলেন, অবৈধ ব্যবসায়ী ও মজুদদারদের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে আসছি। সারের বিষয়ে কোনো রকম অনিয়ম সহ্য করা হবে না।
অবৈধ মজুদ ও অতিরিক্ত দাম রোধে স্থানীয় কৃষি বিভাগ এবং উপজেলা প্রশাসনকে তথ্য দেয়ার পরামর্শ দিয়ে লালমনিরহাটের ডিসি এইচএম রকিব হায়দার বলেন, জেলায় সারের কোনো সংকট নেই।
সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
বাংলাদেশ জার্নাল/এনবি/ওএফ