ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ আপডেট : ৬ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

খানসামায় দলবেঁধে রসুনের বীজ রোপণে ব্যস্ত চাষিরা

  সুলতান মাহমুদ, দিনাজপুর

প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:২২

খানসামায় দলবেঁধে রসুনের বীজ রোপণে ব্যস্ত চাষিরা
চাষ করা মাটিতে দলবেঁধে রসুনের খোয়া রোপণ করছেন চাষিরা। ছবি: প্রতিবেদক

রাসায়নিক ও জৈব সার মিশিয়ে ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করে প্রস্তুত করা হয়েছে। সেই প্রস্তুতকৃত জমিতেই পুনরায় লাঙ্গল দিয়ে লাইন টানা হয়েছে। দলবেঁধে নারী-পুরুষেরা টপাটপ চাষ করা মাটিতে রসুনের খোয়া রোপণ করছেন। আর সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। আবার পেছন থেকে রসুনের খোয়া মাটিতে রোপণ করার পর পেছন দিক থেকে মই দিয়ে টেনে মাটি সমান করে দিচ্ছেন কেউ। ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই এই সাদা সোনা খ্যাত রসুন চাষের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায়।

জেলার অন্য উপজেলাতে রসুন চাষ হলেও খানসামা উপজেলায় রসুন চাষের দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে। এই উপজেলায় রসুন চাষ করে অনেক চাষীর স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প রয়েছে। অন্য ফসলের তুলনায় প্রতি বছর এই উপজেলায় রসুন চাষ বাড়ছে। ডিসেম্বর মাস রসুন বপনের উপযুক্ত সময় হওয়ায় এই এলাকার নারী পুরুষেরা দলবেঁধে রসুন রোপণ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে খানসামা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১৬৮৪ হেক্টর জমি।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ১২০৫ হেক্টর জমি। রসুন চাষে লাভ হওয়ায় গত কয়েক বছরে এই উপজেলায় রসুন চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে।

উপজেলার ছাতিয়ানগড়, বালাপাড়া ও গোয়ালডিহি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আমন ধান কর্তন ও মাড়াই শেষে রসুন চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করা হয়েছে। বীজ সংগ্রহ ও রোপণ কাজে পুরোদমে পুরুষদের সাথে নারীরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন।

খামারবাড়ি গ্রামের চাষী মোশারফ হোসেন বলেন, আমাদের এই এলাকায় আমন ধান কাটার পরপরই রসুন চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করা হয়। এবছর রসুনের বীজ, সার, কীটনাশকের দাম বেশি। তারপরও আমি আরও এক বিঘা জমি বেশি চাষ করছি। কারণ রসুন চাষ করে বিক্রি করলে একসাথে বেশি টাকা লাভবান হওয়া যায়।

গোয়ালদীঘি শিমুলতলী গ্রামের রিসাত শাহ বলেন, এবছর ৫০ শতক জমিতে রসুনের বীজ, সার, সেচ, হাল ও পরিচর্যা বাবদ খরচ হবে প্রায় ৯০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। আর প্রতি ৫০ শতক জমিতে ফলন হয় ৫০-৬০ মণ। প্রতি মণ রসুনের দাম হবে ৭ থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। লাভ হবে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা, এজন্য আমরা এই রসুন চাষে আগ্রহী।

দক্ষিণ বালাপাড়া এলাকার কৃষক সাব্বির হোসেন বলেন, অন্য ফসলের চেয়ে রসুন অত্যন্ত লাভজনক। এজন্য পূর্বের মত এবছরও দেড় বিঘা জমিতে রসুন রোপণ করছি। রোপণের জন্য প্রতি বিঘায় ৭-৮ মণ রসুনের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে ভালো রসুনের বীজ ৭-৯ হাজার টাকা পর্যন্ত কিনছি। আশা করি ভালো আবহাওয়া ও ভালো ফলন পেলে চলতি মৌসুমে দেড় বিঘা জমিতে দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাভ হবে।

কৃষাণী ময়মনা বেগম বলেন, আমরা সকাল থেকেই সাত জন নারী রসুন বপন করছি। এতে আমাদের প্রতিদিন হাজিরা ৫০০ টাকা আয় হচ্ছে। ফলে আমার পরিবার নিয়ে ভালোভাবে চলতে পারছি।

খামারপাড়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শ.ম. জাহিদুল ইসলাম বলেন, রসুনের ভালো ফলন পেতে কৃষকদের পরামর্শ ও সহায়তা প্রদানে আমরা কাজ করছি। এতে করে এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে রসুন চাষের আগ্রহ বাড়ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, খানসামা উপজেলায় রসুন আবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গত মৌসুমেও ভালো দাম পাওয়ায় এবছর লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অধিক জমিতে রসুন চাষের লক্ষ্য রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবছরও রসুনে ভালো ফলন পাবেন কৃষক। এইজন্য পরামর্শ প্রদানে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাঠে রয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত