রাজশাহী
সমন্বয়ককে হাতুড়িপেটার অভিযোগ অস্বীকার ছাত্রদলের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:০৭
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী কলেজের সমন্বয়ক সোহেল রানাকে হাতুড়ি ও বাঁশ দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে। দুই দফা হামলায় আহত এই সমন্বয়ক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই হামলার শিকার হন রাজশাহী কলেজের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এই শিক্ষার্থী। পরে আহত অবস্থায় রিকশায় করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে যান সোহেল। তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের জয়, রুহুল আমিনসহ ২০-২৫ জন নেতা-কর্মী দু’দফায় তাকে ইচ্ছামতো পিটিয়েছেন।
সোহেল রানার এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুক্রবার দুপুরে নগরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে রাজশাহী নগর ছাত্রদল। সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ‘রাজশাহীর সমন্বয়ক’ সোহেল রানাকে ‘ভুয়া’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সোহেল রানাকে হাতুড়িপেটার অভিযোগ অস্বীকার করে তারা বলেছেন, এটা সমন্বয়কদের কমিটি গঠন নিয়ে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ।
এর আগে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সোহেল রানা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহীর নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন, রাজশাহীর পক্ষ থেকে বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। পরে সেটি কালেক্টরেট মাঠে নেওয়া হয়। ওই মাঠে গিয়ে তিনি আঁচ করেন, রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী তাকে ‘টার্গেট’ করছেন। হামলার আশঙ্কায় তিনি ওই মাঠ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাকে কয়েকজন মিলে মারধর করেন। এরপর তিনি চিকিৎসা নিতে একটি রিকশা নিয়ে হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিলেন।
তিনি আরও জানান, এ অবস্থায় আরেক দফা হামলার আশঙ্কায় তিনি বিকল্প পথেই হাসপাতালের দিকে রওনা দেন। তখন রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠের পাশে তাকে আবারও রিকশা থেকে নামিয়ে ২০-২৫ জন ছাত্রদল নেতাকর্মী তাকে পিটুনি দেন। হাতুড়ি ও বাঁশ দিয়ে তাকে ইচ্ছেমতো পেটানোর পর হামলাকারীরা চলে যান।
রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের জয়, রুহুল আমিনসহ ২০ থেকে ২৫ জন তাকে পিটিয়েছেন বলে অভিযোগ সোহেল রানার।
এদিকে ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নগর ছাত্রদলের সভাপতি আকবর আলী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজশাহীতে কোনো সমন্বয়ক পরিষদ গঠিত হয়নি। তবে রাজশাহী কলেজের যেসব শিক্ষার্থী এই আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকেছেন তাদের কেউ কেউ নিজেকে ‘রাজশাহীর সমন্বয়ক’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। সোহেল রানা তেমনই একজন।
তিনি বলেন, এখন কেউ কেউ ভুয়া সমন্বয়ক সেজে নিজের স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে জাসদ ছাত্রলীগ নেতা সোহেল রানা নিজেকে সমন্বয়ক হিসেবে দাবি করে রাজশাহী কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সে নিজেকে সমন্বয়ক হিসেবে দাবি করলেও স্পষ্টত সে জাসদ ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা।
আকবর আলী আরও বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে রাজশাহীতে নিজেদের মধ্যে দুটি পক্ষ বিরোধে জড়ায়। একপর্যায়ে তারা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সে ঘটনায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে সোহেল রানা রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের নামে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কুৎসা রটনা করেন, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হয়। অথচ ছাত্রদলের কোনো নেতা–কর্মী এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাকসুদুর রহমান, ছাত্রদল নেতা সুলতান আহমেদ, আদিউল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান, রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ, সদস্যসচিব আহমেদ রায়হান প্রমুখ।
এদিকে ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারে সোহেল রানা সাংবাদিকদের বলেন, ওরা নিজেরাই ভুয়া, আন্দোলনের সময় ওরা ছিল না। এখন মনে করছে ওরা ক্ষমতায় চলে গিয়েছে। ওরা ছাত্রলীগের মতো পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত হচ্ছে, যার কারণে আমার ওপর হাতুড়ি নিয়ে হামলা চালিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের এক দোসরকে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। আমরা সেটা আটকিয়েছি। কিন্তু ওই সময় রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলই ওই অধ্যক্ষের পক্ষ নিয়েছিল টাকা খেয়ে। তারা এখন প্রতিনিয়ত ছাত্রদের নির্যাতন করছে। সম্প্রতি আমারই এক ছোট ভাইকে ধরে নিয়ে গিয়ে ছাত্রলীগ ট্যাগ লাগিয়ে বেইজ্জতি করছিল। আমি গিয়ে রক্ষা করি। আমি যে তাদের বিরুদ্ধে একটা শক্তি, সেটা তারা মানতে পারছে না।
রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. শংকর কে বিশ্বাস জানিয়েছেন, সোহেল রানার শরীরে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এফএম