চাঁদাবাজ দল আবার আবির্ভূত, হাটবাজারে ইজারাদারদের জুলুম বন্ধ হয়নি: আনু মুহাম্মদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৭:৪৯
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, নতুন একটা চাঁদাবাজ দল আবার আবির্ভূত হচ্ছে। হাটবাজারে ইজারাদারদের জুলুম এখনো বন্ধ হয়নি। এ ব্যাপারে সরকারের সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনেক জায়গায় নতুন করে এই চাঁদাবাজি শুরু হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আশু করণীয় প্রস্তাব ১০০ দিনে কতটা বাস্তবায়ন হলো?’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ ও আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন এবং সদস্য অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা রিতু বক্তব্য দেন। কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সীমা দত্ত, চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান, গুম থেকে ফিরে আসা মাইকেল চাকমাসহ অনেকে এতে উপস্থিত ছিলেন।
আনু মুহাম্মদ বলেন, শহীদ, নিখোঁজ ও আহত ব্যক্তিদের পূর্ণ তালিকা এখনো কেন প্রকাশিত হয়নি, তা আমাদের বোধগম্য নয়। শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের দায়িত্ব এখনো গ্রহণ করা হয়নি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়েছে। কিন্তু মামলাগুলো সুনির্দিষ্ট না হওয়ার ফলে এটা সম্পর্কে আমাদের সংশয় আছে যে কতটা হবে। ১৫ বছরে দায়ের হওয়া মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা এখনো প্রত্যাহার হয়নি।...সংবিধান সংস্কার কমিশন অচিরেই একটা রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থিত করবে। তার ভিত্তিতে জনমত যাচাই করে একটা চূড়ান্ত রূপরেখা আমরা দেখতে পাব। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আরও অনেক কাজ করার বাকি আছে। ইতিমধ্যে বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। এগুলো সরকারের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, এবারের দুর্গাপূজা মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। তবে দলগত সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করার কাজটা হয়নি। এটা না হওয়ার কারণে ভারতের মোদি সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচার করছে। সরকার এ বিষয়ে যথাযথ তথ্য প্রকাশ ও এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ভারত কিংবা পতিত সরকারের পক্ষে এ সুযোগ নেওয়া সম্ভব হবে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ হয়নি উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, দ্রব্যমূল্য আসলে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই। তেল, ডিম ও পেঁয়াজের মতো পণ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায়, মাত্র কয়েকটা কোম্পানি এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। অনেক সময় কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়। এ জায়গায় সরকারের যথাযথ ভূমিকা দেখা যায়নি। ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার বা শেয়ার কারসাজির বিষয়ে বিগত সরকারের সময়ে হওয়া দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।
তিনি বলেন, অনেকগুলো সংস্কার আছে, যেটা দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার, সেটা নির্বাচিত একটি স্থায়ী সরকার ছাড়া বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে অনেকগুলো ভিত্তি তৈরি করতে পারে এই সরকার। সেটা বিভিন্ন কমিশন হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে তৈরি হবে। সেই প্রক্রিয়াটা চলতে পারে। কিন্তু নির্বাচনের ব্যাপারে একটি প্রস্তুতি বা পথনকশা বা উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। কবে নাগাদ নির্বাচন হবে, সেটার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা প্রয়োজন। যথাযথভাবে এই ঘোষণা না এলে, এটি যদি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে একটি অনাস্থা বা অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেটা থেকে বাঁচার জন্য একট সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ বা পথনকশা ঘোষণা করা উচিত বলে আম মনে করি।
তিনি আরও বলেন, কতদিনের মধ্যে নির্বাচন চাই, সেই তারিখটা তো নির্দিষ্ট করে আমরা বলতে পারবো না। তবে আমরা মনে করি, সব কাজই আপনি যদি গুরুত্বের সঙ্গে নেন এবং দক্ষতার সঙ্গে করেন তাহলে যত সময় লাগবে, গুরুত্বে সঙ্গে না নিলে তার থেকে বেশি সময় লাগবেই। আমি মনে করি, সরকার গুরুত্বের সঙ্গে এটি গ্রহণ করবে এবং যথা শিগগিরই সম্ভব সেই বিষয়ে জনগণকে পরিষ্কার বক্তব্য দেবে। নইলে একটি অনিশ্চয়তা তৈরির সম্ভাবনা আছে। আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছু অস্থিরতা দেখতে পাচ্ছি৷ সেগুল যাতে বন্ধ হয়৷ সেজন্য সরকারের এই উদ্যোগ নেয়া দরকার।
এর আগে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আশু করণীয়’ নিয়ে ১৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছিল গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে সেই প্রস্তাবগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে— সেই বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে আলোকপাত করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
এছাড়া আগামী শনিবার (২৩ নভেম্বর) বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘বৈচিত্রের ঐক্য’ নামের বাংলাদেশের সব শ্রেণিগত, ধর্মীয়, লিঙ্গীয়, জাতিগত, পেশাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মানুষের সমাবেশ হবে বলে জানান অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি