ঢাকা, শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

রাজনৈতিক সহিংসতায় অক্টোবরে নিহত ১২ জন, আওয়ামী লীগের ৯: এমএসএফ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:৪৮  
আপডেট :
 ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:৫৭

রাজনৈতিক সহিংসতায় অক্টোবরে নিহত ১২ জন, আওয়ামী লীগের ৯: এমএসএফ
ছবি: সংগৃহীত

অক্টোবর মাসে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৯ জনই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। বাকি নিহত ৩ জন বিএনপির। সেপ্টেম্বর মাসের মতো অক্টোবর মাসেও বিএনপির কর্মীদের অন্তর্দ্বন্দ্ব লক্ষণীয়ভাবে বেড়ে যাওয়ায় হতাহতের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এ কারণে নাগরিক জীবনে নিরাপত্তার বিষয়টি বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এছাড়া চলতি মাসে গণপিটুনিতে হতাহতের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে ঘটেছে। গণপিটুনির সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় জনমনে নিরাপত্তাবোধের বিষয়টি প্রশ্নাতীতভাবে ভাবিয়ে তুলেছে।

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) করা অক্টোবর (২০২৪) মাসের প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এমএসএফ প্রতি মাসে মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি হয়।

এমএসএফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে অন্তত ২৪টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ১৯ জন নিহত ও ৩ জন নারীসহ ১৯ জন কিশোর ও যুবক গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। ১৯ জনকে আহত অবস্থায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। ৮ জন সন্দেহজন চুরি, একজন চুরি, দুজন সন্দেহজনক ছিনতাই, একজন সন্দেহজনক চাঁদাবাজি, একজন ধর্ষণের অভিযোগে, একজন বাগ্‌বিতণ্ডার জেরে, একজন পাওনা টাকা আদায়ের জন্য চাপ দিলে, একজন মনোমালিন্যের জেরে এবং একজন সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত ছিল বলে গণপিটুনিতে নিহত হন। অপর দিকে ডাকাতি, ছিনতাই ও চুরির সন্দেহে ৩ জন নারীসহ ১৯ জন, ধর্ষণচেষ্টায় একজন ও ছাত্রলীগের এক নেতাকে গণপিটুনি দিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৬ জনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, অক্টোবরে রাজনৈতিক সহিংসতার ৫৮টি ঘটনায় সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৪২৪ জন। তাদের মধ্যে ১২ জন নিহত ও ৪১২ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৬ জন গুলিবিদ্ধ। সহিসংতার ৫৮টি ঘটনার মধ্যে ৩৭টি ঘটনা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলজনিত, ১৭টি বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে, ২টি আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল, ২টি ঘটনা ঘটেছে বিএনপি-জামায়াত ইসলামীর মধ্যে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বে এবং নয়জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী রয়েছেন। আওয়ামী লীগের নিহত সাতজনের মধ্যে চারজনের মৃত্যুতে সরাসরি বিএনপি ও জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা, তিনজন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং দুজনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

এমএসএফ জানায়, অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকলেও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের গণসংযোগে ব্যস্ততা দেখা যায়। অপর দিকে রাষ্ট্রপতির অপসারণ ও আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১ অক্টোবর চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় খাদেরগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম ঢালীর (৫৮) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। আর ২ অক্টোবর গাজীপুরের কালীগঞ্জে বিএনপির দলীয় কোন্দলের জের ধরে জাইদুল হক শ্যামল (৫২) নামের এক কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়া ৩ অক্টোবর গাইবান্ধায় আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমেদকে রাজনৈতিক শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের। যদিও পুলিশের ধারণা দুর্ঘটনা।

অন্যদিকে, ৩ অক্টোবর মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে নিখোঁজের ১৬ ঘণ্টা পর শাহজাহান শেখ (৫৫) নামে আওয়ামী লীগের এক নেতার লাশ পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আর ৯ অক্টোবর রাজশাহীর মোহনপুরে একটি পটোলখেত থেকে আওয়ামী লীগের কর্মী শাহাবুল ইসলামের (৪৫) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজ খানকে কুপিয়ে ও ‍পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক রোষানলের ভয়ে পালিয়ে ছিলেন।

এছাড়া ২১ অক্টোবর চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে গুলি করে ছাত্রলীগ কর্মী আফতাব উদ্দিন তাহসিনকে (২৬) কথিত শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিরা হত্যা করে বলে জানা যায়। আর ২৬ অক্টোবর রাজশাহীতে যুবলীগের কর্মী মীমকে তুলে নিয়ে গাছে ঝুলিয়ে পিটিয়ে ও রগ কেটে হত্যা করে স্থানীয় বিএনপির সমর্থকেরা বলে দাবি করা হয়। এছাড়া ২৭ অক্টোবর ঢাকার উত্তরায় বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে সোহেল নামের এক যুবদল কর্মী নিহত হন।

অন্যদিকে, ৩০ অক্টোবর কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে আওয়ামী লীগের সমর্থক দুই সহোদর হামিদুল ইসলাম (৫০) ও নজরুল ইসলামকে (৪৫) কুপিয়ে হত্যা করেন বিএনপির কর্মীরা। আর ৩০ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বে সুলতান (৪৫) নামে বিএনপির এক নেতা নিহত হন।

বাংলাদেশ জার্নাল/কেএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত