জিএসপি সুবিধা পেতে বাংলাদেশকে আরও অপেক্ষার পরামর্শ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:৪৩
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিশেষ শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) পেতে আরও অপেক্ষা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা করতেও আশস্ত করেছে দেশটি।
ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা ও পরে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্লমা শিতরামের সাথেও বৈঠক করেন উপদেষ্টা। বৈঠকে ব্যবসা-বাণিজ্য, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনাকালে এসব পরামর্শ দেয়া হয়। পরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
এছাড়া বিশ্বব্যাংকের চলমান বার্ষিক সভার সাইডলাইনে সংস্থাটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজারের সঙ্গে বৈঠকের পর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, সাম্প্রতিক বন্যার ক্ষতি পোষাতে ২৫ কোটি ডলার (প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা) অনুদান দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে সাইডলাইনে বিভিন্ন দেশ এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করছেন অর্থ উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর। পরে বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের বিকল্প নির্বাহীর অফিসে ব্রিফিংয়ে জানানো হয় শ্রম অধিকারসহ আরও কিছু ইস্যুতে বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে সন্তুষ্ট নয় যুক্তরাষ্ট্র। এসব বিষয়ে তারা আরও অগ্রগতি দেখতে চায়। আমরা বলেছি এসব খাতে আমরা ধাপে ধাপে উন্নতি করছি। শ্রম ও জনশক্তির জায়গায় আরও কিছুটা সময়ের প্রয়োজন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এবারের সম্মেলনে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি তাদের প্রত্যাশা একটু বেশি। তারা আমাদের সব ধরনের সংস্কার কার্যক্রমে সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সরকার সম্ভাব্য সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সুফল পেতে আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। এখানে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকও কাজ করছে। তাদের দেওয়া পরামর্শগুলো কাজে লাগানো হচ্ছে।
এদিকে, বকেয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারায় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। রিজার্ভ থেকে এক পয়সাও না নিয়ে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার ঋণের কিস্তি শোধ করার ফলে ডলার নিয়ে অস্থিরতাও কমে আসছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে আমদানি জনিত মূল্যস্ফীতিও কমে আসবে।
সাইড লাইনের সভায় আরও অনেকগুলো বিষয় নিয়ে ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে যেই জিতুক বাংলাদেশ বিষয়ে তাদের নীতি অপরিবর্তিতই থাকবে বলে জানিয়েছে স্টেট ডিপার্টমেন্ট।
ডলার সংকট কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে দেশের অর্থনীতি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের দায় পরিশোধ করছে। এজন্য কিছুটা চাপও পেতে হচ্ছে। সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নয়/ছয় সুদ এর আড়ালে বহু টাকা চলে গেছে ব্যাংক থেকে। এজন্য ব্যাংক খাতকে ঠিকঠাক করতে সময় লাগছে। ওটা ছিল একটা ভুল সিদ্ধান্ত।
এদিকে, পতিত সরকারের রেখে যাওয়া বাজেট বাস্তবায়নে কোনো চাপ পড়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজেট কাটছাঁট করা হবে-অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো হবে। আয়ের খাতে কোনো হাত দেওয়া হবে না। তবে ব্যয়ের খাতটা একটু কাটছাট করা হবে।
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বাংলাদেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। সেটা সহনীয় হতে এক-দুই মাস নয়, কয়েক মাস সময় লাগবে। তবে আর নতুন করে টাকা ছাপানো হবে না। আগে টাকা ছাপিয়ে মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
অর্থনীতির গতি প্রকৃতি নিয় কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, শেয়ার বাজারে নতুন বড় কোম্পানি আসবে। এখানে অনিয়ম হয়েছে আমরা সেগুলো বন্ধ করার চেষ্টা করছি। কোনো কোম্পানির অহেতুক ফ্লোর প্রাইস যে না বাড়ে সেটা নিশ্চিত করা হচ্ছে। সবচেয়ে দুর্বল কোম্পানি হিসেবে জেড ক্যাটাগরিতে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। আমরা সেটা বন্ধ করছি। বিশ্বব্যাংক বলেছে এবার বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমবে কিন্তু আমরা মনে করি সেটা একেবারে তলানিতে যাবে না। আবার শুধু শুধু প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে দেখানো হবে না।
এছাড়া বুধরার রাতে ইউএস-বাংলা বিজনেস কাউন্সিলের এক নৈশ্যভোজে অংশ নেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এই সম্মেলনের সাইডলাইনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সহয়োগী সংস্থার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিয়েছেন ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
বাংলাদেশ জার্নাল/কেএইচ