ঢাকা, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১ আপডেট : ১২ মিনিট আগে
শিরোনাম

বাতিল হচ্ছে মেঘনা নদীতে ঝুলন্ত সেতু-হাওরের উড়াল সড়ক প্রকল্প

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৫৫  
আপডেট :
 ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:৩৬

বাতিল হচ্ছে মেঘনা নদীতে ঝুলন্ত সেতু-হাওরের উড়াল সড়ক প্রকল্প
ফাইল ছবি

মেঘনা নদীতে ঝুলন্ত সেতু ও হাওরে চার লেন উড়াল সড়ক প্রকল্প বাতিল হচ্ছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের প্রভাবে হাওরে চার লেন উড়াল সড়ক ও সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম নিজের প্রভাব খাটিয়ে মেঘনা নদীর ওপর ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ প্রকল্প গুলো রাজনৈতিক বিবেচনায় হাতে নেয়া হয় বলে মনে করছে অন্তর্বর্তী সরকার।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, দীর্ঘদিন ধরে দেশের আর্থিক খাত ধুঁকছে। রয়েছে ডলার সংকট। এর মধ্যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে দেখা দিয়েছে নতুন সংকটের শঙ্কা। এতে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া চলতি অর্থবছর এবং পরের বছর মিলে সম্ভাব্য ৩ হাজার ৩২৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এগুলোর মধ্যে চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরে ১ হাজার ২২১টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ২ লাখ ৫৫ হাজার ৪১ কোটি টাকা। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দিতে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

পরিকল্পনা কমিশন আরও জানায়, ছোটবড় সব প্রকল্পের বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে কমিশন। যে সব রাজনৈতিক প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে সেগুলোর বিষয়ে কোনো কথা নয়, তবে যেগুলো প্রাথমিক ধাপে আছে সেই প্রকল্পে বরাদ্দ নয় বলে জানিয়েছে কমিশন। সেই হিসেবে হাওরে উড়াল সড়ক ও মেঘনা নদীর ওপর ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি প্রাথমিক পর্যায়ে। এখনো মাঠ পর্যায়ে অবকাঠামোগত কাজ শুরু হয়নি। সেই জন্য প্রকল্প দুটিতে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে না বলে কমিশন জানিয়েছে।

রাজনৈতিক প্রকল্প বাদ দেয়া প্রসঙ্গে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘যেসব প্রকল্প রাজনৈতিক বিবেচনায় নেয়া হয়েছে এবং বাস্তবায়নও প্রায় শেষ পর্যায়ে সেগুলোর বিষয় তো কিছু করার নেই। আমি পরিকল্পনা কমিশনের সেক্টরগুলোতে নির্দেশনা দিয়েছি অপ্রয়োজনীয় এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় নেয়া নতুন কোনো প্রকল্প যাতে না নেয়া হয়।’

প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে সেতু বিভাগ। প্রকল্প দুটি বাতিল হচ্ছে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে সেতু বিভাগের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা হয়তো জানেন আমি সেতু বিভাগে নতুন যোগদান করেছি। তাই কোন প্রকল্পটি বাতিল হচ্ছে, কোনটা হচ্ছে না, সেই বিষয়টি এখনো জানি না।’

এদিকে হাওরের উড়াল সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি রাজনৈতিক বিবেচনায় নেয়া হয়েছিল বলে মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের প্রভাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করেই প্রকল্পটি নেয়া হয়। খুব গুরুত্বপূর্ণ না হলেও কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলা সদর থেকে করিমগঞ্জ উপজেলার মরিচখালী পর্যন্ত উড়াল সড়ক নির্মাণে পাঁচ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়। অন্তর্বর্তী সরকার এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেবে না বলে জানা গেছে।

বছরের প্রায় অর্ধেক সময় পানির নিচেই থাকে হাওরবেষ্টিত কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা। হাওর অঞ্চল কেন্দ্র করে প্রায় ৩০ কিলোমিটার উড়াল সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল গত আওয়ামী লীগ সরকার। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাস হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ সড়কের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৮ সালের ৩০ জুন।

সেতু বিভাগ জানায়, প্রাথমিক আলোচনায় প্রকল্পটি বাদ দেওয়ার আলোচনা করা হয়েছে। তবে এখনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। আবার কাজও শুরু করা হচ্ছে না। প্রক্রিয়া অনুযায়ী কাজ শুরু করার কথা ছিল। কাজ যেহেতু শুরু হচ্ছে না, ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার এ প্রকল্প বাতিল না করলেও কাজ থেমে থাকবে।

তবে প্রকল্পটি বাতিলের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি সেতু বিভাগের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ) মোহাম্মদ আনোয়ারুল নাসের।

কিশোরগঞ্জের নাকভাঙা হয়ে মরিচখালী থেকে মিঠামইন পর্যন্ত সড়কটি চার লেনের নির্মিত হওয়ার কথা ছিল। এক ধরনের ফরমায়েসি ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করে প্রকল্পটি নেয়া হয় বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। আগের সড়কের সমালোচনা থেকে এবার সড়কের কোনো অংশ যেন বন্যার কারণ হয়ে না দাঁড়ায় সে জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগ এবং পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট একত্রে এই প্রকল্পে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। সম্ভাব্যতা যাচাই ও প্রাথমিক নকশাও করেছে বুয়েট।

অন্যদিকে দেশে প্রথমবারের মতো চাঁদপুরের মতলব উত্তরে চার লেন বিশিষ্ট ঝুলন্ত সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। চীনের সুটং ইয়াংজি নদী সেতু, ভারতের রাজিব গান্ধী সমুদ্র সেতু, ফ্রান্সের মিলাউ ভায়াডাক্ট কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো-ওকল্যান্ড বে ব্রিজের মতো বাংলাদেশেও কেবল স্টেড বা ঝুলন্ত (তারের) সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ সরকার।

চাঁদপুর ও মুন্সিগঞ্জ জেলায় সংযোগ স্থাপনকারী ঝুলন্ত এ সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৪ হাজার ১৭৪ কোটি ৬৭ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া ও মতলবের মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর চার লেনের ঝুলন্ত এ সেতুটি নির্মাণ হওয়ার কথা ছিল।

সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৮৫০ মিটার। এর সঙ্গে সাড়ে সাত কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হতো। প্রকল্পটির কাজ ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২০২৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। দেশীয় এবং বিদেশি অর্থে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে কোরীয় ঋণ ৩ হাজার ৫১৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং বাকি ৬৬০ কোটি ৭২ লাখ টাকা সরকারি কোষাগার থেকে মেটানো হবে। প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৪৬ লাখ ৫২ হাজার টাকা, যা মোট ব্যয়ের মাত্র ০ দশমিক ০১ শতাংশ।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত