ঢাকা, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১ আপডেট : ১৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

দাম জটিলতায় ঢাকা-চট্টগ্রামে ডিমের আড়ৎ বন্ধ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:০৬

দাম জটিলতায় ঢাকা-চট্টগ্রামে ডিমের আড়ৎ বন্ধ
দাম জটিলতায় ঢাকা-চট্টগ্রামে ডিমের আড়ৎ বন্ধ। ছবি: সংগৃহীত

লাগামহীন ডিমের বাজার। সরকারি নির্ধারিত দরের ধারে কাছে নেই বহুল প্রয়োজনীয় এই নিত্যপণ্য। এমন পরিস্থিতিতে নতুন সংকট তৈরি করছেন আড়ৎদারেরা। হঠাৎ করেই ফার্মের ডিমের বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা।

জানা যায়, সরকারি দামে ডিম কিনতে না পারা, রসিদ না দেয়া, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে জরিমানার কারণে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের কিছু আড়তদার। এতে বাজারে তৈরি হচ্ছে ডিমের সংকট। ভোক্তারা পাচ্ছেন না ডিম। সব মিলিয়ে দেশে ডিমের বাজারে ভয়াবহ অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

গতকাল সোমবার তেজগাঁও ও পাহাড়তলী ডিমের আড়তে হয়নি কাঙ্ক্ষিত বেচাকেনা। এর ফলে, ১৫ থেকে ২০ লাখ পিস সংকটের আশঙ্কা রয়েছে। বলা হচ্ছে, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর প্রতিটি ফার্মের ডিমের সর্বোচ্চ দাম বেধে দিয়েছে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা। অথচ, ১৩-১৪ টাকার নিচে ডিম পাইকারি আড়তে মিলছে না। খুচরা দোকান কিংবা পাড়া-মহল্লায় এই দাম ছাড়িয়ে যাচ্ছে ১৫ টাকায়। এসবের প্রতিবাদে ডিম বিক্রিই বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এছাড়াও, চট্টগ্রামে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। তারাও একই রকম দাবিতেই মূলত ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। আড়তে গিয়ে দোকানগুলোও বন্ধ দেখা যায়। তবে ভোক্তাদের দাবি ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা করেই বিক্রি বন্ধ করে রেখেছেন। আড়তের ভেতরে প্রচুর ডিম মজুত করে রেখে কৃত্রিম এই সংকট তৈরি করে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।

এদিকে, ডিমের বাজারে অভিযান চালিয়ে অনিয়ম পেয়েছে ভোক্তা অধিদফতর। জরিমানা করা হয় একাধিক ব্যবসায়ীকে।

চট্টগ্রামে ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল শুক্কুর লিটন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বেঁধে দেয়া টাকায় ডিম ক্রয় ও বিক্রি করা যাচ্ছে না। বলা হয়েছে উৎপাদন পর্যায় থেকে ১০ টাকা ৫৮ পয়সায় ডিম কেনা যাবে। কিন্তু বাস্তবে কিনতে হচ্ছে ১৩ টাকার বেশি দামে। এখন আমরা কীভাবে ১১ টাকায় ডিম বিক্রি করবো?’

আড়তে ডিম বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোক্তা পর্যায়ে ডিমের দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নগরের বহদ্দারহাট বাজারে বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজনপ্রতি ১৭০ টাকা আর সাদা ডিমের ডজন ১৬৫ টাকায়।

একই অবস্থা রাজধানীর তেজগাঁও ডিম আড়তের। এখানেও রোববার রাতে ডিমের কোনো ট্রাক আসেনি। শনিবার রাতেও খুব কম পরিমাণে ডিম বিক্রি করেছেন আড়তের বিক্রেতারা। রাজধানীতে ডিম বিক্রির অন্যতম বড় পাইকারি বাজার হচ্ছে তেজগাঁও আড়ত। দেশের বিভিন্ন স্থানের খামার থেকে ট্রাকে করে এখানে ডিম আসে। এরপর তেজগাঁও থেকে ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বাজার ও পাড়া-মহল্লায় ডিম সরবরাহ হয়। ফলে তেজগাঁওয়ে ডিম বিক্রি বন্ধ রাখলে সাধারণত খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়ে।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে ডজনপ্রতি ফার্মের মুরগির বাদামি ডিম ১৮০ টাকা ও সাদা ডিম ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ডিমের পাশাপাশি ফার্মের মুরগির দামও চড়া। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৮০-২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর হাইব্রিড ধরনের সোনালি মুরগির দাম এখন ২৬০-২৭০ টাকা কেজি।

সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার গণমাধ্যমকে বলেন, যাদের নিয়ে বসে সরকার ডিমের দাম নির্ধারণ করেছে তারাই সিন্ডিকেটের অংশ। আর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এসব সিন্ডিকেট পালে। এখন আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, প্রান্তিক পর্যায়ের উৎপাদকদের সঙ্গে সরকার ব্যবসায়ীদের যোগসূত্র তৈরি করে দিক, তাহলেই ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত দরে ডিম বিক্রি করতে পারবে।

তিনি বলেন, দেশের ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বড় বড় কয়েকটি কোম্পানি। তারা প্রান্তিক পর্যায়ে ডিম উৎপাদন করে, ক্রয়ও করে। ডিম বিক্রির সময় তারা বিক্রি করছে বেশি দরে। অনেক সময় যে দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে, তার চেয়ে কম দামে ভাউচার হচ্ছে। যারা এই শর্ত মানছে না তারা ডিমও পাচ্ছে না। এজন্য বড় ব্যবসায়ীদের লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্তের দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত