‘ভারত হাসিনাকে ট্রাভেল পাস দিলেও, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৪:৪৩ আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:৩১
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত ট্রাভেল পাস দিলেও তা দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে অবনতি ঘটবে না বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
শনিবার (১২ অক্টোবর) বিকালে নরসিংদীতে দুর্গাপূজার নবমীতে বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে পৌর শহরের সেবাসংঘ মন্দিরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ট্রাভেল ডকুমেন্ট যে কোনো দেশ যে কাউকেই ইস্যু করতে পারে, সেটি আটকানোর ক্ষমতা অন্য কারও নেই।
তবে কোনো মামলায় যদি তাকে আদালত হাজির করতে বলে তবে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
কোটা সংস্কার থেকে সরকার পতনের প্রবল গণ আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট গণভবন থেকে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সম্প্রতি খবরে বেরিয়েছে, শেখ হাসিনা ভারত ছেড়ে আরব আমিরাতের আজমান শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নিশ্চিত হতে পারেননি বলে গত ৮ অক্টোবর জানিয়েছিলেন।
দিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশন থেকে ট্রাভেল পাস নিয়ে অনেকে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টায় আছেন, এমন খবরও প্রকাশ পেয়েছে। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান কী, সেদিন প্রশ্ন করা হয় পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে।
উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মিশন ট্রাভেল পাস ইস্যু করতে পারে শুধুমাত্র দেশে ফেরার জন্য, অন্য কোনো দেশে যাওয়ার জন্য না।
কেউ যদি বাংলাদেশে ফেরার জন্য ট্রাভেল পাস চায়, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরে তৌহিদ হোসেন বলেন, ট্রাভেল পাসের জন্য পাসপোর্ট লাগে। পলাতকদের জন্য ‘স্বাভাবিকভাবে’ পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে না।
তারা যদি দেশে ফিরতে চায়, তাদেরকে অবশ্যই ট্রাভেল পাস ইস্যু করা যেতে পারে থিওরিটিক্যালি, যাতে তারা দেশে ফিরে আসতে পারে, ফর ওয়ান ওয়ে, ট্রাভেল টু বাংলাদেশ।
নরসিংদীতে পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন শেষে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে কিছু ‘অস্বস্তি’ ছিল, সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। সু-সম্পর্ক দু-দেশেরই প্রয়োজন রয়েছে।
দুর্গাপূজার নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে সরকারের নজরদারি থাকার কথা তুলে ধরে তিনি দশমী পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেন।
এসময় উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন নরসিংদী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৮ ইস্ট-বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ হুমায়ুন রশীদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও নরসিংদী পৌরসভার প্রশাসক মৌসুমী সরকার রাখী, সেবাসংঘ দুর্গামন্দির কমিটির সভাপতি সরোজ কুমার সাহাসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা।
প্রসঙ্গত, ভারতের বিভিন্ন জায়গায় যে কয়েক লাখ তিব্বতি শরণার্থী থাকেন, তাদের বেশিরভাগ ভারতের পাসপোর্টধারী নন। বরং এই ধরনের ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ (সংক্ষেপে যেটাকে বলে ‘টিডি’) নিয়েই তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সফর করেন। টিডি কোনো পাসপোর্ট নয়, বরং ভারত সরকারের জারি করা একটি বিশেষ ধরনের ‘পরিচয়পত্র’; যা দিয়ে বিদেশ সফর করা যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এতে ভিসা দিয়ে থাকে। এর পোশাকি নাম হলো- ‘আইডেন্টিটি সার্টিফিকেট’ বা আইসি। ভারতের সাধারণ পাসপোর্ট গাঢ় নীল রঙের হলেও আইসি সাধারণত হলুদ রঙের একটি বুকলেটের আকারে জারি করা হয়।
তিব্বতি ধর্মগুরু চতুর্দশ দালাই লামা-যিনি ১৯৫৯ সালে চীনের চোখ এড়িয়ে ভারতে পালিয়ে আসেন এবং দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেন। তিনিও এ ধরনের একটি ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ বা আইসি নিয়েই সারা পৃথিবী চষে বেড়ান। ভারতের পাসপোর্ট নেওয়ার সুযোগ থাকলেও তিনি গ্রহণ করেননি। দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মের যে তিব্বতিদের ভারতের মাটিতে জন্ম, তারাও জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক হওয়ার অধিকারী। কিন্তু তাদেরও বেশিরভাগকে পাসপোর্টের বদলে ‘টিডি’ বা ‘আইসি’ দিয়েছে ভারত। তারা এটা নিয়েই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করছেন।
বাংলাদেশ জার্নাল/এসবিটি