একের পর এক মামলা-গ্রেপ্তার, আতঙ্কে আমলারা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:১৬ আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:১৮
গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জনপ্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নামে একের পর এক মামলা হচ্ছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই হত্যা মামলা। এ মামলার কারণে কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কিছু কর্মকর্তার বিতর্কিত ভূমিকার কারণে শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে মামলা দেয়া ঠিক হচ্ছে না। যাঁরা বিগত সরকারের সময় সীমা লঙ্ঘন করেছেন, বাড়াবাড়ি করেছেন, তাঁদের অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ ও নজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হয়েছেন। অন্য দুই মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও আহমেদ কায়কাউসের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। একজন দেশের বাইরে, অন্যজন আত্মগোপনে।
প্রশাসনের আরেক শীর্ষ পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দায়িত্বে থাকা দুই মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ও কবির বিন আনোয়ারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাঁরাও গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন। আরেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের নামে যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। তিনি গতকাল বুধবার অবসরের আগে শেষ অফিস করেন।
এ ছাড়া বেশ কয়েকজন সচিবের বিরুদ্ধেও হত্যা মামলা হয়েছে। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে দুই মাসে বেশ কয়েকজন সচিবকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) এবং বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের নামে মামলা হচ্ছে।
ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন চারজন সচিব। তাঁরা হলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. জাহাংগীর আলম ও একই মন্ত্রণালয়ের আরেক সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব আমিনুল ইসলাম খান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব শাহ কামাল এবং সাবেক যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ও ফয়েজ আহমেদ এবং সাবেক সচিব আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তাঁর নামে যে এলাকায় মামলা হয়েছে, তিনি সেখানে কখনো যাননি। মামলার বাদী অজ্ঞতাবশত কিংবা না বুঝে অথবা প্রতারণার উদ্দেশ্যে তাঁর নামে মামলা করেছেন। তিনি কখনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বলে দাবি করেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও আমলাদের এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়নি। তখন আমলাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করেছিল। হাতে গোনা দু-একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
ঢালাওভাবে মামলার আসামি করার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হত্যা মামলা করার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকতে হয়। এখন ঢালাওভাবে আসামি করা হচ্ছে। থানায় মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের দিক থেকে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা দরকার।
সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণকেন্দ্রের (বিপিএটিসি) রেক্টর এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার গত মঙ্গলবার বলেন, সরকার আসবে, সরকার যাবে। আমলাদের নিরপেক্ষ থাকতে হবে। কিন্তু গত ১৫ বছরে দলীয় আমলাতন্ত্র হয়েছে। আমলারা রাজনীতিবিদদের সঙ্গে মিশে গেছেন, যার খেসারত এখন দিতে হচ্ছে। এখন যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে।
কর্মকর্তাদের পদোন্নতির সুপারিশে গঠিত সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভাপতি হচ্ছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। পদোন্নতিবঞ্চিত এক কর্মকর্তা বলেন, গত ১৫ বছরে যাঁরা মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব ও জনপ্রশাসন সচিব হয়েছেন, তাঁরা বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন। তাঁরা রাজনৈতিক বিবেচনায় যোগ্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেননি। বিগত সরকারকে ফ্যাসিস্ট হতে সহায়তা করেছিলেন আমলারা। এখন তাঁদের চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ জার্নাল/আরএইচ