নির্বাচনের সময় খবরদারির ক্ষমতা ইসিকে দিতে হবে: এম সাখাওয়াত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১৬:০১
বস্ত্র ও পাট এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রি. জে. (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, নির্বাচনের সময় মন্ত্রণালয়গুলোর ওপর খবরদারির ক্ষমতা ইসিকে দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন যাদেরকে নিয়োগ দেয়, তাদের ক্ষেত্রে ইসি যে রিপোর্ট দেয় সেটিই যেন চূড়ান্ত হয়। এটি জবাবদিহি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার যেন হস্তক্ষেপ না করে।
শনিবার (১২ অক্টোবর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি আয়োজিত 'নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কেমন চাই' বিষয়ক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, পুরো নির্বাচনি প্রক্রিয়া সঠিক হতে হবে। যে নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কার্যকর করে না, সেটা সংবিধানের লংঘন। সরকার, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহায়তা না করলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক দল সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করলে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজসহ আরও অংশীজনদের সঠিক ভূমিকা পালন করতে হবে।
ড. বদিউল আলম বলেন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন প্রয়োজন। নিরপেক্ষ, সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। নির্বাচন কমিশন নিয়োগের এখতিয়ার নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের নয়। এ সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, প্রজাতন্ত্রের মালিক যেন জনগণ হয়, সেজন্য কিছু সংস্কার প্রয়োজন। ইসি নিয়োগ আইন অবশ্যই সংস্কার করতে হবে। কোনো আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে সেখানে আবার নির্বাচন করতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, নির্বাচন চলাকালীন সময়ে ইসির মতামত না নিয়ে কোনো আদালতের রিট গ্রহণ করা যাবে না।
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সংশোধন করে স্থায়ীভাবে সন্নিবেশিত করতে হবে মন্তব্য করে জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, নির্বাচনি ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন ব্যবস্থা প্রয়োজন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে তিনটি নির্বাচন অপেক্ষাকৃত গ্রহনযোগ্য হয়েছে। ইভিএম বাতিল করতে হবে। কোনো সরকারি চাকরিজীবী চাকরি ছাড়ার তিন বছরের মধ্যে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক কিংবা দলীয় মনোনয়ন কেন দিতে হবে? এনআইডি ব্যবস্থাপনা নির্বাচন কমিশনের অধীনে আনতে হবে। একাধিক দিনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, শুধু একটি নির্বাচন করার জন্য এই গণঅভ্যুত্থান হয়নি। এ ধরনের অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি থাকায় সমালোচনা করেন। ১৪ দলের কেউ থাকতে পারবে না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন চাইলে নিরপেক্ষ প্রশাসন প্রয়োজন। সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান করতে হবে। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনে কারও সমস্যা থাকার কথা না।
এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, প্রার্থীরা প্রিজাইডিং অফিসার ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। নির্বাচনের সময় কে ডিসি, কে এসপি সেটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, নির্বাচন সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য দায়িত্ব। নির্বাচনকালীন সরকার কে থাকবে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা করতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে নির্বাচন সুষ্ঠু করার আগ্রহ নেই জানিয়ে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, কমিশনগুলো কিভাবে কাজ করবে সেটা এখনও সুনির্দিষ্টভাবে জানানো হয়নি। বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ তৈরি হয়নি। দলগুলো নিরঙ্কুশ ক্ষমতা পেতে চায়। অন্তত ৩ থেকে ৫টি নির্বাচন, নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে একটি স্বতন্ত্র সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৈরি করতে হবে। না ভোটের বিধান থাকা দরকার। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ সংশোধন দরকার। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন সহজ করা দরকার।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যতটুকু কাজ প্রয়োজন সেটুকু করুক অন্তর্বর্তী সরকার। বাকি সংস্কার নির্বাচিত সরকার করবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার স্থায়ী হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বাংলাদেশ জার্নাল/কেএইচ