শেষ মুহূর্তে ইলিশ কিনতে ভিড় ক্রেতাদের
প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:১২ আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:২৫
পদ্মা-মেঘনায় মিঠাপানিতে ইলিশ যাতে নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়তে পারে এ জন্য ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে আজ। শনিবার (১২ অক্টোবর) রাত ১২টার পর থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। এ খবরে চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশ কিনতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় জমেছে। শেষ মুহূর্তে বিক্রিও হচ্ছে রেকর্ড দামে। ১ কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে চাঁদপুর মাছঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, আড়তগুলো ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম হয়ে আছে। বিশেষ করে খুচরা ক্রেতাদের লাইন ধরে ইলিশ কিনতে দেখা গেছে। কিছু সময় ঘাটে অপেক্ষা করে দেখা যায়, স্থানীয় জেলেরা বরফ ছাড়া তাজা ইলিশ নিয়ে আসছেন আড়তগুলোতে। আবার কিছু ইলিশ নোয়াখালী হাতিয়া এলাকা থেকে মিনি ট্রাকে সড়ক পথে আসছে ঘাটে।
আড়তগুলো ঘুরে একাধিক খুচরা ইলিশ বিক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। ব্যবসায়ীরা জানান, ১ কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকায়, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকা, ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হয় ১ হাজার ৩০০ টাকা আর ছোট সাইজের অর্থাৎ ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়।
শহরের বাসিন্দা জামাল বলেন, গত এক সপ্তাহ আগেও ইলিশের দাম কিছুটা কম ছিল। ইলিশ ধরা বন্ধ হবে এ কারণে ছোট-বড় প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। কেনার ইচ্ছা থাকলেও দাম বেশি হওয়ায় আর কেনা হবে না
ঢাকা থেকে ইলিশ কিনতে এসেছেন নাজনিন সুলতানা। তিনি বলেন, আড়তগুলো ঘুরে দেখছি। দাম অনেক চড়া। পদ্মা-মেঘনার ইলিশ চেনাও খুবই কষ্ট। বিশ্বাসের ওপর কিনতে হবে।
হাজীগঞ্জ উপজেলা থেকে ইলিশ কিনতে এসেছেন ইশতিয়াক। তিনি বলেন, বরফ দেওয়া ইলিশের দামও রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এক কেজি ওজনের ইলিশের খুচরা দাম ৩ হাজার টাকা। এক সপ্তাহ আগেও এই ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়। একদম জাটকা সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অসম্ভবভাবে ইলিশের দাম বেড়েছে।
মেসার্স মিজানুর রহমান ভুঁইয়া আড়তের ম্যানেজার ওমর ফারুক বলেন, ইলিশের দাম এখন সর্বোচ্চ। সামনে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার জন্য এমনটা হচ্ছে। সরবরাহের চাইতে খুচরা ক্রেতার সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খুচরা বিক্রেতার লাইন লেগে থাকে।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুল বারী জমাদার মানিক বলেন, ১২ অক্টোবর দিনগত রাত থেকেই ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে। ২২ দিন ইলিশ বিক্রিও বন্ধ থাকবে। শেষ মুহূর্তে ইলিশ কিনতে লোকজন ঘাটে আসছেন। সরবরাহ কম হওয়ায় ইলিশ এখন সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত সরকার বলেন, গত চার দিনে কেজিতে ইলিশের দাম ৩০০ টাকা বেড়েছে।
ইলিশ গবেষক মো. আনিসুর রহমান বলেন, দেখা যাচ্ছে এক শ্রেণির মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এ ছাড়াও, ইলিশের সামাজিক মূল্যও অনেক বেশি।
মৎস্য কর্মকর্তা ও গবেষকদের মতে, ক্রমবর্ধমান ক্রয়ক্ষমতা ও ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির কারণে ইলিশের চাহিদা বেড়েছে। শহরের অনেক বিত্তবান সারাবছর খাওয়ার জন্য ইলিশ সংরক্ষণ করেন। তাছাড়া, আহরিত ইলিশের একটি অংশ দেশের বাইরে পাচার হয়ে যায়।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ইলিশ দুষ্প্রাপ্য পণ্য। এটি সংরক্ষণ করা যেতে পারে। তাই, মাছের সর্বদা একটা প্রিমিয়াম দাম থাকবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, সরবরাহ বাড়লে যেকোনো পণ্যের দাম কমে যায়। কিন্তু, ইলিশের আবেগী মূল্য আছে। সব আয়ের মানুষের কাছে এর চাহিদা অনেক। কম আয়ের মানুষও ইলিশ দিয়ে অতিথি আপ্যায়নের চেষ্টা করেন।
চলমান দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতির কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এত অল্প পরিমাণ রপ্তানির জন্য হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়া উচিত নয়।
এক সময় ভেবেছিলাম অন্যান্য মাছের উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইলিশের চাহিদা ও দাম কমে যাবে। কিন্তু দেখছি, প্রতি কেজি ইলিশ দুই হাজার টাকায় পৌঁছালেও মানুষ কিনছে। ইলিশ আহরণ যে বেড়েছে তাতে সন্দেহ নেই। জনসংখ্যা ও অনেকের আয়ও বেড়েছে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এসবিটি