ঢাকা, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ আপডেট : ৬ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

সরকারের কাজের গতি, দ্রব্যমূল্য ও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে অসন্তোষ: ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ২২:১২  
আপডেট :
 ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ২২:৪৪

সরকারের কাজের গতি, দ্রব্যমূল্য ও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে অসন্তোষ: ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার৷ (পুরোনো ছবি)

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসছেন৷ তার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মুখে দ্রব্যমূল্য, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সরকারের যাবতীয় কাজে মন্থর গতি নিয়ে অসন্তোষ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল৷ শুক্রবার (৪ অক্টোবর) জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে এসব বলা হয়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গত দুই মাসে তাদের কাছে দেশের মানুষের যে প্রত্যাশা, তা পুরণ করতে পারেনি৷ তাদের কাজের গতিতে আমরা মোটেই সন্তুষ্ট নই৷ আমরা আজ (শুক্রবার) দ্রব্যমূল্য ও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে সমাবেশে যখন বক্তৃতা করছিলাম, তখন আমাদের কথা শুনে সাধারণ মানুষ হাততালি দেন৷ এখান থেকেই বোঝা যায়, সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা তারা দুই মাসে পুরণ করতে পারেনি৷

তিনি আরও বলেন, আমাদের শনিবারের সংলাপে মাত্র ৩০ মিনিট সময় দেয়া হয়েছে৷ আসলে এই সময়ে সংলাপ হয় না৷ এর আগে যেটা হয়েছে, সেটাও দেখা-সাক্ষাৎ মাত্র৷ যে উপদেষ্টা আমাকে ফোন করেছিলেন, তার কথায় মনে হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা এবং পূজার সম্প্রীতি নিয়ে কিছু কথা তারা বলতে চান৷ কিন্তু আমরা চাই পূর্ণাঙ্গ সংলাপ, যাতে নির্বাচন ও সংস্কারের রোডম্যাপ চূড়ান্ত হয়৷

অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আজাদ মজুমদার জানান, শনিবার বেলা আড়াইটায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে সংলাপ শুরু হবে৷ সংস্কার কমিটিগুলো এবং সংস্কার নিয়েই মূলত এই সংলাপ৷ এই সংলাপ যে শনিবারেই শেষ হবে, তা না-ও হতে পরে৷ এটা ধারাবাহিকভাবে হতে পারে৷ কারণ, সব দলের সঙ্গে তো আর শনিবার সংলাপ করা যাবে না৷ এর আগেও দুই বার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হয়েছে বলেও মনে করিয়ে দেন। জানা গেছে, শনিবার ৯টি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে সংলাপে ডাকা হয়েছে৷ তাদের মধ্যে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, বাম রাজনৈতিক দল ছাড়াও হেফাজতে ইসলামও রয়েছে৷ যারা আমন্ত্রণ পেয়েছেন, তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি দলকে ৩০ মিনিট করে সময় দেয়া হয়েছে৷

জাময়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, সরকারের প্রায় দুই মাস হলো৷ কিন্তু সরকার এখনো কোনো সংস্কারের কাজ শুরু করতে পারেনি৷ ছয়টি কমিশন গঠন করেছে মাত্র৷ সরকারের আরো দ্রুত এগোনো দরকার৷ এবং সংস্কারের ধাপ অতিক্রম করেই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা দরকার৷

তিনি আরও বলেন, আমরা যৌক্তিক সময় সরকারকে দিতে চাই৷ তবে আলোচনার মাধ্যমে সেটা আমরা নির্ধারণ করতে প্রস্তাব দেবো৷ আমরা মনে করি, এই সরকারের কাজে আরেকটু গতি দরকার৷ এই সরকার কতদিনের মধ্যে নির্বাচন ও সংস্কার করবে সেটাই এখন আলোচনার প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ সেনাপ্রধান ১৮ মাসের একটা কথা বলেছেন৷ সম্পাদকরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে দুই বছরের কথা বলেছেন৷ আবার জনমত জরিপে দেখা গেছে দুই থেকে আড়াই বছর৷ কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দেয়নি৷

এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আসলে রোডম্যাপটি জরুরি৷ আমার ব্যক্তিগত মত হলো: আগের তত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচনের জন্য তিন মাস সময় পেতো৷ কিন্তু এবার তো একটি নতুন পরিস্থিতি৷ তাই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সবকিছু স্থিতিশীল করতে ছয় মাস, সংস্কারের জন্য ছয় মাস আর নির্বাচনের জন্য তিন মাস- এই ১৫ মাস৷ আরো তিন মাস যদি ‘গ্রেস পিরিয়ড' দেয়া হয়, তাহলে ১৮ মাসের একটা হিসাব তো আমরা পাই৷

তিনি আরও বলেন, আসলে এই সরকারের উচিত ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক দলসহ সব পক্ষের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে কাজ এগিয়ে নেয়া, একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা ৷ আমরা সংলাপে সেটাই বলবো৷ আর সরকারের কাছে মানুষের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ আরো যে প্রত্যাশা ছিল, সেগুলো তারা এখনো সঠিকভাবে গুছিয়ে উঠতে পারেননি৷ সর্বোচ্চ তিনটি মন্ত্রণালয় গুছিয়ে উঠেছে৷ নিয়োগ নিয়ে এরই মধ্যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অবস্থা খুবই খারাপ৷ সরকার এখনো সন্তোষজনকভাবে এগোতে পারছে না৷ জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি মনে করেন, সরকারকে আগে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে৷ এটা করতে না পারলে সারা দেশে ছোট ছোট সরকার তৈরি হবে৷ সরকার সংস্কারে দেরি করছে৷ এতে আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে৷ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও দূরত্ব বাড়ছে৷ আমরা সংলাপে তাই রোডম্যাপ চাইবো৷

সংস্কার ও যৌক্তিক সময়ে নির্বাচনের যে দাবি আছে, সেগুলো সরকারকে পূরণ করতে হবে৷ তবে তার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, সরকার অবশ্যই নির্বাচনের একটা রোডম্যাপ করবে৷ এটা না করলে তারা কী করতে যাচ্ছে তা পরিস্কার হবে না৷ আর সংস্কার প্রক্রিয়া তারা শুরু করে যাবে৷ নির্বাচিত সরকার এসে সেই সংস্কার প্রক্রিয়া শেষ করবে৷

তিনি আরও বলেন, সরকার, রাজনৈতিক দল, সেনাবাহিনী, স্টেক হোল্ডার সবার সহযোগিতা ও আলোচনার মধ্য দিয়ে ১৮ মাস নয়, তার আগেই সংস্কার ও নির্বাচন করা সম্ভব৷ সরকারের কাজে গতি বাড়াতে হবে৷ এটা সবার সরকার৷ এই সরকারকে আমরা সমর্থন করি৷ কিন্তু তাদের জনমনে স্বস্তিও দিতে হবে৷

বাংলাদেশ জার্নাল/কেএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত