ডিসি নিয়োগে ঘুষের খবরকে ভুয়া বললেন জনপ্রশাসন সচিব
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:২৫ আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:৪৭
জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগে মোটা অঙ্কের অর্থের লেনদেনের খবরকে ভুয়া বলে দাবি করলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, বিন্দু বিসর্গের সত্যতা নাই। এই প্রশ্ন করার আগে আপনারা নিজেকে প্রশ্ন করেন, আমাকে এই প্রশ্ন করা কতটুকু যৌক্তিক হচ্ছে।
ডিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ নিয়ে দৈনিক কালবেলা পরপর দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত দ্বিতীয় প্রতিবেদনে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা আদানপ্রদানের কিছু ক্রিনশট প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ওই আলাপচারিতা দুই যুগ্ম সচিব ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও আলী আযমের সঙ্গে জনপ্রশাসন সচিবের। ডিসি নিয়োগে ‘৫ থেকে ১০ কোটি টাকা’ লেনদেনের কথা বলা হয়েছে সেখানে।
প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক ঘন্টার মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন জনপ্রশাসন সচিব।
হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমার মোবাইলটা হল স্যামসাং, ওখানে (কালবেলার প্রতিবেদনে) যেটা শো করছে সেটা হল আইফোন। উনারা কী দেখাইল, সেটা উনাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন। আমি এইটা সম্পর্কে কিছুই জানি না।
আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। সরকার যে মোবাইল দিয়েছে সেটাও আমি ব্যবহার করি না। আমার আগের যে নম্বর সেটাই আমি ব্যবহার করতেছি।
ওই কথোপকথনের সত্যতা আছে কিনা- এমন প্রশ্নে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, যদি স্টান্টবাজি নিউজ করতে চান, তাহলে এগুলো প্রশ্ন করতে পারেন।
খবর যদি মিথ্যা হয়, তাহলে কী ব্যবস্থা নেবেন- সেই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা তিনটি পদক্ষেপ নিয়েছি। পত্রিকটির নাম উল্লেখ করে আমরা তথ্য সচিবকে চিঠি দিয়েছি। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারি চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রেস কাউন্সিল আছে, অন্যান্য যে নিয়ম কানুন আছে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যে ভুয়া লোককে কেন্দ্র করে এতকিছু, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগামী এক দুই দিনের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। যে ব্যাংকারের ভুলের কারণে এ ধরনের একটা অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ক্ষমতার পটপরিবর্তানের পর মাঠ প্রশাসনেও ব্যাপক রদবদল আনে অন্তর্বর্তী সরকার। এর ধারাবাহিকতায় ৫৯ জেলায় নতুন কর্মকর্তাদের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কিন্তু ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে দিনভর হট্টগোল করেন আগের সরকারের আমলে ‘বঞ্চিত’ উপসচিবরা; শেষ পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন বাতিলের আশ্বাসে তারা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কার্যালয় ত্যাগ করেন।
নতুন দায়িত্ব পাওয়া ৫৯ জন জেলা প্রশাসকের মধ্যে আটজনকে পরদিনই প্রত্যাহার করে নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে চার জনের কর্মস্থল বদলে দেওয়া হয়। আর একজন উপসচিবকে করা হয় ওএসডি। হট্টগোলের ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয় কমিটি।
এর মধ্যে এক যুগ্ম সচিবের কক্ষ থেকে তিন কোটি টাকার একটি চেক এবং ডিসি নিয়োগ সংক্রান্ত কিছু চিরকুট উদ্ধারের খবর দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক কালবেলা। সেই প্রতিবেদন নিয়ে তোলপাড় তৈরি হলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
তবে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন ডেকে কালবেলার ওই প্রতিবেদনকে ‘গুজব’, ‘সম্পূর্ণ ভুয়া’ এবং ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যায়িত করেন মোখলেস উর রহমান।
এরপর বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনে খোদ জনপ্রশাসন সচিব মোখলেস উর রহমানের বিরুদ্ধেই আর্থিক লেনদেন নিয়ে আলোচনার অভিযোগ তুলে ধরে কালবেলা।
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, একটি মেসেজে সচিব নিজেকে ‘নির্লোভ’ দাবি করে মাত্র ৫ কোটির একটি আবদার করেন। জিয়া (যুগ্ম সচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ) তাকে সুখবর দিয়ে বলেন ১০ কোটি রাখার কথা। এতে সন্তুষ্ট হয়ে সচিব তাকে বলেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, তোমার যেটা ভালো মনে হয়।’ তবে টাকা-পয়সার প্রতি নিজের তেমন লোভ নেই বলেও জিয়াকে জানান সচিব।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জনপ্রশাসন সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, যারা এটা করেছে তাদেরকে আমরা কতটুকু গুরুত্ব দেব? একটা রাস্তার লোক আমাকে অনেক কিছু বলতে পারে, আমি কি রাস্তার লোকের পেছনে দৌঁড়াব?
আমরা সরকারের পজিশনে থেকে জনগণের স্বার্থে কাজ করি। যেভাবে আছি সেভাবেই কাজ করব। যতদিন আল্লাহ হায়াতে রেখেছে নিয়ম অনুযায়ী কাজ করব।
অভিযোগের বিষয়ে কোনো তদন্ত কমিটি হবে কিনা জানতে চাইলে জনপ্রশাসন সচিব মোখলেস উর রহমান বলেন, এই অভিযোগকারী আমার বিবেচনায় নেই এবং এই অভিযোগকে আমি মূল্যহীন মনে করি। ইটস এ ফেইক নিউজ।
বাংলাদেশ জার্নাল/এসবিটি