ঢাকা, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

গুলিতে পা হারানো হাসানের চিকিৎসা হচ্ছে না টাকার অভাবে

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:০৩

গুলিতে পা হারানো হাসানের চিকিৎসা হচ্ছে না টাকার অভাবে
গুলিতে পা হারানো হাসান।

টাকার অভাবে গুলিতে পা হারানো হাসানের চিকিৎসা হচ্ছে না। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বাসরা গ্রামের মো. হাসান ছিলেন ট্রাকচালকের সহকারী। তিনি চট্টগ্রাম থেকে পণ্য নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে রাজধানীর চিটাগাং রোডে পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে আহত হন। চিকিৎসায় তার ডান পা কেটে ফেলতে হয়। কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরলেও অর্থাভাবে তিনি পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা পাচ্ছেন না।

হাসান দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের বাসিন্দা। গত ২০ জুলাই ঢাকায় যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হন। এলাকাবাসীর সহায়তায় কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার চিকিৎসা হয়। কিন্তু টাকার অভাবে এখন ওষুধ কিনতে পারছেন না। কাজ না করতে পারায় তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

বাসরা গ্রামের বাড়িতে জরাজীর্ণ টিনের ঘরে হাসানের বসবাস। সেখানেই বসে সেদিনের বর্ণনা দেন তিনি।

তিনি জানান, ২০ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে ট্রাকে পণ্য নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। ট্রাকটি ঢাকার চিটাগাং রোডে থামিয়ে চালক তৌহিদ মিয়া ও তিনি দুপুরের খাবার খান। বিকেল চারটায় ঢাকার দিকে রওনা দেন। প্রথমে চালক ট্রাকে ওঠেন। পরে তিনি ওঠার সময় পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন। তাকে হাসপাতালে নিতে কোনো গাড়ি পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে ছাত্র-জনতার সহায়তায় ট্রাকের চালক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও হাসপাতালে ভর্তি নেয়নি। পরে তার স্বজনরা অ্যাম্বুলেন্সে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

হাসান আরও বলেন, দেবীদ্বারে তিন দিন চিকিৎসার পর অবস্থার অবনতি ঘটলে চিকিৎসকেরা তাকে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠান। কিন্তু তারা ভর্তি না নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেয়। সেখানেও ভর্তি না নিলে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনেরা। সেখানকার চিকিৎসকেরা তার ডান পা হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলেন। এরপর কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর তিনি বাড়িতে ফেরেন।

প্রথমে গ্রামবাসী হাসানের চিকিৎসায় আর্থিকভাবে সহযোগিতা করলেও পরবর্তী সময়ের চিকিৎসার জন্য কেউ তাকে তেমন সহায়তা করেননি। এখন তিন সদস্যের পরিবার নিয়ে খেয়ে না–খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

হাসানের স্ত্রী ফারজানা আক্তার বলেন, টাকার অভাবে হাসানের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা করাতে পারছেন না। প্রচণ্ড ব্যথার যন্ত্রণায় এখনো বিছানায় কাতরাচ্ছেন। রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খেয়ে না–খেয়ে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। নিজেরা খেয়ে না–খেয়ে দিন কাটাতে পারেন, কিন্তু তিন বছরের শিশুসন্তান তো না খেয়ে থাকতে পারে না। সরকারি-বেসরকারি কোনো সহায়তাও পাচ্ছেন না।

বাসরা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন বলেন, হাসানের মা-বাবা নেই। তারা তিন ভাই। সবাই গরিব। মাত্র দুই শতক জায়গায় তিন ভাইয়ের বসবাস। ভাইদেরও হাসানকে সহযোগিতা করার সামর্থ্য নেই। একমাত্র সরকারি সহযোগিতাই হাসানের শেষ ভরসা হবে।

বাসরা গ্রামের বাসিন্দা পিকআপচালক মাহবুব আলম বলেন, হাসান একজন ভালো মানুষ। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য আমরা গ্রামবাসী সহযোগিতা করেছি। পরবর্তী চিকিৎসা বা হাসানের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য কোনো সহযোগিতা কেউ করছে না। টাকার অভাবে হাসানের চিকিৎসাও অব্যাহত রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাকে সরকারিভাবে চিকিৎসার সহযোগিতার পাশাপাশি একটি দোকানের ব্যবস্থা বা একটি অটোরিকশা কিনে দিলে ভবিষ্যতে দুই মুঠো ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা হতো।

দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাঈমা ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমাদের লিখিতভাবে জানালে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। সহযোগিতা এলে দ্রুত পৌঁছে দেব।

সূত্র: প্রথম আলো।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত