ঢাকা, রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ আপডেট : ২১ মিনিট আগে
শিরোনাম

১০ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে আলাদা জীবনে রিফা ও শিফা

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:৪৬

১০ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে আলাদা জীবনে রিফা ও শিফা
রিফা ও শিফা। সংগৃহীত ছবি

টানা ১০ ঘণ্টার সফল অস্ত্রোপচারে আলাদা হয় জোড়া শিশু রিফা-শিফা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক ) হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের নেতৃত্বে এই অস্ত্রোপচারে অংশ নেন বিভিন্ন হাসপাতালের ৮২ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

বর্তমানে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশু দুটি সুস্থ আছে। রিফা সুস্থ হয়ে উঠেছে। শিফার রক্তের সংক্রমণ থাকায় সেই অনুযায়ী তার চিকিৎসা চলছে। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ঢামেক হাসপাতালের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এই জোড়া লাগানো শিশু দুটির অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়।

পেটে থাকা অবস্থায় জোড়া লাগানো এই দুই শিশুর জন্মের পর থেকে অবর্ণনীয় সংগ্রাম করে যাচ্ছেন মা মাহমুদা আক্তার। জন্মের পরও সোয়া এক বছরের শিশু দুটি জোড়া লাগানো ছিল। অবশেষে চিকিৎসকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গত ৭ সেপ্টেম্বর ঢামেক হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত আলাদা হয় যমজ শিশু শিফা-রিফা।

অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসার শুরু থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন ঢামেক হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাহনুর ইসলাম। তিনি জানান, গত ১৪ জুন বরগুনার বেতাগী এলাকার বাসিন্দা মাহমুদা বুক পেট জোড়া লাগানো শিশু দুটিকে নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ২১ জুন হাসপাতালে শিশু সার্জারি বিভাগের ৫ নম্বর ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একমাস পর আসতে বলা হয়। একমাস পর এলে আবার ভর্তি করা হয় এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার শেষ করে পুষ্টিজনিত সমস্যা সমাধান দিয়ে আরো একমাস পর পুনরায় দেখা করতে বলা হয়। এভাবে টানা ছয়মাস চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণের পর অস্ত্রোপচারের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়।

অধ্যাপক ডা. সাহনুর ইসলাম জানান, অবশেষে গত ৭ সেপ্টেম্বর টানা ১০ ঘণ্টা সফল অস্ত্রপচারের মাধ্যমে জোড়া লাগানো শিশু দুটিকে আলাদা করা হয়। পরে তাদের আইসিইউতে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ভেন্টিলেটর যন্ত্র দিয়ে রাখা হয়। পরে ৮ সেপ্টেম্বর প্রথমে রিফাকে ও পরদিন শিফাকে ভেন্টিলেটর মুক্ত করা হয়।

অস্ত্রোপচার দলের প্রধান এই চিকিৎসক জানান, এর মধ্যে রিফা সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলেও শিফা অসুস্থ ছিল। তার হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। তাকে হার্ট ফাউন্ডেশনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে শিফার পিত্তনালীর সংযোগ খুলে যাওয়ায় আবার অস্ত্রোপচার করা হয়। শিফা বর্তমানে আইসিইউতে আছে।

এই চিকিৎসক আরো জানান, তাদের চিকিৎসার খরচ বহন করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সমাজ সেবা দপ্তর, আকিজ গ্রুপ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বারডেম, ট্রান্সফিউশান মেডিসিন, ল্যাবরেটরি মেডিসিন এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক ও তার বাবা মা।

অধ্যাপক ডা. সাহনুর ইসলাম বলেন, অর্থায়ন, জন্মগত ত্রুটিগুলো সনাক্তকরণ, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অপারেশনের জন্য অনেক কঠিন ছিল পুরো পরিস্থিতি। এসব ক্ষেত্রে কখনও কখনও এমন অবস্থায় পড়তে হয় দুজনের কাউকে রক্ষা করা যায় না। কখনও একজনকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। কিন্তু সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা সফল হয়েছি।

এই চিকিৎসক জানান, শিফার ছিল জন্মগত হৃদরোগ-হৃৎপিন্ডের পর্দা শেয়ারিং, যকৃত শেয়ারিং সাধারণ যকৃত নালী, পোর্টাল শিরা, ডিওডেনাম, ম্যালরোটেশান। আর রিফার ছিল হৃৎপিন্ডের পর্দা, কমন যকৃত, পোর্টাল শিরা, ডিওডেনাম শেয়ারিং- এসব সমস্যা। এমন অবস্থায় অস্ত্রোপচার পরবর্তী ফলাফল ভালো ছিল। ওরা ভালো থাকুক সকলের প্রচেষ্টায়।

সংবাদ সম্মেলনে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার ডা. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। ১৫ জুলাই থেকে যুদ্ধের মধ্যে ছিলাম। এর মধ্যে ডা. সাহনুর এই শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় দৌড়িয়েছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লম্বা সময় নিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এমন একটি সফল অস্ত্রোপচারের জন্য ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকদের ধন্যবাদ।

এ সময় শিশুদের বাবা বাদশা মিয়া বলেন, হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে চিকিৎসকসহ সকলের সহযোগিতা পেয়েছি। সবার কাছ থেকে আর্থিকভাবে সাহায্য পেয়েছি। হাসপাতালের পরিচালক স্যারসহ সব ম্যাডাম-স্যারদের কাছে কৃতজ্ঞ।

প্রসঙ্গত, বাদশা ও মাহমুদা দম্পতির বাড়ি বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলায়। গত বছরের ৭ জুন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জোড়া বাচ্চার জন্ম দেন মাহমুদা। তাদের ঘরে ছয় বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। বাদশা মিয়া ঢাকার মিরপুরে একটি তৈরি পোষাক কারখানায় কাজ করেন। তিনি ঢাকায় থাকেন। স্ত্রী-সন্তান থাকেন বরগুনায়।

বাংলাদেশ জার্নাল/এফএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত