ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ আপডেট : ৪ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

তোফাজ্জলকে হত্যার আগে ভাবির কাছে চাওয়া হয়েছিল ২ লাখ টাকা

  বরগুনা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১:২১

তোফাজ্জলকে হত্যার আগে ভাবির কাছে চাওয়া হয়েছিল ২ লাখ টাকা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে খাবার খাচ্ছেন মাসুদ কামাল তোফাজ্জল। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে ‘চোর সন্দেহে’ বরগুনার পাথরঘাটার মাসুদ কামাল তোফাজ্জলকে (৩০) পিটিয়ে হত্যার আগে তার ভাবির কাছে ২ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) তোফাজ্জলের ভাবি শরিফা আক্তার এ দাবি করেন। তিনি বলেন, গতকাল (বুধবার) রাতে আমার ফোনে দুটি নম্বর থেকে কল দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয় দিয়ে বলেন, তোফাজ্জল মোবাইল চুরি করেছে, ওকে আটকে রাখা হয়েছে। ছাড়িয়ে নিতে দুই লাখ টাকা পাঠাতে হবে। পরে আমি ওর আত্মীয়-স্বজনকে জানাই। সকালে জানতে পারি ওকে হত্যা করা হয়েছে।

শরিফা আরও বলেন, মাসুদ কামাল তোফাজ্জল বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের তালুকের চরদুয়ানী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০২০ সাল থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন, কিন্তু চোর নয়। পরিবারের কেউ না থাকায় ওর চিকিৎসা করানো যায়নি। একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সব সময় এলাকাতেই থাকতেন।

তোফাজ্জলের প্রতিবেশী লিটন তালুকদার বলেন, তোফাজ্জল একজন মেধাবী ছাত্র, কয়েক বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় রয়েছেন। পরিবারের কেউ না থাকায় ওর চিকিৎসা করানো হয়নি। মানুষের কাছে হাত পেতে খেতেন। এলাকায় চুরি বা অন্য কোনো খারাপ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। ওর হত্যার খবর শুনে আমরা শোকাহত। এ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি জানাই।

প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে ‘চোর সন্দেহে’ পিটুনিতে মারা যান তোফাজ্জল হোসেন। গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে হলে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় আজ শাহবাগ থানায় মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শাহবাগ থানায় অভিযোগটি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ। এরই মধ্যে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, তোফাজ্জল পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেন। ছাত্রজীবনে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ২০১১ সালে তোফাজ্জলের বাবা আবদুর রহমান সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান, ২০১৩ সালে মা বিউটি বেগম লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। একমাত্র বড় ভাই নাসির পুলিশে চাকরি করতেন। ২০২৩ সালে লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তিনিও মারা যান। পরিবারে রয়েছেন একমাত্র বড় ভাইয়ের স্ত্রী ও তার দুই সন্তান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তোফাজ্জল তার এলাকার একটি মেয়েকে পছন্দ করতেন। মেয়ের পরিবার ওই মেয়েকে অনত্র বিয়ে দেওয়ার পর তোফাজ্জল ২০২০ সালে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। পরিবারের কেউ না থাকায় পরিবার ও অভিভাবকহীন হয়ে রাস্তায়-রাস্তায় ঘুরতেন তিনি। ক্ষুধার প্রয়োজনে মানুষের কাছ থেকে চেয়ে খেতেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/কেএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত