ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

তেল সরবরাহে ভ্যাট অব্যাহতি চায় এস আলম গ্রুপ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৪, ১০:৫১  
আপডেট :
 ২২ আগস্ট ২০২৪, ১১:০৩

তেল সরবরাহে ভ্যাট অব্যাহতি চায় এস আলম গ্রুপ

নানান বিষয় নিয়ে আলোচনায় থাকা ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এস আলম এবার সরকারকে সরবরাহ করা সয়াবিন তেলে ভ্যাট অব্যাহিত চেয়েছে; যাদের বিরুদ্ধে এর আগে ভ্যাঁট ফাকির একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত পণ্য বিপণনকারী কোম্পানি ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) সরবরাহ করা ৫০০ টন সয়াবিন তেলের ওপর ভ্যাট মওকুফ চেয়েছে চট্টগ্রামের এ শিল্প গ্রুপের কোম্পানি এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড।

এদিকে আলোচিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলমের ১৮টি কোম্পানির আগের ’ভ্যাট ফাঁকি’ তদন্তে মঙ্গলবার ২০ সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। এক মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ভ্যাট ফাঁকির আগের অভিযোগের মধ্যেই এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড সরকারকে সরবরাহ করা ৫০০ টন সয়াবিন তেলে ভ্যাট অব্যাহতি চেয়ে গত ১৭ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আবেদন করে।

ভ্যাট অব্যাহতি পাওয়ার জন্য নির্ধারিত সময়ের দুই দিন পরে তাদের আবেদন জমা পড়ে, যেটির একটি অনুলিপি দেওয়া হয় টিসিবিকে।

এনবিআর থেকে তেল কোম্পানিটির ভ্যাট অব্যাহতির সুরাহা না হওয়ায় এখন স্বল্পমূল্যে জনগণের মাঝে পণ্য বিক্রিয়কারী সরকারি কোম্পানি টিসিবি বিপাকে পড়েছে।

টিসিবির অতিরিক্ত পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মোঃ রবিউল মোর্শেদ বলেন, “আমরা ভ্যাট কেটে বাকি তেল সরবরাহের সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করেছি। এনবিআরকে এ বিষয়ে মতামত ও নির্দেশনা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। যদি ভ্যাট দিতে হয় আমরা দিয়ে দিব।”

এ বিষয়ে টিসিবির আরেক কর্মকর্তা বলেন, “অব্যাহতির সময়ের পরে এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের সরবরাহ করা সয়াবিন তেলের বিলের সাথে দাখিল করা মূসক চালানে সয়াবিন তেলের প্রযোজ্য মূসক উল্লেখ না থাকায় মূসক বাদে অবশিষ্ট বিল পরিশোধ করা হয়েছে।

“কিন্তু এখনও মূসক অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। পরে অব্যাহতি না দিলে নীরিক্ষায় টিসিবির সমস্যা হতে পারে বলে আমাদের পক্ষ থেকে এনবিআরে মতামত ও নির্দেশনা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।”

এ বিষয়ে ১৪ অগাস্ট টিসিবি থেকে এনবিআরের মতামত চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, “যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি (এস আলম ভেজিটেবল অয়েল) উৎপাদনকারী, মূসক চালান ইস্যু করেছে এবং মূসক কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত এপ্রিলের ১৭ তারিখের অসরবরাহকৃত পরিশোধিত সয়াবিন তেলের মজুদ বিবরণীসহ মূসক প্রদান হতে অব্যাহতি চেয়েছে, তাই টিসিবির হিসাবে সংরক্ষিত কর্তনকৃত মূসক এর বিষয়ে করনীয় নির্ধারণের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতামত বা নির্দেশনা প্রয়োজন।”

এনবিআর থেকে এসআরওর মাধ্যমে এপ্রিলের ১৫ তারিখ পর্যন্ত পরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পাম তেলের স্থানীয় উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি ছিল। কিন্তু কোম্পানিটি ঈদের ছুটি ও প্যাকিং (বোতলিং) সক্ষমতা কম থাকায় প্রায় ১,৫০০ টনের মধ্যে ৫০০ টন তেল অব্যাহতির সময়ের পরে সরবরাহ করে।

বর্তমানে সয়াবিন তেলের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং বাণিজ্যিক পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়।

এ বিষয়ে জানতে এস আলম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত কুমার ভৌমিককে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

এনবিআরের একজন ভ্যাট কর্মকর্তা বলেন, এ কোম্পানির বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ রয়েছে। অব্যাহতির সিদ্ধান্ত কী হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তাদের নিয়ে ভ্যাট ফাঁকির তদন্তও চলছে।

এর আগে এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের বিরুদ্ধে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে পরের তিন বছর পণ্য বিক্রির তথ্য গোপন করে ১ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পায় চট্টগ্রামের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট।

এছাড়াও তখন এস আলম সুপার এডিবল অয়েলের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পায় ভ্যাটের এ কমিশনারেট, যা নিয়ে এখন আদালতে মামলা চলছে।

ভ্যাট ফাঁকি তদন্তে শুরু

চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কমিশনার সৈয়দ মুসফিকুর রহমান বলেন, “এস আলমের দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাই জুনে। এবার প্রাথমিকভাবে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের আরও ১৫০ কোটি টাকার ফাঁকি পেয়েছি।

“ভ্যাট ফাঁকির পরিমান আসলে কত দাঁড়ায় তা নিরূপণ করতে আমরা ২০ সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করেছি। এক মাসের মধ্যে তারা প্রতিবেদন জমা দেবে।”

এস আলম গ্রুপের ১৮টি কোম্পানির মোট ২০টি ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন থাকার তথ্য দিয়ে এই ভ্যাট কমিশনার বলেন, “আগে আমরা ব্যাংক থেকে তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সহায়তা পায়নি। এখন পরিবর্তিত সময়ে আশা করি, সব তথ্য পাবো এবং দ্রুতই ব্যবস্থা নিতে পারব।”

এস আলম শিল্পগোষ্ঠীর যেসব কোম্পানির বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির তদন্ত হচ্ছে সেগুলো হল- এস আলম স্টিল লিমিটেড (ইউনিট-১), এস আলম স্টিল লি. (ইউনিট-২), এস আলম স্টিল লি. (ইউনিট-৩), চেমন ইস্পাত লিমিটেড, নিউ এস আলম শুজ অ্যান্ড বার্মিজ, এস আলম রিফাইন্ড সুগার, এসএস পাওয়ার লিমিটেড, অটোবোর্টস অটোমোবাইলস, প্লাটিনাম স্পিনিং মিলস লিমিটেড, এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড, এস আলম প্রপার্টিজ লিমিটেড, এস আলম কোল্ড রি-রোলিং মিলস, সাইনিং এসসেন্ট লিমিটেড, গ্র্যান্ড স্পিনিং মিলস লিমিটেড, মাসুদ প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, ইনফিনিটি সি আর স্ট্রিপ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এস আলম ব্যাগ ম্যানুফ্যাকচারিং মিলস লিমিটেড ও ওশান রিসোর্ট লিমিটেড।

তদন্ত দলকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত আয়-ব্যয়সহ সব ব্যবসায়িক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পাশাপাশি নিরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আগের ফাঁকির কী হবে?

জুন মাসে কমিশনারেট থেকে দেওয়া রায়ে দেখা যায় এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড এবং এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ওপর ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।

২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে পরের তিন বছর ভ্যাট রিটার্নে কম বিক্রি দেখিয়ে ও ভোজ্যতেল উৎপাদনের উপকরণ কেনায়ও ভ্যাট ফাঁকির মাধ্যমে ১ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দেয় এস আলম ভেজিটেবল অয়েল।

একইভাবে ১ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দেয় এস আলম সুপার এডিবল অয়েল।

কমিশনারেটের রায়ে অসন্তোষ থেকে আদালতের দ্বারস্থ হয় চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠান দুটি। তবে নিয়ম হচ্ছে, কোনো কোম্পানি কমিশনারেটের রায়ে অসন্তোষ হলে প্রতিষ্ঠানটিকে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালে কমিশনারেটের চাহিদার ২০ শতাংশ পরিশোধ করে আপিল করতে হয়।

এ রায় বিপক্ষে গেলে পরে উচ্চ আদালতেও যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

তবে এস আলমের এ দুই কোম্পানি এ পথে হাঁটেনি। ফলে আদালত থেকে ‘স্টে অর্ডার’ আনা ছাড়া ভ্যাট ফাঁকি থেকে মওকুফের সুযোগ নেই বলে তুলে ধরেন মুসফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, “আশাকরি, আদালত এখন তাদের ফেভারে থাকবে না। ফলে আমরা ভ্যাট আদায় করতে পারব।”

এনবিআরের সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) মইনুল খানও একই কথা বলেন।

তিনি বলেন, “স্বাভাবিক যে প্রক্রিয়া, সেভাবে আদালতে যায়নি প্রতিষ্ঠান দু’টি। আশাকরি, আদালত থেকেও আমাদের পক্ষে রায় আসবে এবং আমরা ফাঁকি থেকে ভাল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে পারব।”

এস আলমের ব্যাংক হিসাব তলব

সরকার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এস আলমের শিল্পগোষ্ঠীর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে এনবিআর।

বৃহস্পতিবার সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি দিয়ে তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে।

এনবিআরের আয়কর বিভাগের কর অঞ্চল-১৫ এর কমিশনার আহসান হাবিবের স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি সব ব্যাংকে পাঠানো হয়।

এ ছাড়া তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ক্রেডিট কার্ডের তথ্যও চাওয়া হয়েছে কর অঞ্চল থেকে।

চিঠিতে এস আলমের (সাইফুল আলম) স্ত্রী ফারজানা পারভীন, মা চেমন আরা বেগম এবং ভাই আবদুল্লাহ হাসানের ব্যাংক হিসাবের তথ্য দিতে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে তাদের পিতা-মাতা, স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে বা বোনের যৌথ নামে অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা সব ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাঠাতে হবে।

দেশের ৯১টি ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সব শাখা থেকে তাদের হিসাব পাঠাতে বলা হয়েছে।

সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বাংলাদেশ জার্নাল/এসবিটি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত