ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

দুই সপ্তাহ ধরে নিম্ন আদালত থেকে ফিরে যাচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা

  প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৪, ১০:২১

দুই সপ্তাহ ধরে নিম্ন আদালত থেকে ফিরে যাচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা
দুই সপ্তাহ ধরে নিম্ন আদালত থেকে ফিরে যাচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা । ছবি: সংগৃহীত

সরকার পতনের দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় পরও স্বাভাবিক চিত্র ফেরেনি ঢাকার নিম্ন আদালতগুলোতে; রাষ্ট্রপক্ষের ‘৭০ শতাংশ’ আইনজীবী শুনানিতে আসছেন না, ফলে থমকে আছে বিভিন্ন মামলার বিচার কার্যক্রম।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী না আসায় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা হাজিরা দিয়ে কিংবা সময় আবেদন জানিয়ে এজলাস থেকে চলে যাচ্ছেন। পিছিয়ে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি। আদালতে এসে ফিরে যাচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুয়েকজন আইনজীবী মঙ্গলবার থেকে আদালতে আসতে শুরু করায় দুর্নীতির কিছু কিছু মামলায় শুনানি হচ্ছে। দুদকের পক্ষের প্রসিকিউশনের কোনো কোনো আইনজীবীকে আদালতপাড়ায় দেখা যাচ্ছে।

কিন্তু বেশির ভাগ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্কের শুনানি হচ্ছে না। বিচার চলছে না আলোচিত হত্যা, অস্ত্র, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলার।

চলমান পরিস্থিতিতে দুয়েকটি মামলার বিচারপূর্ব জামিন শুনানি চলছে, যেগুলোতে রাষ্ট্র বা প্রসিকিউশন পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা।

২০০৭ সালে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে উচ্চ আদালতের রায়ের (মাসদার হোসেন রায়) পর পুলিশ কোর্ট সাব ইন্সপেক্টররা (সিএসআই) দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। আবার তাদের হাকিম আদালতের বিচারে রাষ্ট্রপক্ষে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে।

ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের পেশকার সাইফুল ইসলাম মিঠু বুধবার বলেন, “আদালতে ৭০ ভাগ পিপি অনুপস্থিতি থাকলেও আমাদের আদালতে দুদকের পিপি ইস্কান্দার কিং গতকাল আর আজ হাজির ছিলেন। এ দুই দিনে দুর্নীতির মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। বুধবার গণপূর্তের প্লট নিয়ে জালিয়াতির এক মামলার সাক্ষ্য হয়েছে। কয়েক দিনে বেশ কয়েকটি মাদক মামলার সাক্ষ্য হয়েছে। আমরা দায়রা পিপি না থাকলেও সাক্ষ্য নিয়েছি।

সাভারের রেডিও কলোনির জালেশ্বরের এক সনাতন ধর্মাবলম্বী বলেন, “গত ১১ অগাস্টে শিশু আদালতে আমাদের একটি মামলা ছিল। ঢাকার ৯ নম্বর শিশু আদালতে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের কথা থাকলেও পিপি না আসায় আমরা সাক্ষ্য দিতে পারিনি।

বাদীর আইনজীবী মাহবুব হাসান রানা বলেন, “পিপিদের অনুপস্থিতিতে বড় মামলার বিচার তো হচ্ছেই না, এমনকি ছোট মামলারও বিচার হচ্ছে না। আদালতপাড়ায় এ বিশৃঙ্খলা কতদিন থাকবে জানি না।”

ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শাহ আলম তালুদারকে মঙ্গলবার আদালতে দেখা গেলেও কোনো মামলার রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করছেন না বলে জানান তিনি। তার ভাষ্য, “দেখতে এসেছি আদালত কীরকম চলছে। আমাদের কাছে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা এখনও আসেনি।”

সরকার পতনের পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমরা যারা পেশায় সৎ ছিলাম, তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। যারা অসৎ ছিলেন তাদের কথা ভিন্ন।”

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের অনুপস্থিতির বিষয়ে বিএনপি সমর্থক আইনজীবী কালাম খান বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষের সকল আইনজীবী আওয়ামী লীগ আমলের। নতুন পিপি কবে নিয়োগ দেওয়া হবে তা বুঝতে পারছি না। এটা তাড়াতাড়ি না হলে মামলার জট বাড়বে।”

বুধবার আদালতে দেখা যায় সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইবুনালের পিপি গোলাম সারোয়ার জাকিরকে। তিনি বলেন, “আমি আদালতে এলেও এজলাসে পিপির আসনে বসছি না। খবর পেয়েছি যে হাজিরা ও জামিন শুনানি চলছে, কিন্তু সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্কের শুনানি হচ্ছে না।”

দুদকের আইনজীবী আহমেদ আলী সালাম, মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীরকে আদালতপাড়ায় সোমবার দেখা গেলেও দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলকে দেখা যায়নি। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পিপি আবদুল্লাহ আবু, অতিরিক্ত পিপি তাপস কুমার পালকেও এদিন দেখা যায়নি।

ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রধান পিপি শেখ হেমায়েত হোসেন, অতিরিক্ত পিপি বিমল সমাদ্দারকে দেখা যায়নি এজলাসে কিংবা আদালতপাড়ায়। অপরদিকে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি আবু আবদুল্লাহ ভূঞাসহ আরও কয়েকজন বিশেষ কৌঁসুলিকে নিয়মিত আদালতে দেখা গেছে। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকেও আদালতে দেখা গেছে।

ঢাকার সাইবার ট্রাইবুনালের রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি নজরুল ইসলাম শামীমকে গত ৫ অগাস্টের পর থেকে আদালতে দেখা যাচ্ছে না।

শুনানি হচ্ছে না গুরুত্বপূর্ণ মামলার

ঢাকার এক নম্বর বিশেষ জজ আদালতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ছিল সোমবার। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষে দুদকের কোনো পিপি না থাকায় শুনানি করতে না পেরে এজলাস থেকে ফিরে যান আসামিপক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বোরহান উদ্দিন।

প্রায় ৩০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আজিমউদ্দিন ও চার সদস্যসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ৫ মে মামলা করেছিল দুদক।

রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদের বিরুদ্ধে ভুয়া কোভিড রিপোর্ট সরবরাহ ও জালিয়াতির মাধ্যমে ১১ কোটি ২ লাখ ২৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছিল সিআইডি। পরে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে উত্তরা পশ্চিম থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। আলোচিত এ মামলায় মঙ্গলবার শুনানির কথা থাকলেও তা হয়নি।

এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হাসান জাহাঙ্গীর বলেন, “আমি সেসময় আদালতে ছিলাম। কিন্তু নরমাল হাজিরা হয়েছে। শুনানি হচ্ছে না।”

ফৌজদারি মামলার আইনজীবী আমিনুল গণী টিটো বলেন, “আমার কোনো মামলাতেই বড় কোনো শুনানি করতে পারছি না। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর অনুপস্থিতি, নানা রকমের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে শুনানি পিছিয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনে নতুন পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হোক। তা ছাড়া মামলা জট বাড়বে।”

বর্তমান পরিস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ কোনো মামলার শুনানি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবী শাহীনুর ইসলাম অনি। তিনি বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ কোনো শুনানি করতে পারছি না। কারণ, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নেই। হয়ত সামনের সপ্তাহে বা পরের সপ্তাহে বিষয়টি ঠিক হয়ে যাবে।”

সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত